স্বাগত হিলারি, স্বাগত প্রণব-অবারিত হোক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দ্বার
বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপ্রবণ। আন্তরিক আপ্যায়নে অতিথিকে তৃপ্ত করার ঐতিহ্য এখানে বরাবরই ক্রিয়াশীল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আতিথ্যদানের সুযোগ এখানে খুব কমই ঘটে। সেদিক থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহটিকে অতিথিযোগের শুভ সপ্তাহ বললে বেশি বলা হবে না।
রাজনৈতিক-সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার মধ্যে অতিথিযোগ ঢাকার উষ্ণ বাতাসে স্বস্তির বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করেছে। সরকার তো বটেই, বিরোধী দলও হরতালের মতো কর্মসূচি না দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মাত্র ঢাকা ঘুরে গেলেন জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদা। ২০০০ সালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইয়েশিরো মোরির ঢাকা সফরের পর কোনো পদস্থ জাপানি আর ঢাকা সফর করেননি। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ওকাদার সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বন্ধু ও সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে জাপান আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকুক সেটি সবার প্রত্যাশা। ওকাদার সফরে সে অঙ্গীকারই প্রতিফলিত হলো। তিনি ভবিষ্যতের উন্নয়ন কার্যক্রমে জড়িত থাকার আগ্রহ ব্যক্ত করলেন। বিশেষত পদ্মা সেতু নিয়ে তার নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মেটালে এ ক্ষেত্রে জাপানের বিশেষ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষ হওয়ার পর আজ ঢাকা আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। হিলারি ক্লিনটন এখন এশিয়া সফরে আছেন। চীন ও ভারত সফরের পর ঢাকায় তার আগমনের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এতে স্বীকৃত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জাপানের মতো যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের প্রচুর পণ্য যায়। বাংলাদেশ বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দাবি করে আসছে। আশা করা হচ্ছে, এ বিষয়টি এবারও হিলারির নজরে আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও অনেক চাইবার আছে। বিশেষ করে সহযোগিতামূলক টিকফা চুক্তি। এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের আগে নাগরিক সমাজে প্রস্তুতিমূলক আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে। হিলারির সফরের আগে এমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে জড়িত। সেসব বিষয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পথও খুলে রাখা দরকার। হিলারির সঙ্গে বাংলাদেশ নানাভাবে সম্পর্কিত। আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ এই ব্যক্তির সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গাঢ় হবে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্র নিয়েও হিলারি আগ্রহী। বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ এ বিষয়ে যতটা এগিয়েছে তা অভূতপূর্ব। কিন্তু ভারতের দিক থেকে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশের চাওয়ার তেমন কিছুই আলোর মুখ দেখছে না। আশা করা হচ্ছে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সফরের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে নতুন আশা সঞ্চারিত হবে। ভারতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রণবের সফরের দিকে সবার দৃষ্টি রয়েছে। ছিটমহল বিনিময়, সীমান্ত প্রটোকল, ঋণ চুক্তি, তিস্তার পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট ও সরল হলেও এসব বিষয়ে ভারতীয় বক্তব্য ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। প্রণবের সফরের মধ্য দিয়ে ধোঁয়া কিছুটা কাটলে তাতে উভয় দেশই লাভবান হবে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সফরের মূল লক্ষ্য দেড়শ'তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর সমাপনী অধিবেশনে যোগদান। বাংলাদেশ ও ভারত একই ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার। এই বাস্তবতায় দু'দেশের কোনো দূরত্ব কোনো অজুহাতে কাম্য হতে পারে না। গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিদের আগমনে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দ্বার খুলে যাক এটাই আমাদের কামনা।
No comments