কালান্তরের কড়চা-ভিক্ষুক ও মশকমুক্ত ঢাকা স্বপ্ন এবং বাস্তবতা by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
এবারের বঙ্গ দর্শন (৭) ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল এই দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশে ফিরতে পারিনি। সেই যে বঙ্গবন্ধু হত্যার কিছুদিন আগে দেশ ছেড়ে লন্ডনে এসেছি, তারপর একটানা ১৮ বছর আর দেশে ফেরা হয়নি। এরশাদের স্বৈরশাহীর পতনের পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় বসার এক বছর শেষে ১৯৯৩ সালে প্রথম ঢাকায় আসি।
১৮ বছর আগে ঢাকার যে বিমানবন্দর থেকে বিদেশগামী প্লেনে উঠেছিলাম, সেই বিমানবন্দর তখন আর নেই। বর্তমান বিমানবন্দর তখন চালু হয়েছে এবং তার মূল ভবনের কপালে 'জিয়া বিমানবন্দর' নামের কলঙ্ক তিলকও লাগানো হয়েছে।
বিমানবন্দরে নেমে এঙ্টি গেট পেরিয়ে আমার জন্য অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠতে যাব, দেখি একদল শিশু, নারী ও বুড়ো পুরুষ ভিখারি গাড়ি ঘিরে ফেলেছে_এ যেন অক্ষৌহিণী বাহিনী। এড়ানোর উপায় নেই। আমার পকেটে তখন বাংলাদেশি টাকা নেই। লন্ডন থেকে দেশে গেছি। পকেটে পাউন্ড রয়েছে। নাছোড়বান্দা এক ভিখারিনীকে বললাম, আমার কাছে বাংলাদেশি টাকা নেই। বুঝতেই পারছ বিদেশ থেকে এসেছি। ভিখারিনী অমনি বলে উঠল, টাকা চাই না স্যার, একটা ডলার অথবা পাউন্ড দেন।
আমার যে আত্মীয় গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন, তিনি আমাকে অক্ষৌহিণী বাহিনীর এক প্রকার বন্দি অবস্থায় দেখে ছুটে এলেন এবং পকেট থেকে একটা টাকা বের করে ভিখারিনীর হাতে দিতেই সে সেটা অবজ্ঞার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ওটা আপনিই রেখে দিন স্যার। আজকাল এক টাকা ভিক্ষা দিলে ভদ্রলোকদের সম্মান থাকে না। শেষ পর্যন্ত ওই ভিখারিনীসহ আরো দু-চারজন নাছোড়বান্দা শিশু ও বৃদ্ধ ভিখারিকে পাঁচ টাকা করে দিতে হলো এবং তারপর আমার মুক্তি।
বিমানবন্দর থেকে ধানমণ্ডির এক বাসায় পেঁৗছানো পর্যন্ত সহযাত্রী আত্মীয়টি আমাকে গাড়ির জানালার কাচ নামাতে দেননি। কারণ, গাড়ি কোথাও ট্রাফিক জ্যাম বা ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশের জন্য থামলেই দুই পাশে শত শত ভিখারি গাড়ি ঘিরে ফেলে। শত শত প্রসারিত হাত গাড়ির দরজায় আঘাত করতে থাকে এবং ভিক্ষা চেয়ে একই নাঁকিকান্নার সুর বাজাতে থাকে। গাড়ির জানালার কাচ নামালে এই শত শত প্রসারিত হাতের দ্বারা আমার অবস্থা কী দাঁড়াবে তা ভেবে সহযাত্রী আত্মীয়ের কথা মান্য করেছি। গাড়িতে এসি ছিল বলে রক্ষা। নইলে ওই গরমে জানালার কাচ-বন্ধ গাড়িতে দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার অবস্থা হতো।
