‘দুর্বলতা থাকলে সৌদি আরবে আশ্রয় নিতে পারতাম’
যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্ততর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে সাঈদী তার
বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন।
সরকার
পক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের পর সাঈদী তার লিখিত বক্তব্য পড়েন। এসময় উভয়
পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল বাধে। ট্রাইব্যুনালে দেয়া বক্তব্যে
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক বিচারে ভ্রষ্ট পথ
অনুসরণ করেছিলেন বিধায় একরাশ গ্লানি নিয়ে তাকে সরে পড়তে হয়েছে। আজ সেই
চেয়ারে আপনি (বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর) সম্মানিত চেয়ারম্যান। এটাই আল্লাহর
বিচার। আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শতাব্দীর জঘন্য ও
নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। আল্লাহ কসম! আমার বিরুদ্ধে রচনা করা চার সহস্রাধিক
পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ, প্রত্যেকটি বর্ণ
মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কোন এক
দেলোয়ার শিকদারের করা অপরাধ সমূহ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও
প্রসিকিউশন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার পাহাড় রচনা করেছেন। আজ আমি আল্লাহর নামে
শপথ নিয়ে আপনাদের সামনে বলতে চাই, সরকার ও তার রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক
চিত্রিত ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত,
হত্যাকারী, লুণ্ঠন, গণহত্যাকারী, ধর্ষক, অগ্নিসংযোগকারী, দেলোয়ার শিকদার বা
‘দেলু’ বা দেইল্যা রাজাকার আমি নই। আমি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রিয়
জন্মভূমি এই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নিকট চিরচেনা পবিত্র কোরআনের একজন
তাফসিরকারক, কোরআনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। দেশ
স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ৪২ বছরের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কোন বিষয়েই কোন
মামলা ছিলো না। সামান্য একটি জিডিও ছিলো না। গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের বদান্যতায়, মহানুভবতায় মাত্র কয়েকদিনের
ব্যবধানে আজ আমি ১৭টি মামলার আসামী। সেই জুন ২০১০ থেকে অদ্যাবধি কথিত
মানবতাবিরোধী ২০টি অপরাধের অভিযোগসহ ১৭টি মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করে
এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে সরকার আমাকে তাদের এক রাজনৈতিক তামাশার
পাত্রে পরিণত করেছে, যা আজ দেশবাসীর কাছে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরের
সূর্যের মতই স্পষ্ট। তদন্ত কর্মকর্তা এবং সহযোগিরা তাদের তৈরি অভিযোগগুলো
প্রমাণের জন্য কয়েকজন বিতর্কিত চরিত্র ব্যতীত সাক্ষী প্রদানের জন্য কাউকেই
হাজির করতে পারেননি। তারপরও প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এই ট্রাইব্যুনালের
প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টেনেছেন। এই ট্রাইব্যুনালের
সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৃত বিবেচনায় আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলার রায়
প্রকাশ করে গেছেন। স্কাইপ কথোপকথনে তার ভাষায়; “সাঈদীর কেইসটা ডিফারেন্ট।
এই সাঈদীর কেইসটার লগে আইনের সম্পর্ক খুব বেশি না। এডা আমাদের দেশী দরবারের
মতই।” সাঈদী বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানের প্রকাশিত এই মতামত
বা মন্তব্যের পর এই মামলা চলার নৈতিক অবস্থান কোথায় থাকে? তিনি বলেন, ১৯৭৯
সালে আমি সাধারন সমর্থক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি। এর পূর্বে
আমি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ছিলাম না। ১৯৯০ সনের শুরু অবধি আমার
রাজনৈতিক কোন পরিচয়ও ছিল না। সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাইরে আমার
রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতায় সময় ব্যয় একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য। সংকোচনহীন
ভাবে বলতে গেলে, রাজনীতির জটিল সমীকরণের বিষয়ে আমার অজ্ঞতা এবং সময়ের
অভাবহেতু প্রচলিত রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার অবস্থান একজন অ্যামেচার
রাজনীতিবিদের পর্যায়ে। তিনি বলেন, আমার তাফসির মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো
মানুষ অংশগ্রহন করে। এইসব মাহফিল থেকে অসংখ্য অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা
পেয়েছে, নামাজি হয়েছে। এটাই কি আমার অপরাধ? আমি সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের
চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত। এই ভালবাসাই কি অপরাধ? আমি আমার
সারা জীবন নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কোরআন ও হাদিসের
আলোকে বক্তব্য দিয়ে এসেছি। বর্তমান সরকারের আমলে আমি দু’টা খুনের মিথ্যা
মামলা মাথায় নিয়ে হজ্জ পালনে মক্কা শরীফ গিয়েছিলাম। হজ্জের দু’দিন পরে মীনা
কিং প্যালেসে বাদশাহ লাঞ্চের দাওয়াত দিলেন। বাদশাহর সঙ্গে করমর্দন হলো,
কুশল বিনিময় হলো, পাশাপাশি টেবিলে খাওয়া খেলাম। আমার মনে কোন দূর্বলতা
থাকলে আমার জন্য এটা খুবই সহজ ছিলো যে, বাদশাহকে বলে সৌদি আরবে রাজনৈতিক
আশ্রয় নেয়া। আমি আমার সকল বিষয় সেই মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি, যিনি
আমার কর্ম বিধায়ক এবং তাঁকেই আমি আমার একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছি।
সাহায্যকারী হিসেবে মহান আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন-ই আমার জন্য
যথেষ্ঠ।
No comments