স্মরণ-আবার জমবে মেলা... by জাবেদ সুলতান
এখানে এলে আমার বয়স অর্ধেক হয়ে যায়। ফিরে পাই আমার জীবনের দিনপঞ্জির শ্রেষ্ঠ পাতাগুলো। দেশে এলেই অস্থির হয়ে থাকি, কখন আসব এখানে। পাঁচ বছর পর দেশে এলাম। ক্যাম্পাসে ঢুকেই কান্না পাচ্ছিল যেন। নস্টালজিয়া নয়, পরিচিত সময়গুলো প্রাণের টানে টানছিল আমায়। এখানকার সবকিছু আমাকে টেনে নিচ্ছিল।
এই সেই মাঠ, যেখানে আমরা গেঁথে থাকতাম সারাটা বেলা। মুক্তমঞ্চটাও ডাকছে এখনো। নাটক থাক বা না থাক, রিহার্সাল চলত গলা ফাটিয়ে। দিনভর দৌড়ঝাঁপ আর গলা ফাটিয়ে এসে চায়ের কাপে ঝড় তুলতাম এখানেই। তখন শিঙাড়ার যে গন্ধটা আমাদের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিত, সেই পুরোনো গন্ধই যেন আবার পাচ্ছি। শিঙাড়ার সেই দোকানটি এখন নেই। নেই আমার পরিচিত মুখগুলোও। এক টাকার চা এখন চার টাকা হয়েছে। বদলে গেছে অনেক কিছুই। নতুন এই পাকা রাস্তাটিও এমন ছিল না তখন। চেনা গাছগুলোও যেন আরও বুড়ো হয়ে গেছে। বুড়ো তো হবেই। আমি যে প্রায় তিন দশক আগের নাড়ি ধরে টানছি। তবে আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো এখনো সবুজ। আমার মধ্যে ক্যাম্পাসের সেই গানগুলো এখনো একই সুরে বাজে। এখানকার শিক্ষার্থীরা একটা অন্য আত্মীয়তা নিয়ে দিন কাটায়। সেই নাড়ির টান কখনো ঢিলে হওয়ার নয়।’ গত বছর আজকের দিনে নিজের ক্যাম্পাসে এসে এভাবেই পুরোনো দিনের স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাঈদা ইয়াসমিন।
সাঈদা আপার মতো সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্যাম্পাসে আসেন। সহপাঠীরা দলবেঁধেও আসেন কখনো। তবে পুরোনো অনেকের মধ্যেই দেখা হয় এক বিশেষ দিনে। আজ সেই দিন। ১২ জানুয়ারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। প্রিয় শিক্ষাঙ্গনের জন্মদিন পালন করতে নাড়ির টানে পুরোনো অনেক শিক্ষার্থী আজ তাঁদের ক্যাম্পাসে ফিরবেন। থাকবে বর্তমান শিক্ষার্থী, নতুনেরাও। বয়সের কথা ভুলে গিয়ে আজ সবাই মিলবেন প্রাণের মেলায়, ভাসবেন তারুণ্যের জোয়ারে। শোভাযাত্রা হবে, আনন্দ শোভাযাত্রা। আজ ক্যাম্পাসের সবুজগুলো সাজবে নানা রঙে। বাহারি মুখোশের আড়ালে ঢাকা পড়বে ভেতরের ভারিক্কি। মাথায় কাপড় বেঁধে নাচবে সবাই বাজনার তালে। আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের যাঁরা এখানকার সাবেক ছাত্র, তাঁদের বেলায় তো কথাই নেই, ছাত্র-শিক্ষকের সবাই মিলবে এই আনন্দ মিছিলে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এই আনন্দমিলনীতে সঙ্গী হবেন ক্যাম্পাসের পরিচিত সব মুখ। বাদ যাবেন না আমাদের প্রিয় দোকানি মামা কিংবা রিকশা-মামারাও। আজ ক্যাম্পাসের আড্ডায় দলবাজি হবে; দলাদলি হবে হলে হলে, বিভাগে বিভাগে, ব্যাচে ব্যাচে, এমনকি রুম নিয়ে। তবে সাবেকদের আড্ডার শিরোমণি হবে অবশ্যই নস্টালজিয়া। সেই সঙ্গে তর্ক জমবে নতুন-পুরোনো। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় পুনর্মিলনী হয়।