শৈশবে ঢাকা শহর সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাব সুবিদিত ছিল। ঢাকা শহর কী জন্য বিখ্যাত? জবাব ছিল, বাকরখানি রুটি ও লোনা সাদা পনিরের জন্য। এখন এই জবাবটি পাল্টে গেছে। ঢাকা শহর কী জন্য বিখ্যাত প্রশ্ন করা হলে বলা হয়, ভিক্ষুক ও মশার জন্য। ইংরেজ আমলে তো বটেই, পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিকেও ঢাকায় মশার অত্যাচার ছিল বিশ্ববিদিত। দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় অফিস-আদালতে বসা যেত না। এ সময় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিক হাবিবুল্লাহ বাহার। তখনকার ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক মাসিক 'অগত্যা' পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একবার প্রশ্ন ছাপা হয়েছিল, ঢাকা শহর মশামুক্ত হবে কবে? জবাবে 'অগত্যা'য় ছাপা হয়েছিল, 'হামছে না পুছো, পুছো বাহারছে।' যদিও এটি একটি জনপ্রিয় হিন্দি ছবির হিট গান, কিন্তু এখানে তার অর্থ করা হয়েছিল, ঢাকা শহর কবে মশামুক্ত হবে, তার খবর আমাকে নয়, বাহার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করো।
চারদিক থেকে সমালোচিত হয়ে বাহার সাহেব ঢাকাকে জঞ্জালমুক্ত করে এবং 'মশক বিধ্বংসী ওষুধ ছিটিয়ে এমন অবস্থা করেছিলেন যে প্রায় এক দশক ঢাকা শহর সম্পূর্ণ মশকমুক্ত ছিল। মশারির ব্যবহার একপ্রকার উঠেই গিয়েছিল বলা চলে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা শহর প্রথম বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার পর আবার শহরটি মশকনগরীতে পরিণত হয়। লাখ লাখ টাকার ওষুধ ছিটিয়েও ঢাকা করপোরেশন আর মশক ধ্বংস করতে পারেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশেও সরকার ও কর্তৃপক্ষের এত প্রচেষ্টার পরও মশক কেন ধ্বংস হচ্ছে না_এ প্রশ্ন কেউ তুললে, ঢাকার একজন সাধারণ নাগরিকের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যেত। তাঁরা বলতেন, দুর্নীতির জন্য। যে ওষুধ ছিটানো হয় তা ভেজালে ভর্তি। যে পরিমাণ স্প্রে দরকার তার অর্ধেকটা কিনে বাকিটা পানি মিশিয়ে ছিটিয়ে দায়িত্ব পালন করা হয়। বাকি ওষুধের টাকাটা যায় একশ্রেণীর কর্মকর্তার পকেটে। এই কথাটা এখনো কেবল ঢাকা শহরে নয়, মফস্বলের শহরগুলোতেও চালু আছে।
এককালের সবুজ শ্যামলিমার জন্য নাম-ডাক থাকলেও ঢাকা শহর আদ্যিকালের কবে উর্বশী অথবা রূপসী নগরী ছিল, তা আমার জানা নেই। আমার শৈশবকাল থেকে শুনে এসেছি ঢাকা শহর ভিক্ষুকের নগরী, মশকনগরী। গত ফেব্রুয়ারি (২০১১) মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় পেঁৗছে দেখি ঢাকায় ভিখিরি নেই, নতুন ও পুরনো শহরের কোথাও কোথাও মশা একেবারেই নেই। মাত্র এক বছর আগেও দেখে গেছি, ঢাকা শহর ভিখারি ও মশকে পূর্ণ।
তাহলে রাতারাতি ঢাকা শহর ভিখারি ও মশক শূন্য হয়ে গেল কেমন করে? বিমানবন্দর থেকে বনানীর ইস্টার্ন রেসিডেন্স হোটেল পর্যন্ত আসতে একজন ভিক্ষুকও চোখে পড়ল না। কোলে-কাঁখে শিশু নারী ভিখারিতে যে শহরের রাস্তাঘাট ভর্তি দেখে গেছি, তারা কোথায় উবে গেল? হোটেলে আমার তেতালার সুইটে ঢুকে দেখি বিছানায় মশারি খাটানোর ব্যবস্থা নেই। একজন হোটেল পরিচারককে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, বনানীর এই অঞ্চলে এমনিতেই মশা নেই। তার ওপর আমরা তিন বেলায়ই প্রতিটি রুমে ওষুধ স্প্রে করি। মশা থাকবে কোথা থেকে?
