না’গঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ইতিকথা
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায়
বাঙালীর সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনার। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালী চিনেছে নিজেকে, খুঁজে পেয়েছে
আত্মপরিচয়।
এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ সংগ্রামের
সিঁড়ি বেয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার জন্ম নিতে ভাষা আন্দোলনের পর কেটেছে ৩৩ বছর। পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে
কেটেছে আরও ২১ বছর। ভাষা আন্দোলনের ৫৪ বছর পর বাধা বিঘœ প্রতিবন্ধকতা
পেরিয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ধারণ
করেছে আজকের রূপ।
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ও ভাষাসৈনিক বরিশালের মোশারফ হোসেন নান্নু ‘ধ্রুবতারা’ নামে এক ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রে ১৯৯৯ সালের জুলাই সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ১৯৪৮ সালে তমুদ্দিন মজলিসে প্রফেসর আবুল কাশেমই প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রবক্তা ঠিকই, তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে এটাকে সামনে নিয়ে এসেছেন; কিন্তু এর আগে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার ওপারে একটি প্রেস ছিল। বিজলী প্রেস। সে সময় বিজলী প্রেস থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় প্রবন্ধ বেরোয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা কেন?’ প্রবন্ধটি অসমাপ্ত ছিল এর পরবর্তী দুই সংখ্যায় এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মুসলিম লীগ সরকার প্রেসটি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। নারায়ণগঞ্জ এই ছোট্ট প্রেসের ছোট্ট কাগজই যে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে প্রথম পুস্তিকা এতে সন্দেহ নেই।’ যে পত্রিকাটির কথা বলেছেন মোশারফ হোসেন নান্নু, তার নাম কৃষ্টি। সাতচল্লিশের এই পত্রিকা থেকে শুরু করে বায়ান্নের ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সময় পর্যন্ত ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সর্বজন বিদিত। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৩৩ বছর পর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে কোন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছিল নাÑ এই বেদনা তাড়িত করত এই শহরের প্রগতিশীল মানুষকে।
১৯৮১ সালের পহেলা বৈশাখ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে জন্ম নেয় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। ১৯৮৩ সালের ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি তোলে। ১৯৮৪ সালে একুশের অনুষ্ঠানেও একই দাবি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ তৎকালীন জেলা প্রশাসক আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তারা শহরের চাষাঢ়া মোড়ে গড়ে ওঠা নার্সারীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানান। শহরের কিছু ব্যক্তি এর বিরোধিতা করলেও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা জায়গাটি খালি করে দেয়ার জন্য উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডকে কয়েকটি চিঠি দেয়। কিন্তু তারপরও নার্সারিটি সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট তাদের দাবিতে অনড় থাকে। ১৯৮৪ সালের বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী ও সদস্য সচিব রফিউর রাব্বির নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট জেলা প্রশাসক ও পৌরসভা চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি প্রদান করে। ১৯৮৫ সালের ২৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কাশেম হুমায়ূন এবং সদস্য সচিব রফিউর রাব্বির নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ০৫ ফেব্রুয়ারি চাষাঢ়া মোড়ের সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য নির্ধারিত স্থান লেখা একটি সাইনবোর্ড স্থাপনের জোর দাবি জানানো হয়। এ ব্যাপারে আশ্বাস দেন পৌর চেয়ারম্যান। কিন্তু ০৫ ফেব্রুয়ারি এই সাইনবোর্ড লাগানো সম্ভব হয়নি। ১০ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের লোকজনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সভা আহ্বান করে। ভাষাসৈনিক শফি হোসেন খান এই সভার সভাপতিত্ব করেন। সভার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রগতিশীল রাজনৈতিক, ছাত্র-যুবক, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, শিক্ষক সংগঠন নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি সেখানে ‘শহীদ মিনারের নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য উদ্যান কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়। সেই সন্ধ্যাতেই জায়গাটি ছেড়ে দেয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পৌর পাঠাগারের সামনে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সর্বস্তরের লোকজন মিছিল সহকারে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানোÑ গানটি গাইতে গাইতে চাষাঢ়া যায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভাষাসৈনিক এ কে এম শামসুজ্জোহা ও শফি হোসেন খান। দুপুরে শহীদ মিনারের সমর্থনে তোলারাম কলেজের তৎকালীন ভিপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে ছাত্রদের একটি মিছিল চাষাঢ়া গোল চত্বরে অবস্থান নেয়। সারাদিনে একটি কাঠামো তৈরি করা হয়। দুই দিকে কালো ও মাঝখানে লাল রঙ লাগিয়ে দেয়া হয়। রাতে গুজব রটে কে বা কারা শহীদ মিনার ভেঙে ফেলতে পারে। সংস্কৃতি কর্মীরা রাত জেগে পাহারা বসায়।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট পৌরসভার কাছে শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু ১৯৮৮ সাল থেকে পৌরসভা ছিল জন- প্রতিনিধিবিহীন। তাই উপেক্ষিত থাকে এই দাবি। ২০০৩ সালে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার কাছে একই দাবি জানানো হয়। তিনি উদ্যোগ নেন শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ করার। নতুন করে ডিজাইন করা হয়। ২০০৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। তৎকালীন পৌর মেয়র ও বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর এই আন্তরিক উদ্যোগ প্রশংসিত হয় সর্বমহলে।
