পোশাক শিল্পে সংকোচন ঠেকাতে হবে by আবুল কাসেম হায়দার
বাংলাদেশে রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। রফতানি আয় শুধু কমেইনি তা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে দ্রুতগতিতে ধাবিত হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থ-বছরের ২০০৯-২০১০ জুলাই-আগস্ট দেশের মোট রফতানি আয় এসেছে ২৮০ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
বিগত বছর রফতানি হয়েছে ২৯০ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। পূর্ব বছরের তুলনায় রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, প্রধান প্রধান রফতানি খাতের মধ্যে নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইল, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, চা, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক পণ্য, হস্তশিল্প, সবজি, কাঁচা পাট, প্রভৃতির কোনোটাই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। সব সেক্টরেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
রফতানি আয় যে কোনো দেশে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। রফতানি ছাড়া দেশের উন্নয়ন কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমাদের মতো গরিব দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই একমাত্র উন্নতির চাবিকাঠি। রফতানি আয় বাড়লে এর ধনাত্মক প্রভাব সব সেক্টরেই পড়তে থাকে। আর রফতানি আয় কমতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব সব সেক্টরে, সব সামাজিক খাতে পড়তে থাকে। নেতিবাচক অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা জনবল ছাঁটাই করার মাধ্যমে নিজেদের খরচ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে বেকার হয় শত শত শ্রমিক-কর্মচারী। শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করার পর এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবারে সমাজে পড়তে থাকে। সমাজের কর্মজীবী মানুষ যখন অধিক বেকার হয়, তখন সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হতে থাকে। বর্তমান দেশের এই অবস্থা খুবই উদ্যোগজনক। সবাইকে বিশেষ করে সরকারকে দ্রুত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা কওে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে এখন শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে। আগেও ধারণা করা হয়েছিল বিশ্বমন্দা বাংলাদেশে বিলম্বে আসবে। তাই বিলম্বে আসলেও প্রধান রফতানি খাতগুলোতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন অবশ্যই একটি বড় ধরনের অশনিসঙ্কেত। মন্দার এই ধাক্কা অন্যান্য সেক্টরে আঘাত হানবে। বিশ্বমন্দায় বিশ্বের উন্নতি, উন্নয়নশীলসহ সব দেশে আঘাত হেনেছে। সেই মন্দার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সেক্টরকে আর্থিক সহযোগিতা করেছে। আর্থিক সহযোগীর ফলে ওইসব দেশে আঘাতপ্রাপ্ত খাতগুলো মন্দার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এপ্রিল ’০৯ মাসে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত প্যাকেজ বস্ত্রখাত তথা পোশাক শিল্পখাতকে বাদ দিয়ে কৃষি, বিদ্যুত্ ও রফতানি খাতকে নগদ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে রফতানি খাতের এই প্রণোদনার অর্থ কোনোভাবে উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছেনি। ফলে যে সঙ্কট সেই সঙ্কটে রফতানি খাত রয়ে গেছে। বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় এই খাতের জন্য সরকার কিছুই করতে পারেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে রফতানি আয়ের ৭৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে। জাতীয় ভিত্তিক রফতানি আয় কমার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের বস্ত্রখাত তথা তৈরি পোশাক শিল্পখাত। এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পখাতকে কোনো প্রকার নগদ সহায়তা প্রদান করেনি বা সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়নি। বিগত ঈদুল ফিতরের আগে বিজিএমইর পক্ষ থেকে বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে নগদ সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। তাতে সরকার বেশ উষ্মা প্রকাশ করেছে। সরকারের উষ্মার ভয়ে পরবর্তী সময়ে বিজিএমই নেতৃবৃন্দ নিজেদের অবস্থান থেকে দূরে সরে আসেন। তাতে লাভ হয়নি কারও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পখাত, দেশের অর্থনীতি। ধমক দিয়ে দেশের শিল্পায়ন হয় না। নীতি ও সুকৌশলের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়।
