অপর্যাপ্ত সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় বাড়ছে দুর্ঘটনা by গাফফার খান চৌধুরী
অপর্যাপ্ত সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্য করে অধিক যানবাহন চলাচল করায় রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যু হচ্ছে গড়ে অন্তত দু’জনের। আহত হচ্ছেন অন্তত পাঁচ জন। আহতদের মধ্যে অনেককেই চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের অনেক পরিবারকেই চিরতরে পথে বসতে হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিদিনই জানমালের ক্ষতি হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে বাসচাপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুতে অন্তত ৬০টি যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং রাজধানীর যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পুলিশের তরফ থেকে দেয়া দীর্ঘ, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদীসহ ৫০টি প্রস্তাবের নতুন করে পর্যালোচনা চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৬ হাজার। এর মধ্যে মোটরকারের সংখ্যা দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬, জীপ-ওয়াগন ও মাইক্রোবাস ৯৪ হাজার ২৫৮, ট্যাক্সি ১২ হাজার ৩০৭, বাস ৩৯ হাজার ১০৪, মিনিবাস ৩৬ হাজার ৮৮, ট্রাক ৮৭ হাজার ১৮২, অটোরিক্সা-অটো টেম্পো এক লাখ ৯১ হাজার ১৫৩, মোটরসাইকেল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭২, অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যা ৭১ হাজার ৭৪৬।
রাজধানী ঢাকায় রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫শ’ ৭টি মোটরযানের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬শ’ ২৯টিই প্রাইভেট কার। ৬ লাখ ৪৩ হাজার যানবাহনের মধ্যে মোটরকারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ১১২, জিপ-ওয়াগন ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৩০২, ট্যাক্সি ১০ হাজার ৬৮২, বাস ৯ হাজার ৯১১, মিনিবাস ৮ হাজার ৫১৫, ট্রাক ৩৬ হাজার ৯২২, অটোরিক্সা-অটো টেম্পো ১৯ হাজার ৯৫৮, মোটরসাইকেল ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৫টি। এছাড়াও অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যা ৪৯ হাজার ২৯৬টি। বিপুল এ যানবাহন চলাচলের জন্য রাজধানীতে প্রয়োজনীয় রাস্তা বা সড়ক নেই। নিয়মানুয়ায়ী কোন শহরের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা বা সড়ক থাকা দরকার। সে ঢাকার আয়তনের তুলনায় সড়ক বা রাস্তা রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ। এই ৮ ভাগ রাস্তার মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই সারাবছর ধরে ফুটপাথ হিসেবে দখলে থাকে। এতে স্বাভাবিক কারণেই স্বল্প রাস্তা দিয়ে চলতে হচ্ছে অধিক পরিমাণ যানবাহনকে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহন। কিন্তু বাড়ছে না রাস্তা। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অদক্ষ চালক।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। নানা উদ্যোগও নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিল গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলা, সিটবেল্ট বাঁধা, ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার করা। এসব আইন মানতে বাধ্য করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও তৎপর রয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের আর্থিক ও শারীরিক শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপারকারী পথচারীকে ২শ’ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আন্ডারপাস ও ওভারপাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এসব পথচারীরা তেমন আমলেই নেয় না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ট্রাফিক আইন অমান্য করায় গত ৩ বছরের ট্রাফিক বিভাগ অন্তত ৫ লাখ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা জরিমানা করে। এর মধ্যে কোন কোন যানবাহনকে বহুবার জরিমানা গুনতে হয়েছে। তারপরও যেমন যানজট কমছে না, তেমনি কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ রিক্সা। ঢাকায় অন্তত ৫ লাখ অবৈধ রিক্সা রয়েছে। এসব রিক্সা কোন নিয়মকানুন মানে না। ফলে নিত্যদিন যানজট বাড়ছে।
যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে অটো সিগন্যাল ও ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেটিংয়ের দায়িত্ব পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। রাজধানীর ৭০টি পয়েন্টে অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর কাজ চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট এড়াতে অনেক আগেই সরকারকে ৫০টি প্রস্তাব দেয় পুলিশ। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, পূর্বাচলের সঙ্গে ট্রাম সার্ভিস ও পাতাল রেল স্থাপন, প্রধান প্রধান সড়ক ও ফুটপাথ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী দোকানপাট উচ্ছেদ, যাত্রীছাউনি, বিলবোর্ড, বিভিন্ন ধরনের এ্যাপ্রোচ র্যাম্প, গাড়ি পার্কিংসহ সকল দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধ, সব রেলক্রসিং ও চৌরাস্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ, ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক, যথাসময়ে সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচী অফিস সময়সূচীর সঙ্গে ১ ঘণ্টা কম/বেশি করা, প্রাইভেট যানবাহনের ব্যবহার কমানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন চালু বাধ্যতামূলক, স্কুলের সামনে পার্কিং নিষিদ্ধ, সিএনজি স্টেশনে ৩ লাইনে সিএনজি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা, নিজস্ব