গণিত উৎসব-গণিত হোক ভালোবাসার

হর সিলেট তখনো জেগে ওঠেনি। কিন্তু ঠিকই জেগে উঠেছিল খুদে গণিতবিদেরা। তাদের সবার গন্তব্য নগরের ব্লু-বার্ড স্কুল। গতকাল শনিবার এই স্কুলে বসেছিল ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’—এই স্লোগান নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব-২০১২-এর সিলেট অঞ্চলের পর্ব। আর এই উৎসব ঘিরে ছিল খুদে গণিতবিদদের মিলনমেলা। সকাল আটটা থেকেই ব্লু-বার্ডে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।


সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ১৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৮২ জন শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়। এতে ৫৯ জন শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়। বিজয়ীরা আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় উৎসবে যোগ দেবে।
দিনব্যাপী আয়োজিত উৎসবের মধ্যে ছিল উদ্বোধনী পর্ব, মূল আয়োজন গণিত অলিম্পিয়াড (প্রতিযোগিতা), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রশ্নোত্তর পর্ব, রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানস্থলে গণিত ও বিজ্ঞানের বই নিয়ে মেলাও বসেছিল। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করেছে।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ পর্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুসনে আরা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক সিলেটের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবীর।
এরপর বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তৃতায় অধ্যক্ষ বলেন, ‘সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসবের কারণে এখন শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে গণিতভীতি কেটে যাচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখন গণিতকে ভয় পায় না, বরং ভালোবাসে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত হয়ে ২০টি কক্ষে গিয়ে সোয়া এক ঘণ্টার গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা দেশের গানের পাশাপাশি প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজাসহ সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন লোককবিদের গান, কৌতুক ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। পরিবেশনায় অংশ নেয় শিক্ষার্থী ফারিয়া মেহজাবিন, সালোয়া মেহেরিন, লিসান, রিমা, পিয়া দাশ পুরকায়স্থ, এমিশা দাশ রায়, অর্চি, আনোআরুস সোবহান প্রমুখ। এ ছাড়া বন্ধুসভার সদস্যরা জাতীয় সংগীত, গণিত উৎসবের সংগীত ও গণিত জয়ের গান পরিবেশন করে।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে শুরু হয় আকর্ষণীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। ‘শূন্য কেন গোল?’, ‘জ্যামিতি আবিষ্কারের কারণ কী?’, ‘আমরা বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের নাম লিখতে পারি, কিন্তু অঙ্কে পারি না কেন?’, ‘হাতে একটা চুড়ি রাখলে সেটার কেন্দ্র কোথায় হবে?’—এ রকম অসংখ্য মজার ও বিচিত্র সব প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা পুরস্কার হিসেবে বই জিতে নেয়।
শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন গণিতবিদ মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার, রসায়ন বিভাগের প্রধান সাইফুল ইসলাম, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তরুণ কুমার শীল, পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। ফাঁকে ফাঁকে খুদে গণিতবিদেরা দুই হাত উঁচিয়ে ‘মিথ্যা’, ‘মাদক’ ও ‘না বুঝে মুখস্থ’কে না বলে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে রুবিক্স কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন ও ধ্রুবময় দাশগুপ্ত যথাক্রমে প্রথম ও রানার আপ হয়।
বেলা আড়াইটায় সমাপনী পর্বে গণিতবিদ মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে রাখতে হবে। জীবনের প্রতিটি দিন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে গেলে যেকোনো সাফল্য অর্জন সম্ভব। গণিতকে যেমন ভালোবাসতে হবে, তেমনি এই দেশকেও গভীরভাবে ভালোবাসতে হবে।’
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর তামিম শাহরিয়ার।

No comments

Powered by Blogger.