মনে মনে ভাবলাম সরকার সম্ভবত তাদের ডিজিটাল বাংলা গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপে রাজধানীকে ভিখারি ও মশকমুক্ত করে ফেলেছে। হোটেল পরিচারককে জিজ্ঞাসা করলাম, কবে থেকে শহরের এই মশকমুক্ত অবস্থা? আর শহরের এই হাজার হাজার ভিখারি গেল কোথায়? সরকার কি সবার পুনর্বাসন করে ফেলেছে? পরিচারক হেসে বলল, বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে পুলিশ ভিখারিদের ধরে নিয়ে শহরের বাইরে রেখে দিয়েছে। খেলা শেষ হলে তারা ফিরবে! বিদেশের খেলোয়াড় আর দর্শকে এখন শহর ভর্তি। তাঁদের তো আর দেখানো যায় না দেশটা ভিক্ষুকে ভর্তি।
বলেছি, ঠিক বলেছ। তাহলে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষ করেই কি ভিখারিদের সঙ্গে মশকও বিতাড়ন করা হয়েছে? খেলা শেষ হলেই তারা ফিরে আসবে?
হোটেল পরিচারক এবার জোরে হেসে উঠেছে, বলেছে, তা আসবে স্যার। শুনতে পাচ্ছি খেলা উপলক্ষে নতুন-পুরনো দুই শহরেই দিনে কয়েকবার আসল ওষুধ ছিটানো হয়। পানি মেশানো নকল ওষুধ নয়। খেলা শেষ হয়ে গেলেই আবার নকল ওষুধ ছিটানো শুরু হয়ে যাবে। এখন সম্ভবত এই দুর্নীতির ব্যবসাটা বন্ধ আছে স্যার।
এবার আমার হাসির পালা। বলেছি, বিশ্বকাপ যুগ যুগ জিয়ো। ঢাকা শহরে প্রতি মাসে এই খেলাটা হোক, তাহলে নাগরিকজীবন যদি একটু সুস্থতা ও শান্তি পায়। এবারের বিশ্বকাপের খেলাই প্রমাণ করে দিল, সরকার আন্তরিকভাবে সক্রিয় হলে নাগরিকজীবনের অনেক সমস্যাই সহনীয় করে তুলতে পারে। নইলে ঢাকা শহরকে শুধু ভিখারি ও মশকমুক্ত করা নয়, অনেকটাই দুঃসহ যানজটমুক্ত করল কিভাবে? পুরনো ও নতুন ঢাকা শহরে এবার যানজট অনেকটাই কম দেখে যেমন আনন্দিত হয়েছি, তেমনি শঙ্কিত হয়েছি, আমার পরিচিত ও অর্ধপরিচিত কয়েক ব্যক্তিকে রাজপথে না দেখে। তারা পেশাদার ভিক্ষুক না হলেও অধিকাংশ সময় রাস্তায়ই থাকত এবং পছন্দসই ব্যক্তিদের কাছ থেকে দান-খয়রাত নিত। এবার রাস্তায় তাদের না দেখে এই ভেবে ভয় পেয়েছি যে এদের সাময়িকভাবে শহর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, না এরা মরে গেছে? ঢাকা শহরে শান্তিনগরে টুইন টাওয়ারের পাশের গলিতেই রাজনীতিক ও কলামিস্ট বন্ধু মোনায়েম সরকারের বাসা। ঢাকায় গেলে এই বাসায়ই আমার যাতায়াত বেশি। এই বাসায় গলিমুখে রাত-দিন রিকশার ভিড়। এই ভিড় ঠেলে গলির ভেতর যাতায়াত খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু এই গলিমুখেই দেখতাম এক যুবককে। মুখে সামান্য দাড়ি, ময়লা লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরা এই যুবক পাগল না ভবঘুরে তা কোনোদিন জানতে পারিনি। কিন্তু সব সময় গলিমুখে তার অবস্থান। আমার বা মোনায়েম সরকারের গাড়ি দেখলেই ছুটে আসত। গলিমুখের যানজট সরিয়ে আমাদের গাড়ির জন্য পথ করে দিত। রিকশাওয়ালারা সহজে গলিমুখ থেকে না সরলে নিজেই লাঠি হাতে তাদের তাড়া করত। নিজেই রিকশাগুলোকে সরানোর জন্য ধাক্কা মারত।
এ কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে তার বিবাদ হতো। কখনো কখনো তাদের হাতে বেদম মার খেত। তাতে সে দমত না। অনেক সময় দেখতাম কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় সে আবার আমাদের জন্য ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে। এ জন্য কখনো টাকা-পয়সা চাইত না। আমরা স্বেছায় যা দিতাম, তা-ই নিত। একবার শুধু বলেছিল, সে তার কোন পীরের মাজার জেয়ারতে যাবে, তাকে যেন ট্রেন ভাড়াটা দিই। এই ভাড়াও খুব বেশি নয়। আমি তাকে দিয়েছিলাম।
এবার তাকে শান্তিনগরে টুইন টাওয়ারের মোড়ে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছি। মোনায়েম সরকারসহ তাঁর বাসার অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, লোকটি গেল কোথায়? মোনায়েম সরকার বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি না। কোথাও চলে গেল কি না জানি না। আমি মনে মনে একটা শঙ্কা বোধ করেছি। শহরকে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে ভিক্ষুকমুক্ত করার অভিযানে পুলিশের হাতে পড়ে তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়নি তো? তার কি আবার ঢাকায় ফেরা হবে?
