ঝড়-বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার প্রচণ্ড ঝড়-বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঘরচাপায় ও দেয়াল ধসে সাতজন এবং বজ্রপাতে সাতজন মারা গেছে। পাহাড়ধস ও ঝড়ের সময় কাঠের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে দুজনের।


ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও): ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ে বিধ্বস্ত দালান ও মাটির ঘরের দেয়ালে চাপা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শিশুসহ ১৭ জন। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও বোচাগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ঝড়ের সময় বিধ্বস্ত মিলঘরের ইটের দেয়ালের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান মিলের মালিক জগন্নাথপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে আলিমুল ইসলাম (২৬)। ভেঙে যাওয়া ঘরের ইটের দেয়ালের চাপায় একই গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে রিনার (৭) মৃত্যু হয়। মাটির ঘরের দেয়ালচাপায় মারা গেছে একই গ্রামের মহসেন আলীর ছেলে সাকিব (১২) এবং চন্দরিয়া উত্তর মাদুয়ানপাড়া গ্রামের সাকের আলীর স্ত্রী শরবতী বেগম (৩৮)।
রাতে ওই ঝড়ের সময় উপজেলার বৈরচুনা গ্রামের সুকচানের (৬৫) ঘরের চাল উড়ে যায়। ওই সময় তিনি আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করলে একটি কাঠের সঙ্গে আঘাত পান। গতকাল সকাল আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুসাপুর ইউনিয়নের কাইতাখালী এলাকায় গতকাল বিকেলে বজ্রপাতে মোহাম্মদ হোসেন (৩৪) ও তাঁর ছেলে শান্তর (১৬) মৃত্যু হয়েছে। জ্বালানি কাঠের ব্যবসায়ী হোসেন মুসাপুরের দাশেরগাঁও এলাকায় থাকতেন। গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে।
রামগতি (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর নেয়ামত এলাকায় গতকাল বিকেলে কালবৈশাখীতে একটি মাদ্রাসার ঘরসহ ১০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই সময় ঘরচাপায় মনোয়ারা বেগম (৪৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। এদিকে ঝড়ের সময় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছে উপজেলার পূর্ব আলেকজান্ডার গ্রামের মো. আবদুল্লাহর মেয়ে লাকী আক্তার (১১)।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় গতকাল হাওরের জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে কাজল দেবনাথ (৪৩) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি উপজেলার পানাহার গ্রামে।
তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার মৌগাঁও গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৫০) গতকাল সকালে বজ্রপাতে মারা গেছেন। গ্রামের পূর্ব পাশে আড়িয়াল বিলে হাঁস রাখার সময় তিনি হঠাৎবজ্রপাতের কবলে পড়েন।
পার্বতীপুর (দিনাজপুর): গত মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ও প্রবল শিলাবৃষ্টির সময় দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়ায় গুদামঘরের বারান্দার টিনের চালা ও দেয়াল ধসে রিজিয়া বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। আহত হয় অন্তত আটজন। শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে উঠতি ইরি-বোরো ধান ও পাটখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রিজিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন গতকাল দুপুরে বড়পুকুরিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে দুই দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
গোপালগঞ্জ: সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নে গতকাল বিকেলে কালবৈশাখীর সময় ঘরচাপায় চর গোবরা গ্রামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। ঝড়ের সময় ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের দুই শতাধিক কাঁচা ঘর ও অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ে এবং ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মহেশখালী (কক্সবাজার): মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ফকিরজুমপাড়ায় মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির পাশে পাহাড় কাটছিলেন মকবুল আহমদ (৪৮)। ওই সময় বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের জাম্বুরাছড়া পাহাড়ে লেবুবাগানে কাজ করার সময় গতকাল দুপুরে বজ্রপাতে ইমান আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আহত হন আলতাফ আলী (৩৫) নামের একজন। এ সময় বাচ্চাসহ একটি গাভিও মারা যায়। নিহত ইমান আলীর বাড়ি চিমাইলত গ্রামে। আহত আলতাফকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ফরিদপুর: জেলার সদরপুর উপজেলার পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামে বাড়ির আঙিনায় গোয়ালঘর থেকে গরু বের করার সময় মঙ্গলবার সকালে বজ্রপাতের কবলে গুরুতর আহত হন কৃষক আলম মাতুব্বর (৩২)। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়ে বাড়িঘর, গাছপালা, জমির ফসলসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ঘরের চাপায় দুই নারী আহত হন। ঝড়ে বাড়িঘর ধসে পড়ায় এবং টিনের চালা উড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে।

No comments

Powered by Blogger.