১৪তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠান-তারা ভরা রাতে by মাহফুজ রহমান

মহাপতঙ্গরূপী হেলিকপ্টারের পেট থেকে নামলেন চঞ্চল, অতঃপর তিশা। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো সাক্ষাৎজেমস বন্ড! বন্ড অথবা ডনরূপী দুই উপস্থাপকের জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেল ডিজিটাল পর্দা হাপিশ হওয়ার পরপরই; বিয়ারিংচালিত ঠেলাগাড়িতে চেপে মঞ্চে তাঁদের অবাক আবির্ভাব! বিস্ময়ে খাবি খেতে থাকলেন উপস্থাপকদ্বয়।


পরমুহূর্তেই নিজেদের সান্ত্বনা দিলেন তাঁরা—ঢাকার যা যানজট, তাতে করে আকাশপথই নিরাপদ! তবে আকাশপথ থেকে হুট করে বিয়ারিং-গাড়িতে কেন? এই প্রশ্নের মীমাংসা নেই তাঁদের কারও কাছে। চকিতেই ঢাউস পর্দায় হাজির হয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলেন ‘ডি-জি-টা-ল’ উপস্থাপক মোশাররফ করিম—হেলিকপ্টার ছিল চটকদার বিজ্ঞাপন আর বিয়ারিং-গাড়ি হলো নিদারুণ বাস্তবতা! তাই গোড়া থেকেই চঞ্চল-মোশাররফের খুনসুটি শুরু।
খুনসুটির সাময়িক মীমাংসা এনে দিল ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছরপূর্তিকে সামনে রেখে নৃত্যাঞ্চলের পরিবেশনা। শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপার নেতৃত্বে নৃত্যাঞ্চলের পাশাপাশি মঞ্চে এলেন জার্মানি, জাপান এবং ইন্দোনেশিয়ার শিল্পীরা। যে যাঁর ভাষায় গাইলেন—‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, সঙ্গে নৃত্য।
এর আগে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করলেন অনুষ্ঠান। স্বশরীরে হাজির থাকতে না পারলেও ধারণকৃত ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানালেন স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
চার দশকের বাংলা ছবির জনপ্রিয় চারটি গানের তালে তালে নাচতে এলেন শাহেদ, নিপুণ, নীরব, সারিকা, ইমন, শখ, শুভ ও মীম। ‘প্রেমী ও প্রেমী’ গানের তালে নাচতে নাচতে এমনই মজে গেলেন মীম-শুভ, পরিবেশনা শেষে মঞ্চ থেকে যে বিদায় নিতে হবে, বেমালুম ভুলে গেলেন তাঁরা। শেষে তাঁদের ‘কপট ঘোর’ কাটালেন সারিকা এসে!
ফের খুনসুটি। কাঁটাবন থেকে ভেজাল পুরস্কার এনে খুশিতে আটখান চঞ্চলের মুখের হাসি উধাও করে দিলেন মোশাররফ। প্রমাণ দিয়ে দিলেন ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে! তিশা এসে ফয়সালা দিলেন, ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আদি ও অকৃত্রিম। ওয়ান পিস মেড, কারিগর ডেড। আমাদের কোথাও কোনো শাখা নেই।’
ঢাউস পর্দায় আচমকা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের অবতারণা। একাধিক দেশের সাংসদদের হাতাহাতি আর গালিগালাজের অভূতপূর্ব নমুনা! ‘হোয়াই দিস মারামারি-চুলাচুলি’ (হোয়াই দিস কোলাভেরি ডির সরস সংস্করণ) গানটিতে ফুটে উঠল বিদেশের সংসদের সমসাময়িক পরিস্থিতি। এই পরিবেশনায় ছিলেন তুষার খান, শহীদুল আলম সাচ্চু, শিরীন বকুল, শামীমা নাজনীন, সাজু খাদেম, শামীম জামান ও মাজনুন মিজান।
এক ফাঁকে ‘এত ভালোবেসো না’ ও ‘মনের মাঝে তুমি’—গান দুটির সঙ্গে নেচে বড় পর্দার আবহ নিয়ে এলেন ফেরদৌস-মৌসুমী। আর ক্রিকেট মাঠের আবহ এল চঞ্চলের সুবাদে। পুরোদস্তুর ক্রিকেটারের বেশভূষায় আবৃত হয়ে মঞ্চে এসেই শুরু করলেন নিবিড় অনুশীলন! চঞ্চল ক্রিকেটার হতে পারলে ক্রিকেটাররা কেন অভিনেতা হতে পারবেন না! হলেনও তা-ই। মাশরাফির বুকে নয়, স্বর্ণা ঠাঁই চাইলেন এই ক্রিকেটারের পায়ে! মাশরাফির হূদয় গলল না! অকপটে জানিয়ে দিলেন, পায়ে ঠাঁই দেওয়ার মতো অবস্থা নেই আর! কারণ? একাধিকবার ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে যেতে পা যে জর্জরিত! মাঠে নেচে-কুদে বিজয় উদ্যাপনের ফাঁকে ফাঁকে যে নৃত্যকলাও বেশ রপ্ত করেছেন, তা বোঝা গেল আশরাফুল ও নাসিরের নাচ দেখে! ‘ও টুনির মা’ এবং ‘পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা’ গানের তালে তালে তাঁরা নাচলেন ধুন্ধুমার! সঙ্গে ছিলেন মাশিয়াত ও ঈশানা।
একদিকে চঞ্চল-তিশা, অন্যদিকে মোশাররফ—উপস্থাপকত্রয়ের অ্যানালগ-ডিজিটাল খুনসুটি অব্যাহত। এরই মধ্যে শেষ পরিবেশনা নিয়ে হাজির সজীব ও তাঁর সঙ্গী শিল্পীরা। ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’ গানটি গলায় তুললেন তাঁরা, সঙ্গে নাচলেন মিনু হক ও তাঁর দল। একেবারে শেষ পর্যায়ে স্বশরীরের হাজির হয়ে খুনসুটির ইতি টানলেন স্বয়ং মোশাররফ। ইয়া বড় দুটি মেডেল পরিয়ে দিলেন চঞ্চল ও তিশার গলায়! এতসবের মধ্যেই দর্শক একসময় আবিষ্কার করল সময় বয়ে গেছে। পর্দা নামছে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১১ আসরের।

No comments

Powered by Blogger.