সিদ্ধেশ্বরী কলেজের পাশের একটা গলিতে একসময় বুড়ো শিবের মন্দিরসংলগ্ন একটা বটগাছ ছিল। নগরীর উন্নয়নে সেই গলি, সেই মন্দির, বটগাছ আর নেই। কিন্তু কিছু কিছু চিহ্ন বর্তমান। ৩০-৪০ বছর আগে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর পুরনো পৈতৃক বাড়িতে যেতে তখনকার মাটির রাস্তার গলিতে বুড়ো শিবের মন্দিরসংলগ্ন বটগাছের তলায় একটু বসতাম। সাম্প্রতিককালে এই বটগাছশূন্য এলাকায় ভিখারিদের একটা অবস্থান দেখেছি। এই ভিখারিদের মধ্যে ছিল বাচ্চা কোলে একটি তরুণী। খুবই কমনীয় চেহারা। বাচ্চাটি কোলে ঘুমাত। সে কাতরকণ্ঠে ভিক্ষা চাইত।
তাকে ভিক্ষা দিতে গেলে সঙ্গের বন্ধু-বান্ধব বাধা দিতেন। বলতেন, এই মেয়ে ভিখারি নয়। ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা চালানোর জন্য শহরে এখন অনেক সিন্ডিকেট আছে। তারা এই মেয়েদের সংগ্রহ করে বাচ্চা ভাড়া করে এনে এদের কোলে তুলে দিয়ে ভিক্ষা করায়। কারণ, কোলে বাচ্চা নিয়ে অসহায় তরুণীকে ভিক্ষা করতে দেখলে অনেকের মনেই মায়া জন্মায়। আমার এই বন্ধুদের কথা বিশ্বাস করেছি। কিন্তু এই ভিখারিনীর কাতর চোখ-মুখ দেখলে বিশ্বাস হতো না সে আসল ভিখারিনী নয়, কিংবা ওই বাচ্চাটা ভাড়া করা। আমি বন্ধুদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাকে সব সময় ১০০ টাকার একটা নোট দিতাম। এই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় গিয়ে সিদ্ধেশ্বরীর ওই এলাকাটিতে এই বাচ্চা কোলে মেয়েদের মধ্যে তাকে আর দেখিনি। কয়েকবার ওই এলাকা পার হওয়ার সময়ও তার দেখা আর পাইনি। তাহলে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে মশক ও ভিক্ষুক বিতাড়ন অভিযানে এই মেয়েটিও কি হারিয়ে গেছে? কে আমাকে সে খোঁজ দেবে?