আজ আমিও সাবেক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাগুজে সম্পর্কটা সদ্য সাবেক হলেও ক্যাম্পাসটা আমার আপন হয়ে থাকবে আজীবন। কেউ কেউ আজ এই প্রাণের মেলার সঙ্গী হতে কর্মস্থল থেকে যদি ছুটি না পান, তবুও জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের আজ যে যেখানেই থাকুক না কেন, মনটা পড়ে থাকবে ক্যাম্পাসেই। আজ চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে মেহের চত্বরের মেহের ভাইয়ের সেই চায়ের স্বাদ মনে পড়বেই কিংবা দুপুরের খাবারের পাত অপূর্ণ ঠেকবে বটতলার কাদের ভাইয়ের দোকানের হাঁসের মাংস আর মাছ চচ্চড়ি ছাড়া। আজ বিকেলে খুব টানবে ক্যাম্পাসের লাভ লেনটা। আর সবকিছু ছাপিয়ে আজ মন পড়ে থাকবে ক্যাম্পাসের আড্ডায়। আজ ধুম আড্ডা হবে সবখানে। মেহের চত্বর, লাভ লেন, একুশে, ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তমঞ্চ, খেলার মাঠ, শহীদ মিনার চত্বর, লাইব্রেরি, বটতলা, মুন্নী চত্বর, লেকপাড়, পুরোনো কলা, ট্রান্সপোর্টসহ জাহাঙ্গীরনগরের সর্বত্র আজ মুখর থাকবে নতুন-পুরোনোর সম্মিলনে। পুরোনো কথা আসবে, পুরোনো দিন টানবে, নস্টালজিয়া ভর করবে আজ। নতুনেরা পুরোনোদের দুরন্তপনা শুনে ‘হাঁ’ হবে; আবার পরক্ষণেই ওদের কথা শুনে বলবে, ‘আচ্ছা, তোরাও তো কম যাস না দেখি।’
সেলিম আল দীন স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হয় ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেই। ওই আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন স্যার। অত বড় মানুষটার সঙ্গে খুব সহজেই সহজ হয়ে গিয়েছিল সেখানকার সবাই। আজ পুরো ক্যাম্পাস তাঁর শূন্যতা বোধ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ছাত্র-শিক্ষকের দূরত্ব কমে যায় অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অনুষ্ঠানের স্রোতের বাইরেও আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে বিভাগ ও হলগুলোয়। প্রতিটা বিভাগে পুরোনো শিক্ষার্থীরা যাবে, ঘরোয়া অনুষ্ঠান হবে। বিশেষ অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হবে আমাদের বিভাগেও। তবে আমাদের বিভাগও এখন বড় হয়ে গেছে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)। আজ নিশ্চয়ই আইবিএতে সাবেক শিক্ষার্থীরা আড্ডা জমাবেন ঘরোয়া আমেজে। তর্ক জমবে ব্যাচে ব্যাচে। ফুটবল দল আর বাস্কেট বল দলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই জমবে তর্কের মাঠে। আজ নিশ্চয়ই শুদ্ধ স্যার, রানা স্যার আর নাজমুল স্যারের মধ্যে সেই তর্ক বাজবে, একজনকে আরেকজন পচাতে গিয়ে বেরিয়ে আসবে তাঁদের অনেক না-জানা মজার কথাও। সবার প্রিয় আরাফাত স্যারকে নিশ্চয়ই আমাদের সবাই জেঁকে ধরবে, ‘ভাইয়া, আপনি আমাদের ফেলে বিদেশে পড়তে যাবেন না, প্লিজ।’ আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই নেচে উঠবে অন্য রঙে। শুভ জন্মদিন আমাদের প্রিয়তম ক্যাম্পাসকে।
সাঈদা আপার মতো সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্যাম্পাসে আসেন। সহপাঠীরা দলবেঁধেও আসেন কখনো। তবে পুরোনো অনেকের মধ্যেই দেখা হয় এক বিশেষ দিনে। আজ সেই দিন। ১২ জানুয়ারি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। প্রিয় শিক্ষাঙ্গনের জন্মদিন পালন করতে নাড়ির টানে পুরোনো অনেক শিক্ষার্থী আজ তাঁদের ক্যাম্পাসে ফিরবেন। থাকবে বর্তমান শিক্ষার্থী, নতুনেরাও। বয়সের কথা ভুলে গিয়ে আজ সবাই মিলবেন প্রাণের মেলায়, ভাসবেন তারুণ্যের জোয়ারে। শোভাযাত্রা হবে, আনন্দ শোভাযাত্রা। আজ ক্যাম্পাসের সবুজগুলো সাজবে নানা রঙে। বাহারি মুখোশের আড়ালে ঢাকা পড়বে ভেতরের ভারিক্কি। মাথায় কাপড় বেঁধে নাচবে সবাই বাজনার তালে। আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের যাঁরা এখানকার সাবেক ছাত্র, তাঁদের বেলায় তো কথাই নেই, ছাত্র-শিক্ষকের সবাই মিলবে এই আনন্দ মিছিলে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এই আনন্দমিলনীতে সঙ্গী হবেন ক্যাম্পাসের পরিচিত সব মুখ। বাদ যাবেন না আমাদের প্রিয় দোকানি মামা কিংবা রিকশা-মামারাও। আজ ক্যাম্পাসের আড্ডায় দলবাজি হবে; দলাদলি হবে হলে হলে, বিভাগে বিভাগে, ব্যাচে ব্যাচে, এমনকি রুম নিয়ে। তবে সাবেকদের আড্ডার শিরোমণি হবে অবশ্যই নস্টালজিয়া। সেই সঙ্গে তর্ক জমবে নতুন-পুরোনো। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় পুনর্মিলনী হয়।