শুধু বিশ্বমন্দার ফলে তৈরি পোশাক শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়। বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অভাবে এই খাতের উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে। সারা দেশে দিনের বেলায় গ্যাসের প্রেসার থাকে না। গ্যাসের প্রেসার না থাকার কারণে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যায় না। তাই উত্পাদন সরাসরি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি অর্ডার কম পাওয়ার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পখাত তথা বস্ত্র খাত ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাংকের সুদ ও চার্জের হার অত্যধিক হওয়ার কারণে দেশের শিল্পায়নের গতি হ্রাস পেয়েছে। একদিকে বিশ্বমন্দা অন্যদিকে ব্যাংকের অত্যধিক সুদের হার তৈরি পোশাকসহ বস্ত্রখাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বিষয়টি খুব যে ভালোভাবে দেখছেন তা নয়। অবিলম্বে ব্যাংকের সুদের হার ৭ শতাংশে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এখন ব্যাংকের সুদের হার ১৩ থেকে ১৮ শতাংশ। দুনিয়ার কোনো দেশে এত বেশি সুদের হার নেই।
বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় নতুন নতুন বাজার তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আবিষ্কার বা সৃষ্টি করতে হবে। আফ্রিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের তৈরি পোশাকের বাজার সৃষ্টির জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। সরকার এরই মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এক মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স রিপোর্ট দেবে তৈরি পোশাক তথা বস্ত্রখাতের জন্য মন্দা মোকাবেলায় কী করা উচিত। এদিকে ডাক্তার আসার আগে রুগী মারা যাওয়ার দশা হয়েছে। সরকার দেখতে দেখতে এই খাতের প্রাণনাশের উপক্রম শুরু হয়ে গেছে।
আমরা সব কাজ করি শেষে। শেষে করতে গিয়ে উন্নয়ন সব সময় বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্বমন্দার শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। বিশ্বমন্দার প্রভাব আমাদের দেশে শুরু হয়েছে দুই বছর থেকে। সরকার বা আমরা অনুভব করছি চার বছর পর। সমাধানের কাজ শুরু হবে ৫ বছর পর। তখন সব শেষ করে সমাধানের মধ্য দিয়ে লাভ হবে অনেক অনেক কম। এক্ষণি জরুরি ভিত্তিতে যা করা দরকার তা হচ্ছে :
১. বস্ত্রখাতে তথা তৈরি পোশাক শিল্পে অবিলম্বে ২৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা চালু করা।
২. অবিলম্বে শিল্পখাতের জন্য বিশেষ করে বস্ত্রখাতের জন্য ব্যাংক সুদের হার ৭ শতাংশ করা।
৩. তৈরি পোশাক শিল্পে বিশেষ করে বস্ত্র খাতের সব উপখাতে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করা।
৪. উত্পাদন ও কর্মময় ঘণ্টা বৃদ্ধির জন্য সাপ্তাহিক ছুটি অবিলম্বে একদিন করা।
৫. অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস, বিদ্যুতের চাহিদা মোতাবেক উত্পাদন নিশ্চিত করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও ঘোষণা করতে হবে। যাতে বিনিয়োকারীগণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হলে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। দেশে কোনোক্রমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করা যাবে না। সরকার ও বিরোধীদল উভয়কে সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই
রফতানি আয় যে কোনো দেশে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। রফতানি ছাড়া দেশের উন্নয়ন কোনোভাবে সম্ভব নয়। আমাদের মতো গরিব দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই একমাত্র উন্নতির চাবিকাঠি। রফতানি আয় বাড়লে এর ধনাত্মক প্রভাব সব সেক্টরেই পড়তে থাকে। আর রফতানি আয় কমতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব সব সেক্টরে, সব সামাজিক খাতে পড়তে থাকে। নেতিবাচক অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা জনবল ছাঁটাই করার মাধ্যমে নিজেদের খরচ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলে বেকার হয় শত শত শ্রমিক-কর্মচারী। শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করার পর এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবারে সমাজে পড়তে থাকে। সমাজের কর্মজীবী মানুষ যখন অধিক বেকার হয়, তখন সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হতে থাকে। বর্তমান দেশের এই অবস্থা খুবই উদ্যোগজনক। সবাইকে বিশেষ করে সরকারকে দ্রুত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা কওে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে এখন শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে। আগেও ধারণা করা হয়েছিল বিশ্বমন্দা বাংলাদেশে বিলম্বে আসবে। তাই বিলম্বে আসলেও প্রধান রফতানি খাতগুলোতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন অবশ্যই একটি বড় ধরনের অশনিসঙ্কেত। মন্দার এই ধাক্কা অন্যান্য সেক্টরে আঘাত হানবে। বিশ্বমন্দায় বিশ্বের উন্নতি, উন্নয়নশীলসহ সব দেশে আঘাত হেনেছে। সেই মন্দার আঘাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সেক্টরকে আর্থিক সহযোগিতা করেছে। আর্থিক সহযোগীর ফলে ওইসব দেশে আঘাতপ্রাপ্ত খাতগুলো মন্দার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এপ্রিল ’০৯ মাসে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত প্যাকেজ বস্ত্রখাত তথা পোশাক শিল্পখাতকে বাদ দিয়ে কৃষি, বিদ্যুত্ ও রফতানি খাতকে নগদ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে রফতানি খাতের এই প্রণোদনার অর্থ কোনোভাবে উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছেনি। ফলে যে সঙ্কট সেই সঙ্কটে রফতানি খাত রয়ে গেছে। বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় এই খাতের জন্য সরকার কিছুই করতে পারেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে রফতানি আয়ের ৭৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে। জাতীয় ভিত্তিক রফতানি আয় কমার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের বস্ত্রখাত তথা তৈরি পোশাক শিল্পখাত। এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পখাতকে কোনো প্রকার নগদ সহায়তা প্রদান করেনি বা সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়নি। বিগত ঈদুল ফিতরের আগে বিজিএমইর পক্ষ থেকে বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে নগদ সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। তাতে সরকার বেশ উষ্মা প্রকাশ করেছে। সরকারের উষ্মার ভয়ে পরবর্তী সময়ে বিজিএমই নেতৃবৃন্দ নিজেদের অবস্থান থেকে দূরে সরে আসেন। তাতে লাভ হয়নি কারও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পখাত, দেশের অর্থনীতি। ধমক দিয়ে দেশের শিল্পায়ন হয় না। নীতি ও সুকৌশলের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়।
শুধু বিশ্বমন্দার ফলে তৈরি পোশাক শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়। বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অভাবে এই খাতের উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে। সারা দেশে দিনের বেলায় গ্যাসের প্রেসার থাকে না। গ্যাসের প্রেসার না থাকার কারণে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যায় না। তাই উত্পাদন সরাসরি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি অর্ডার কম পাওয়ার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পখাত তথা বস্ত্র খাত ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাংকের সুদ ও চার্জের হার অত্যধিক হওয়ার কারণে দেশের শিল্পায়নের গতি হ্রাস পেয়েছে। একদিকে বিশ্বমন্দা অন্যদিকে ব্যাংকের অত্যধিক সুদের হার তৈরি পোশাকসহ বস্ত্রখাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বিষয়টি খুব যে ভালোভাবে দেখছেন তা নয়। অবিলম্বে ব্যাংকের সুদের হার ৭ শতাংশে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এখন ব্যাংকের সুদের হার ১৩ থেকে ১৮ শতাংশ। দুনিয়ার কোনো দেশে এত বেশি সুদের হার নেই।
বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় নতুন নতুন বাজার তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আবিষ্কার বা সৃষ্টি করতে হবে। আফ্রিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের তৈরি পোশাকের বাজার সৃষ্টির জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। সরকার এরই মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এক মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স রিপোর্ট দেবে তৈরি পোশাক তথা বস্ত্রখাতের জন্য মন্দা মোকাবেলায় কী করা উচিত। এদিকে ডাক্তার আসার আগে রুগী মারা যাওয়ার দশা হয়েছে। সরকার দেখতে দেখতে এই খাতের প্রাণনাশের উপক্রম শুরু হয়ে গেছে।
আমরা সব কাজ করি শেষে। শেষে করতে গিয়ে উন্নয়ন সব সময় বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্বমন্দার শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। বিশ্বমন্দার প্রভাব আমাদের দেশে শুরু হয়েছে দুই বছর থেকে। সরকার বা আমরা অনুভব করছি চার বছর পর। সমাধানের কাজ শুরু হবে ৫ বছর পর। তখন সব শেষ করে সমাধানের মধ্য দিয়ে লাভ হবে অনেক অনেক কম। এক্ষণি জরুরি ভিত্তিতে যা করা দরকার তা হচ্ছে :
১. বস্ত্রখাতে তথা তৈরি পোশাক শিল্পে অবিলম্বে ২৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা চালু করা।
২. অবিলম্বে শিল্পখাতের জন্য বিশেষ করে বস্ত্রখাতের জন্য ব্যাংক সুদের হার ৭ শতাংশ করা।
৩. তৈরি পোশাক শিল্পে বিশেষ করে বস্ত্র খাতের সব উপখাতে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করা।
৪. উত্পাদন ও কর্মময় ঘণ্টা বৃদ্ধির জন্য সাপ্তাহিক ছুটি অবিলম্বে একদিন করা।
৫. অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস, বিদ্যুতের চাহিদা মোতাবেক উত্পাদন নিশ্চিত করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও ঘোষণা করতে হবে। যাতে বিনিয়োকারীগণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হলে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। দেশে কোনোক্রমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করা যাবে না। সরকার ও বিরোধীদল উভয়কে সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই
No comments