মার্চ মাসের শেষ দিকে আমি যখন ঢাকা থেকে ফিরে আসি, তখন বিশ্বকাপের খেলাও শেষ হয়ে এসেছে। ঢাকায় আবার ভিক্ষুক ও মশক ফিরে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে চোখে পড়ল এক মজার দৃশ্য। লাউঞ্জের ভেতরে বিমানবন্দরের এক কর্মচারী দেখতে হাত পাখার মতো একটা কিছু ক্রমাগত চারপাশে ঘোরাচ্ছে। ঘোরানোর সময় টকটক করে শব্দ হয় এবং আলোর ঝলকানি দেখা যায়। আমি এতকাল বিদেশে আছি, কিন্তু এমন একটা যন্ত্র কখনো দেখিনি। বিদ্যুৎচালিত হাতপাখার মতো জিনিসটি কী, জানতে চাইতেই ওই কর্মচারী জানালেন, এটা মশা মারার যন্ত্র। ওষুধ ছিটিয়েও ভিআইপি লাউঞ্জ মশামুক্ত করা না গেলে লাউঞ্জে ভিআইপিদের সমাগম হলে এই হাতপাখার মতো যন্ত্রটি ঘুরিয়ে মশা মারা হয়।
শুনে আশ্বস্ত হলাম। বিশ্বকাপ খেলা শেষ না হতেই মশা আবার ঢাকা শহরে ফিরে আসছে। তাহলে ভিখারিরাও আসবে। নিশ্চয়ই ফিরে আসবে শান্তিনগরের সেই যুবকটি এবং সিদ্ধেশ্বরীর বাচ্চা কোলে সেই ভিখারিনীও।
(অসমাপ্ত)
লন্ডন ২০ এপ্রিল, সোমবার ২০১১
বিমানবন্দরে নেমে এঙ্টি গেট পেরিয়ে আমার জন্য অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠতে যাব, দেখি একদল শিশু, নারী ও বুড়ো পুরুষ ভিখারি গাড়ি ঘিরে ফেলেছে_এ যেন অক্ষৌহিণী বাহিনী। এড়ানোর উপায় নেই। আমার পকেটে তখন বাংলাদেশি টাকা নেই। লন্ডন থেকে দেশে গেছি। পকেটে পাউন্ড রয়েছে। নাছোড়বান্দা এক ভিখারিনীকে বললাম, আমার কাছে বাংলাদেশি টাকা নেই। বুঝতেই পারছ বিদেশ থেকে এসেছি। ভিখারিনী অমনি বলে উঠল, টাকা চাই না স্যার, একটা ডলার অথবা পাউন্ড দেন।
আমার যে আত্মীয় গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন, তিনি আমাকে অক্ষৌহিণী বাহিনীর এক প্রকার বন্দি অবস্থায় দেখে ছুটে এলেন এবং পকেট থেকে একটা টাকা বের করে ভিখারিনীর হাতে দিতেই সে সেটা অবজ্ঞার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ওটা আপনিই রেখে দিন স্যার। আজকাল এক টাকা ভিক্ষা দিলে ভদ্রলোকদের সম্মান থাকে না। শেষ পর্যন্ত ওই ভিখারিনীসহ আরো দু-চারজন নাছোড়বান্দা শিশু ও বৃদ্ধ ভিখারিকে পাঁচ টাকা করে দিতে হলো এবং তারপর আমার মুক্তি।
বিমানবন্দর থেকে ধানমণ্ডির এক বাসায় পেঁৗছানো পর্যন্ত সহযাত্রী আত্মীয়টি আমাকে গাড়ির জানালার কাচ নামাতে দেননি। কারণ, গাড়ি কোথাও ট্রাফিক জ্যাম বা ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশের জন্য থামলেই দুই পাশে শত শত ভিখারি গাড়ি ঘিরে ফেলে। শত শত প্রসারিত হাত গাড়ির দরজায় আঘাত করতে থাকে এবং ভিক্ষা চেয়ে একই নাঁকিকান্নার সুর বাজাতে থাকে। গাড়ির জানালার কাচ নামালে এই শত শত প্রসারিত হাতের দ্বারা আমার অবস্থা কী দাঁড়াবে তা ভেবে সহযাত্রী আত্মীয়ের কথা মান্য করেছি। গাড়িতে এসি ছিল বলে রক্ষা। নইলে ওই গরমে জানালার কাচ-বন্ধ গাড়িতে দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার অবস্থা হতো।
শৈশবে ঢাকা শহর সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাব সুবিদিত ছিল। ঢাকা শহর কী জন্য বিখ্যাত? জবাব ছিল, বাকরখানি রুটি ও লোনা সাদা পনিরের জন্য। এখন এই জবাবটি পাল্টে গেছে। ঢাকা শহর কী জন্য বিখ্যাত প্রশ্ন করা হলে বলা হয়, ভিক্ষুক ও মশার জন্য। ইংরেজ আমলে তো বটেই, পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিকেও ঢাকায় মশার অত্যাচার ছিল বিশ্ববিদিত। দিনের বেলায়ও মশার যন্ত্রণায় অফিস-আদালতে বসা যেত না। এ সময় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিক হাবিবুল্লাহ বাহার। তখনকার ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক মাসিক 'অগত্যা' পত্রিকায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একবার প্রশ্ন ছাপা হয়েছিল, ঢাকা শহর মশামুক্ত হবে কবে? জবাবে 'অগত্যা'য় ছাপা হয়েছিল, 'হামছে না পুছো, পুছো বাহারছে।' যদিও এটি একটি জনপ্রিয় হিন্দি ছবির হিট গান, কিন্তু এখানে তার অর্থ করা হয়েছিল, ঢাকা শহর কবে মশামুক্ত হবে, তার খবর আমাকে নয়, বাহার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করো।