জেনারেটর থাকা বাধ্যতামূলক, যানজট সৃষ্টি করে এমন সিএনজি স্টেশন ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া, বাস চলাচল করতে পারে এমন রাস্তায় সব ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া, সিটি বাসের যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ, সীমিত সড়কে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রিক্সা বন্ধ, বহুতলবিশিষ্ট অধিকসংখ্যক সিটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ, আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক টার্মিনাল শহরের বাইরে স্থানান্তর, নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সীমিত, পুরনো গাড়ি জব্দ, গাবতলী গরুর হাট ও যাত্রবাড়ী কাঁচা বাজার ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যান চলাচলের অনুমতি দেয়া, বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) কার্যকর, কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ, সোনারগাঁও রোডসহ সকল রোডে পরিকল্পিত বাস রুট পরিচালনা নিশ্চিতকরণ ও ঢাকা থেকে অবৈধ ৫ লাখ রিক্সা দ্রুত উচ্ছেদ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মধ্যমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ, ঢাকায় মেট্রোরেল, মনোরেল চালু, মেঘনা ব্রিজ, মাওয়া, মানিকগঞ্জ ও সাভার ও নরসিংদীর সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ স্থাপন, মিনিবাস তুলে দিয়ে বহু সিটের বাস চালু, চিকিৎসা সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমানো, বিভাগ ও জেলার দফতরের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও নগরের মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করাসহ ২০টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে আধুনিক নগরায়নের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি, সড়ক ও অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিদ্যুত, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস, টেলিফোন, নগরায়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও গাজীপুরে উন্নত নাগরিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করে ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমানো, পাশাপাশি এ কয়েকটি শহরকে মেট্রোপলিটন শহর হিসেবে গড়ে তোলা, গাজীপুর রেলস্টেশনকে যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা ও গুলিস্তানে টোকিও, লন্ডন ও নিউইয়র্ক শহরের আদলে একটি বেজমেন্ট পার্কিংসহ একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ ও বিজয় সরণিতে আন্ডারপাস এবং মগবাজার, মালিবাগ, বনানী, কুড়িলসহ ৬টি রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের নিজ উদ্যোগে এসব ওভারব্রিজ তৈরির কথা রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে আরও সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে ভিডিও মুভি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাবও রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। লেন ও ট্রাফিক আইন মেনে যানবাহন চলাচল করলে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে দাবি করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৬ হাজার। এর মধ্যে মোটরকারের সংখ্যা দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬, জীপ-ওয়াগন ও মাইক্রোবাস ৯৪ হাজার ২৫৮, ট্যাক্সি ১২ হাজার ৩০৭, বাস ৩৯ হাজার ১০৪, মিনিবাস ৩৬ হাজার ৮৮, ট্রাক ৮৭ হাজার ১৮২, অটোরিক্সা-অটো টেম্পো এক লাখ ৯১ হাজার ১৫৩, মোটরসাইকেল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭২, অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যা ৭১ হাজার ৭৪৬।
রাজধানী ঢাকায় রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫শ’ ৭টি মোটরযানের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬শ’ ২৯টিই প্রাইভেট কার। ৬ লাখ ৪৩ হাজার যানবাহনের মধ্যে মোটরকারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ১১২, জিপ-ওয়াগন ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৩০২, ট্যাক্সি ১০ হাজার ৬৮২, বাস ৯ হাজার ৯১১, মিনিবাস ৮ হাজার ৫১৫, ট্রাক ৩৬ হাজার ৯২২, অটোরিক্সা-অটো টেম্পো ১৯ হাজার ৯৫৮, মোটরসাইকেল ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৫টি। এছাড়াও অন্যান্য পরিবহনের সংখ্যা ৪৯ হাজার ২৯৬টি। বিপুল এ যানবাহন চলাচলের জন্য রাজধানীতে প্রয়োজনীয় রাস্তা বা সড়ক নেই। নিয়মানুয়ায়ী কোন শহরের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা বা সড়ক থাকা দরকার। সে ঢাকার আয়তনের তুলনায় সড়ক বা রাস্তা রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ। এই ৮ ভাগ রাস্তার মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগই সারাবছর ধরে ফুটপাথ হিসেবে দখলে থাকে। এতে স্বাভাবিক কারণেই স্বল্প রাস্তা দিয়ে চলতে হচ্ছে অধিক পরিমাণ যানবাহনকে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহন। কিন্তু বাড়ছে না রাস্তা। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অদক্ষ চালক।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। নানা উদ্যোগও নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিল গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলা, সিটবেল্ট বাঁধা, ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহার করা। এসব আইন মানতে বাধ্য করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও তৎপর রয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের আর্থিক ও শারীরিক শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপারকারী পথচারীকে ২শ’ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আন্ডারপাস ও ওভারপাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এসব পথচারীরা তেমন আমলেই নেয় না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ট্রাফিক আইন অমান্য করায় গত ৩ বছরের ট্রাফিক বিভাগ অন্তত ৫ লাখ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা জরিমানা করে। এর মধ্যে কোন কোন যানবাহনকে বহুবার জরিমানা গুনতে হয়েছে। তারপরও যেমন যানজট কমছে না, তেমনি কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা। রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ রিক্সা। ঢাকায় অন্তত ৫ লাখ অবৈধ রিক্সা রয়েছে। এসব রিক্সা কোন নিয়মকানুন মানে না। ফলে নিত্যদিন যানজট বাড়ছে।
যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে অটো সিগন্যাল ও ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার ১২টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেটিংয়ের দায়িত্ব পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। রাজধানীর ৭০টি পয়েন্টে অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর কাজ চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট এড়াতে অনেক আগেই সরকারকে ৫০টি প্রস্তাব দেয় পুলিশ। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, পূর্বাচলের সঙ্গে ট্রাম সার্ভিস ও পাতাল রেল স্থাপন, প্রধান প্রধান সড়ক ও ফুটপাথ ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী দোকানপাট উচ্ছেদ, যাত্রীছাউনি, বিলবোর্ড, বিভিন্ন ধরনের এ্যাপ্রোচ র্যাম্প, গাড়ি পার্কিংসহ সকল দখলকৃত জায়গা দখলমুক্ত করা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধ, সব রেলক্রসিং ও চৌরাস্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ, ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক, যথাসময়ে সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচী অফিস সময়সূচীর সঙ্গে ১ ঘণ্টা কম/বেশি করা, প্রাইভেট যানবাহনের ব্যবহার কমানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন চালু বাধ্যতামূলক, স্কুলের সামনে পার্কিং নিষিদ্ধ, সিএনজি স্টেশনে ৩ লাইনে সিএনজি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা, নিজস্ব জেনারেটর থাকা বাধ্যতামূলক, যানজট সৃষ্টি করে এমন সিএনজি স্টেশন ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া, বাস চলাচল করতে পারে এমন রাস্তায় সব ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া, সিটি বাসের যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ, সীমিত সড়কে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রিক্সা বন্ধ, বহুতলবিশিষ্ট অধিকসংখ্যক সিটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ, আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক টার্মিনাল শহরের বাইরে স্থানান্তর, নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সীমিত, পুরনো গাড়ি জব্দ, গাবতলী গরুর হাট ও যাত্রবাড়ী কাঁচা বাজার ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যান চলাচলের অনুমতি দেয়া, বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) কার্যকর, কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ, সোনারগাঁও রোডসহ সকল রোডে পরিকল্পিত বাস রুট পরিচালনা নিশ্চিতকরণ ও ঢাকা থেকে অবৈধ ৫ লাখ রিক্সা দ্রুত উচ্ছেদ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মধ্যমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ, ঢাকায় মেট্রোরেল, মনোরেল চালু, মেঘনা ব্রিজ, মাওয়া, মানিকগঞ্জ ও সাভার ও নরসিংদীর সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ স্থাপন, মিনিবাস তুলে দিয়ে বহু সিটের বাস চালু, চিকিৎসা সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমানো, বিভাগ ও জেলার দফতরের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও নগরের মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করাসহ ২০টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে আধুনিক নগরায়নের জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি, সড়ক ও অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিদ্যুত, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস, টেলিফোন, নগরায়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও গাজীপুরে উন্নত নাগরিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করে ঢাকার ওপর মানুষের চাপ কমানো, পাশাপাশি এ কয়েকটি শহরকে মেট্রোপলিটন শহর হিসেবে গড়ে তোলা, গাজীপুর রেলস্টেশনকে যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা ও গুলিস্তানে টোকিও, লন্ডন ও নিউইয়র্ক শহরের আদলে একটি বেজমেন্ট পার্কিংসহ একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও, মগবাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ ও বিজয় সরণিতে আন্ডারপাস এবং মগবাজার, মালিবাগ, বনানী, কুড়িলসহ ৬টি রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগের নিজ উদ্যোগে এসব ওভারব্রিজ তৈরির কথা রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে আরও সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে ভিডিও মুভি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাবও রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। লেন ও ট্রাফিক আইন মেনে যানবাহন চলাচল করলে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে দাবি করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
No comments