অনির্বাণ রায়-কালো টাকা নিয়ে মুখ লাল

রাজনৈতিক পরিবর্তনের হাওয়া ধাক্কা দিয়েছে পশ্চিম বাংলায়। ৩৪ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট এবারের ছয় দফায় অনুষ্ঠিত বিধান সভার নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মনে হচ্ছে, এবার পরাজয় মেনে নিতে হবে। লাল পতাকার দলের হার নিশ্চিত করতে সারা রাজ্যব্যাপী কঠিন প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।


বিরোধীদলের প্রচারণার সামনে বামফ্রন্ট যেন ঝিমিয়ে পড়েছে এবং মমতা ব্যানার্জির এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যেন তিনি হলেন পশ্চিম বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। দৃঢ়প্রত্যয়ী রেলমন্ত্রী প্রতিদিন ছয় থেকে সাতটি নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিয়ে জনগণকে বলছেন, শাসকদল ব্রামফ্রন্ট হলো গণবিরোধী, তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করুন। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলের বাণিজ্যিক প্রচারের প্রায় সবটুকু সময় কিনে নিয়েছে। এমনকি হটমেইল ক্রিয়েটর সুবির ভাটিয়ার সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে নতুন প্রযুক্তিকে প্রচারে ব্যবহার করছে। অধিকন্তু সারা রাজ্য পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে ছেয়ে ফেলেছে তৃণমূল। বামফ্রন্টের চেয়ে এ ব্যাপারেও তারা অনেক এগিয়ে গেছে। তৃণমূলের এই বেগবান প্রচারের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে মরিয়া হয়ে সিপিআইএম তাদের বিরোধীদলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী ব্যয়ে কালো টাকা ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে সিপিআইএম দরখাস্ত করে অভিযোগ করেছে, পার্টির নেত্রী বৈধ ক্ষমতার ব্যবহার করে সূত্রহীন অর্থ নির্বাচনে ব্যয় করছেন। বামফ্রন্ট অভিযোগ করেছে, কালো টাকার স্রোতে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হচ্ছে।
সিপিআইএম সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে বলেছে, ২৫ মার্চ তৃণমূল ২২৬ জন প্রার্থীর প্রত্যেককে ১৫ লাখ রুপি দিয়েছে, যার মোট অঙ্ক ৩৪ কোটি রুপি। অভিযোগে বলা হয়েছে, কোথা থেকে টাকা এল তার উৎস, গোপন রাখার মতো অবৈধ পন্থা তারা ব্যবহার করেছে। তৃণমূল ১০০, ২০০ এবং ৫০০ রুপির কুপন ছেড়েছে তিন ক্যাটাগরিতে।
খারদাহা থেকে তৃণমূলের প্রার্থী অমিত মিত্রের ব্যাংক লেনদেনের কথা প্রকাশ করেছে সিপিআইএম। ব্যাংক হিসাব থেকে দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্টে ২৬ তারিখে সাত লাখ রুপি জমা পড়েছে। মিত্র হলেন এফআইসিসিআই'র (ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এবং তিনি বর্তমান রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের প্রতিদ্বন্দ্বী।
তৃণমূলের প্রচুর টাকার সমাগম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী এবং এই দলের ছয়জন কনিষ্ঠ মন্ত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজ, আরবান অ্যাফেয়ার্স, রুরাল ডেভেলপমেন্ট এবং ট্যুরিজমও রয়েছে। সুতরাং অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই তৃণমূলের নির্বাচনে টাকা ঢালতে আগ্রহী। একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণদল জরিপে দেখিয়েছে, তৃণমূল দলের এমএলএ'র (মেম্বার অব লোয়ার অ্যাসেম্বলি) সম্পদের পরিমাণ ২০০৬ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ১৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন রাজ্যে এক কোটি কালো রুপি জব্দ করেছে। কালো রুপির বিষয়টি সামনে চলে আসে গত ২৮ মার্চ দিলি্লতে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃণমূলের রাজ্যসভা এমপি কানোয়ার দীপ সিংয়ের সঙ্গে থাকা নগদ ৫৭ লাখ রুপির ঘটনাটি বের হয়ে আসার পর। যদিও শিল্পপতি-রাজনীতিবিদ দীপ সিংকে গুয়াহাটিতে টাকাসমেত যেতে দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর এ বিষয়টি ৪ ও ১১ এপ্রিল আসামের দু দফার নির্বাচনে বিতর্কের ঝড় তোলে। উল্লেখ্য, তৃণমূল আসামের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
নির্বাচন কমিশন সেন্টাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাঙ্জেকে চিঠি দিয়েছে কানোয়ার দীপ সিংয়ের সঙ্গে করে আসামে নেওয়া টাকা কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা বিস্তারিত জানাতে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি সিপিআইএম'র করা কালো টাকা ব্যয়ের অভিযোগে বিব্রত বোধ করছেন। আর যাই হোক খাড়ি-শাড়ি পরিহিত দিদি নিজেকে সাধারণ প্রান্তিক শ্রেণীর নেত্রী হিসেবে পরিচিত করেছেন। দারিদ্র্য দূর করার জন্য তিনি মা-মাটি-মানুষ স্লোগান নিয়ে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু এবার যে বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিতর্ক করছে, তা নিয়ে বাংলার মানুষ মোটেই সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় শান্তি এবং উন্নয়ন। এখন প্রশ্ন, নতুন সরকার কী পারবে জনগণকে সে নিশ্চয়তা দিতে?
ইন্ডিয়া টুডে থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.