চারদিক থেকে সমালোচিত হয়ে বাহার সাহেব ঢাকাকে জঞ্জালমুক্ত করে এবং 'মশক বিধ্বংসী ওষুধ ছিটিয়ে এমন অবস্থা করেছিলেন যে প্রায় এক দশক ঢাকা শহর সম্পূর্ণ মশকমুক্ত ছিল। মশারির ব্যবহার একপ্রকার উঠেই গিয়েছিল বলা চলে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা শহর প্রথম বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার পর আবার শহরটি মশকনগরীতে পরিণত হয়। লাখ লাখ টাকার ওষুধ ছিটিয়েও ঢাকা করপোরেশন আর মশক ধ্বংস করতে পারেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশেও সরকার ও কর্তৃপক্ষের এত প্রচেষ্টার পরও মশক কেন ধ্বংস হচ্ছে না_এ প্রশ্ন কেউ তুললে, ঢাকার একজন সাধারণ নাগরিকের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যেত। তাঁরা বলতেন, দুর্নীতির জন্য। যে ওষুধ ছিটানো হয় তা ভেজালে ভর্তি। যে পরিমাণ স্প্রে দরকার তার অর্ধেকটা কিনে বাকিটা পানি মিশিয়ে ছিটিয়ে দায়িত্ব পালন করা হয়। বাকি ওষুধের টাকাটা যায় একশ্রেণীর কর্মকর্তার পকেটে। এই কথাটা এখনো কেবল ঢাকা শহরে নয়, মফস্বলের শহরগুলোতেও চালু আছে।
এককালের সবুজ শ্যামলিমার জন্য নাম-ডাক থাকলেও ঢাকা শহর আদ্যিকালের কবে উর্বশী অথবা রূপসী নগরী ছিল, তা আমার জানা নেই। আমার শৈশবকাল থেকে শুনে এসেছি ঢাকা শহর ভিক্ষুকের নগরী, মশকনগরী। গত ফেব্রুয়ারি (২০১১) মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় পেঁৗছে দেখি ঢাকায় ভিখিরি নেই, নতুন ও পুরনো শহরের কোথাও কোথাও মশা একেবারেই নেই। মাত্র এক বছর আগেও দেখে গেছি, ঢাকা শহর ভিখারি ও মশকে পূর্ণ।
তাহলে রাতারাতি ঢাকা শহর ভিখারি ও মশক শূন্য হয়ে গেল কেমন করে? বিমানবন্দর থেকে বনানীর ইস্টার্ন রেসিডেন্স হোটেল পর্যন্ত আসতে একজন ভিক্ষুকও চোখে পড়ল না। কোলে-কাঁখে শিশু নারী ভিখারিতে যে শহরের রাস্তাঘাট ভর্তি দেখে গেছি, তারা কোথায় উবে গেল? হোটেলে আমার তেতালার সুইটে ঢুকে দেখি বিছানায় মশারি খাটানোর ব্যবস্থা নেই। একজন হোটেল পরিচারককে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, বনানীর এই অঞ্চলে এমনিতেই মশা নেই। তার ওপর আমরা তিন বেলায়ই প্রতিটি রুমে ওষুধ স্প্রে করি। মশা থাকবে কোথা থেকে?
মনে মনে ভাবলাম সরকার সম্ভবত তাদের ডিজিটাল বাংলা গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপে রাজধানীকে ভিখারি ও মশকমুক্ত করে ফেলেছে। হোটেল পরিচারককে জিজ্ঞাসা করলাম, কবে থেকে শহরের এই মশকমুক্ত অবস্থা? আর শহরের এই হাজার হাজার ভিখারি গেল কোথায়? সরকার কি সবার পুনর্বাসন করে ফেলেছে? পরিচারক হেসে বলল, বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে পুলিশ ভিখারিদের ধরে নিয়ে শহরের বাইরে রেখে দিয়েছে। খেলা শেষ হলে তারা ফিরবে! বিদেশের খেলোয়াড় আর দর্শকে এখন শহর ভর্তি। তাঁদের তো আর দেখানো যায় না দেশটা ভিক্ষুকে ভর্তি।
বলেছি, ঠিক বলেছ। তাহলে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষ করেই কি ভিখারিদের সঙ্গে মশকও বিতাড়ন করা হয়েছে? খেলা শেষ হলেই তারা ফিরে আসবে?
