হত্যা, গুম
যে কোন হত্যাকাণ্ড কোন সুস্থ মানুষেরই কাম্য হতে পারে না। এটি বিকৃত এবং সহিংস মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। নিখোঁজ, গুম এসবও ওই সহিংস কর্মকাণ্ডেরই রকমভেদ মাত্র।
এগুলোর ফলাফল এক ও অভিন্ন তরতাজা কিছু জীবনের পরিসমাপ্তি; বেদনাহত আপনজনদের বুকফাটা আহাজারি আর সংসারের অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা কারও পক্ষে সম্ভব হয় না। এর পাশাপাশি এসব নিষ্ঠুর কাজ সমাজের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে; বাড়ায় নানামাত্রিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা। এসব হত্যাকা- এবং গুম-নিখোঁজের ঘটনার মধ্যে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট হলে আলোচনা-সমালোচনা ও হৈ চৈ হয় সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সময়ে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, এসব ব্যক্তি হত্যা বা গুমের শিকার হলে অনতিবিলম্বে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মন্তব্য করা হয় যে, এটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ঘটিয়েছে। এটি সত্য, কোন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত ভালমন্দ সবকিছুর দায় নীতিগতভাবে সরকারের ওপর বর্তায়। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সব হত্যাকা- আর গুমের ঘটনা সরকার ঘটিয়েছে বা ঘটাচ্ছে এমন মন্তব্য করা সঠিক বলে মনে হয় না। এতে গুরুতর এক নেতিবাচক আশঙ্কার ক্ষেত্র সৃষ্টির অবকাশ থেকে যায়। কারণ, এই দাবি ও সমালোচনার ধূম্রজালের সুযোগে সুযোগসন্ধানী মতলববাজ অন্য কোনো ব্যক্তি বা পক্ষ স্বার্থ হাসিলের সুযোগ নিতে পারে। এ কারণে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সে সম্পর্কে পক্ষপাতমূলক বক্তব্য না দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করাই সমীচীন। আর সরকারেরও উচিত, সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘœকারী যে কোনো ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা।রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের হত্যা ও গুমের ঘটনার পেছনের খবরও পত্রিকায় মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়। এসব রিপোর্ট নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘটনার পেছনেই রয়েছে অর্থ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব, প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা, দলীয় ও গোষ্ঠীগত অন্তর্কোন্দল প্রভৃতি। কিন্তু সেসব দিক বিবেচনায় না নিয়ে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই একতরফা মন্তব্য করা হয়, যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের কোন উপকারে তো আসেই না; উল্টো অন্য মতলববাজ নেপথ্য শত্রুদের নাশকতার পথ খোলাসা করে দেয়।
ঢাকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতা রফিকুল সম্প্রতি খুন হয়েছেন। পুলিশের হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গেছে কুষ্টিয়ায়। এ ঘটনায় প্রধান বিরোধী দলের নেতারা তড়িঘড়ি মন্তব্য করলেন যে, এজন্য সরকারই দায়ী। তদন্তের আগে এভাবে ঢালাও মন্তব্য করলে আসল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হতে পারে। তবে সরকারকে এসব ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিরোধী দল যা-ই মন্তব্য করুক না কেন, রফিকুল হত্যাসহ দেশে সংঘটিত সব হত্যাকা- ও গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে দেশের স্বার্থে, সামাজিক শৃঙ্খলার স্বার্থে, সরকারের ভাবমূর্তির স্বার্থে সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বার্থে।
No comments