আজ আমিও সাবেক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাগুজে সম্পর্কটা সদ্য সাবেক হলেও ক্যাম্পাসটা আমার আপন হয়ে থাকবে আজীবন। কেউ কেউ আজ এই প্রাণের মেলার সঙ্গী হতে কর্মস্থল থেকে যদি ছুটি না পান, তবুও জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের আজ যে যেখানেই থাকুক না কেন, মনটা পড়ে থাকবে ক্যাম্পাসেই। আজ চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে মেহের চত্বরের মেহের ভাইয়ের সেই চায়ের স্বাদ মনে পড়বেই কিংবা দুপুরের খাবারের পাত অপূর্ণ ঠেকবে বটতলার কাদের ভাইয়ের দোকানের হাঁসের মাংস আর মাছ চচ্চড়ি ছাড়া। আজ বিকেলে খুব টানবে ক্যাম্পাসের লাভ লেনটা। আর সবকিছু ছাপিয়ে আজ মন পড়ে থাকবে ক্যাম্পাসের আড্ডায়। আজ ধুম আড্ডা হবে সবখানে। মেহের চত্বর, লাভ লেন, একুশে, ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তমঞ্চ, খেলার মাঠ, শহীদ মিনার চত্বর, লাইব্রেরি, বটতলা, মুন্নী চত্বর, লেকপাড়, পুরোনো কলা, ট্রান্সপোর্টসহ জাহাঙ্গীরনগরের সর্বত্র আজ মুখর থাকবে নতুন-পুরোনোর সম্মিলনে। পুরোনো কথা আসবে, পুরোনো দিন টানবে, নস্টালজিয়া ভর করবে আজ। নতুনেরা পুরোনোদের দুরন্তপনা শুনে ‘হাঁ’ হবে; আবার পরক্ষণেই ওদের কথা শুনে বলবে, ‘আচ্ছা, তোরাও তো কম যাস না দেখি।’
সেলিম আল দীন স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হয় ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেই। ওই আড্ডার মধ্যমণি ছিলেন স্যার। অত বড় মানুষটার সঙ্গে খুব সহজেই সহজ হয়ে গিয়েছিল সেখানকার সবাই। আজ পুরো ক্যাম্পাস তাঁর শূন্যতা বোধ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ছাত্র-শিক্ষকের দূরত্ব কমে যায় অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অনুষ্ঠানের স্রোতের বাইরেও আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে বিভাগ ও হলগুলোয়। প্রতিটা বিভাগে পুরোনো শিক্ষার্থীরা যাবে, ঘরোয়া অনুষ্ঠান হবে। বিশেষ অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হবে আমাদের বিভাগেও। তবে আমাদের বিভাগও এখন বড় হয়ে গেছে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)। আজ নিশ্চয়ই আইবিএতে সাবেক শিক্ষার্থীরা আড্ডা জমাবেন ঘরোয়া আমেজে। তর্ক জমবে ব্যাচে ব্যাচে। ফুটবল দল আর বাস্কেট বল দলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই জমবে তর্কের মাঠে। আজ নিশ্চয়ই শুদ্ধ স্যার, রানা স্যার আর নাজমুল স্যারের মধ্যে সেই তর্ক বাজবে, একজনকে আরেকজন পচাতে গিয়ে বেরিয়ে আসবে তাঁদের অনেক না-জানা মজার কথাও। সবার প্রিয় আরাফাত স্যারকে নিশ্চয়ই আমাদের সবাই জেঁকে ধরবে, ‘ভাইয়া, আপনি আমাদের ফেলে বিদেশে পড়তে যাবেন না, প্লিজ।’ আজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই নেচে উঠবে অন্য রঙে। শুভ জন্মদিন আমাদের প্রিয়তম ক্যাম্পাসকে।
No comments