হোটেল পরিচারক এবার জোরে হেসে উঠেছে, বলেছে, তা আসবে স্যার। শুনতে পাচ্ছি খেলা উপলক্ষে নতুন-পুরনো দুই শহরেই দিনে কয়েকবার আসল ওষুধ ছিটানো হয়। পানি মেশানো নকল ওষুধ নয়। খেলা শেষ হয়ে গেলেই আবার নকল ওষুধ ছিটানো শুরু হয়ে যাবে। এখন সম্ভবত এই দুর্নীতির ব্যবসাটা বন্ধ আছে স্যার।
এবার আমার হাসির পালা। বলেছি, বিশ্বকাপ যুগ যুগ জিয়ো। ঢাকা শহরে প্রতি মাসে এই খেলাটা হোক, তাহলে নাগরিকজীবন যদি একটু সুস্থতা ও শান্তি পায়। এবারের বিশ্বকাপের খেলাই প্রমাণ করে দিল, সরকার আন্তরিকভাবে সক্রিয় হলে নাগরিকজীবনের অনেক সমস্যাই সহনীয় করে তুলতে পারে। নইলে ঢাকা শহরকে শুধু ভিখারি ও মশকমুক্ত করা নয়, অনেকটাই দুঃসহ যানজটমুক্ত করল কিভাবে? পুরনো ও নতুন ঢাকা শহরে এবার যানজট অনেকটাই কম দেখে যেমন আনন্দিত হয়েছি, তেমনি শঙ্কিত হয়েছি, আমার পরিচিত ও অর্ধপরিচিত কয়েক ব্যক্তিকে রাজপথে না দেখে। তারা পেশাদার ভিক্ষুক না হলেও অধিকাংশ সময় রাস্তায়ই থাকত এবং পছন্দসই ব্যক্তিদের কাছ থেকে দান-খয়রাত নিত। এবার রাস্তায় তাদের না দেখে এই ভেবে ভয় পেয়েছি যে এদের সাময়িকভাবে শহর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, না এরা মরে গেছে? ঢাকা শহরে শান্তিনগরে টুইন টাওয়ারের পাশের গলিতেই রাজনীতিক ও কলামিস্ট বন্ধু মোনায়েম সরকারের বাসা। ঢাকায় গেলে এই বাসায়ই আমার যাতায়াত বেশি। এই বাসায় গলিমুখে রাত-দিন রিকশার ভিড়। এই ভিড় ঠেলে গলির ভেতর যাতায়াত খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু এই গলিমুখেই দেখতাম এক যুবককে। মুখে সামান্য দাড়ি, ময়লা লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরা এই যুবক পাগল না ভবঘুরে তা কোনোদিন জানতে পারিনি। কিন্তু সব সময় গলিমুখে তার অবস্থান। আমার বা মোনায়েম সরকারের গাড়ি দেখলেই ছুটে আসত। গলিমুখের যানজট সরিয়ে আমাদের গাড়ির জন্য পথ করে দিত। রিকশাওয়ালারা সহজে গলিমুখ থেকে না সরলে নিজেই লাঠি হাতে তাদের তাড়া করত। নিজেই রিকশাগুলোকে সরানোর জন্য ধাক্কা মারত।
এ কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে তার বিবাদ হতো। কখনো কখনো তাদের হাতে বেদম মার খেত। তাতে সে দমত না। অনেক সময় দেখতাম কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় সে আবার আমাদের জন্য ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে। এ জন্য কখনো টাকা-পয়সা চাইত না। আমরা স্বেছায় যা দিতাম, তা-ই নিত। একবার শুধু বলেছিল, সে তার কোন পীরের মাজার জেয়ারতে যাবে, তাকে যেন ট্রেন ভাড়াটা দিই। এই ভাড়াও খুব বেশি নয়। আমি তাকে দিয়েছিলাম।
এবার তাকে শান্তিনগরে টুইন টাওয়ারের মোড়ে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছি। মোনায়েম সরকারসহ তাঁর বাসার অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, লোকটি গেল কোথায়? মোনায়েম সরকার বলেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি না। কোথাও চলে গেল কি না জানি না। আমি মনে মনে একটা শঙ্কা বোধ করেছি। শহরকে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে ভিক্ষুকমুক্ত করার অভিযানে পুলিশের হাতে পড়ে তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়নি তো? তার কি আবার ঢাকায় ফেরা হবে?
সিদ্ধেশ্বরী কলেজের পাশের একটা গলিতে একসময় বুড়ো শিবের মন্দিরসংলগ্ন একটা বটগাছ ছিল। নগরীর উন্নয়নে সেই গলি, সেই মন্দির, বটগাছ আর নেই। কিন্তু কিছু কিছু চিহ্ন বর্তমান। ৩০-৪০ বছর আগে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর পুরনো পৈতৃক বাড়িতে যেতে তখনকার মাটির রাস্তার গলিতে বুড়ো শিবের মন্দিরসংলগ্ন বটগাছের তলায় একটু বসতাম। সাম্প্রতিককালে এই বটগাছশূন্য এলাকায় ভিখারিদের একটা অবস্থান দেখেছি। এই ভিখারিদের মধ্যে ছিল বাচ্চা কোলে একটি তরুণী। খুবই কমনীয় চেহারা। বাচ্চাটি কোলে ঘুমাত। সে কাতরকণ্ঠে ভিক্ষা চাইত।
তাকে ভিক্ষা দিতে গেলে সঙ্গের বন্ধু-বান্ধব বাধা দিতেন। বলতেন, এই মেয়ে ভিখারি নয়। ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসা চালানোর জন্য শহরে এখন অনেক সিন্ডিকেট আছে। তারা এই মেয়েদের সংগ্রহ করে বাচ্চা ভাড়া করে এনে এদের কোলে তুলে দিয়ে ভিক্ষা করায়। কারণ, কোলে বাচ্চা নিয়ে অসহায় তরুণীকে ভিক্ষা করতে দেখলে অনেকের মনেই মায়া জন্মায়। আমার এই বন্ধুদের কথা বিশ্বাস করেছি। কিন্তু এই ভিখারিনীর কাতর চোখ-মুখ দেখলে বিশ্বাস হতো না সে আসল ভিখারিনী নয়, কিংবা ওই বাচ্চাটা ভাড়া করা। আমি বন্ধুদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাকে সব সময় ১০০ টাকার একটা নোট দিতাম। এই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় গিয়ে সিদ্ধেশ্বরীর ওই এলাকাটিতে এই বাচ্চা কোলে মেয়েদের মধ্যে তাকে আর দেখিনি। কয়েকবার ওই এলাকা পার হওয়ার সময়ও তার দেখা আর পাইনি। তাহলে বিশ্বকাপের খেলা উপলক্ষে মশক ও ভিক্ষুক বিতাড়ন অভিযানে এই মেয়েটিও কি হারিয়ে গেছে? কে আমাকে সে খোঁজ দেবে?
মার্চ মাসের শেষ দিকে আমি যখন ঢাকা থেকে ফিরে আসি, তখন বিশ্বকাপের খেলাও শেষ হয়ে এসেছে। ঢাকায় আবার ভিক্ষুক ও মশক ফিরে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে চোখে পড়ল এক মজার দৃশ্য। লাউঞ্জের ভেতরে বিমানবন্দরের এক কর্মচারী দেখতে হাত পাখার মতো একটা কিছু ক্রমাগত চারপাশে ঘোরাচ্ছে। ঘোরানোর সময় টকটক করে শব্দ হয় এবং আলোর ঝলকানি দেখা যায়। আমি এতকাল বিদেশে আছি, কিন্তু এমন একটা যন্ত্র কখনো দেখিনি। বিদ্যুৎচালিত হাতপাখার মতো জিনিসটি কী, জানতে চাইতেই ওই কর্মচারী জানালেন, এটা মশা মারার যন্ত্র। ওষুধ ছিটিয়েও ভিআইপি লাউঞ্জ মশামুক্ত করা না গেলে লাউঞ্জে ভিআইপিদের সমাগম হলে এই হাতপাখার মতো যন্ত্রটি ঘুরিয়ে মশা মারা হয়।
শুনে আশ্বস্ত হলাম। বিশ্বকাপ খেলা শেষ না হতেই মশা আবার ঢাকা শহরে ফিরে আসছে। তাহলে ভিখারিরাও আসবে। নিশ্চয়ই ফিরে আসবে শান্তিনগরের সেই যুবকটি এবং সিদ্ধেশ্বরীর বাচ্চা কোলে সেই ভিখারিনীও।
(অসমাপ্ত)
লন্ডন ২০ এপ্রিল, সোমবার ২০১১
No comments