তথ্যসূত্র : রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ইতিকথা, ভবানী শংকর রায় সম্পাদিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ২৫ বছর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০। Ñরুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ও ভাষাসৈনিক বরিশালের মোশারফ হোসেন নান্নু ‘ধ্রুবতারা’ নামে এক ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রে ১৯৯৯ সালের জুলাই সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ১৯৪৮ সালে তমুদ্দিন মজলিসে প্রফেসর আবুল কাশেমই প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রবক্তা ঠিকই, তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে এটাকে সামনে নিয়ে এসেছেন; কিন্তু এর আগে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার ওপারে একটি প্রেস ছিল। বিজলী প্রেস। সে সময় বিজলী প্রেস থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় প্রবন্ধ বেরোয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা কেন?’ প্রবন্ধটি অসমাপ্ত ছিল এর পরবর্তী দুই সংখ্যায় এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মুসলিম লীগ সরকার প্রেসটি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। নারায়ণগঞ্জ এই ছোট্ট প্রেসের ছোট্ট কাগজই যে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে প্রথম পুস্তিকা এতে সন্দেহ নেই।’ যে পত্রিকাটির কথা বলেছেন মোশারফ হোসেন নান্নু, তার নাম কৃষ্টি। সাতচল্লিশের এই পত্রিকা থেকে শুরু করে বায়ান্নের ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সময় পর্যন্ত ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সর্বজন বিদিত। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৩৩ বছর পর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে কোন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছিল নাÑ এই বেদনা তাড়িত করত এই শহরের প্রগতিশীল মানুষকে।
১৯৮১ সালের পহেলা বৈশাখ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে জন্ম নেয় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। ১৯৮৩ সালের ১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি তোলে। ১৯৮৪ সালে একুশের অনুষ্ঠানেও একই দাবি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ তৎকালীন জেলা প্রশাসক আহমদ মাহমুদুর রাজা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তারা শহরের চাষাঢ়া মোড়ে গড়ে ওঠা নার্সারীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানান। শহরের কিছু ব্যক্তি এর বিরোধিতা করলেও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা জায়গাটি খালি করে দেয়ার জন্য উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডকে কয়েকটি চিঠি দেয়। কিন্তু তারপরও নার্সারিটি সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট তাদের দাবিতে অনড় থাকে। ১৯৮৪ সালের বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বুলবুল চৌধুরী ও সদস্য সচিব রফিউর রাব্বির নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট জেলা প্রশাসক ও পৌরসভা চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি প্রদান করে। ১৯৮৫ সালের ২৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কাশেম হুমায়ূন এবং সদস্য সচিব রফিউর রাব্বির নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ০৫ ফেব্রুয়ারি চাষাঢ়া মোড়ের সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য নির্ধারিত স্থান লেখা একটি সাইনবোর্ড স্থাপনের জোর দাবি জানানো হয়। এ ব্যাপারে আশ্বাস দেন পৌর চেয়ারম্যান। কিন্তু ০৫ ফেব্রুয়ারি এই সাইনবোর্ড লাগানো সম্ভব হয়নি। ১০ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের লোকজনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সভা আহ্বান করে। ভাষাসৈনিক শফি হোসেন খান এই সভার সভাপতিত্ব করেন। সভার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রগতিশীল রাজনৈতিক, ছাত্র-যুবক, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, শিক্ষক সংগঠন নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি সেখানে ‘শহীদ মিনারের নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য উদ্যান কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়। সেই সন্ধ্যাতেই জায়গাটি ছেড়ে দেয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পৌর পাঠাগারের সামনে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সর্বস্তরের লোকজন মিছিল সহকারে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানোÑ গানটি গাইতে গাইতে চাষাঢ়া যায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভাষাসৈনিক এ কে এম শামসুজ্জোহা ও শফি হোসেন খান। দুপুরে শহীদ মিনারের সমর্থনে তোলারাম কলেজের তৎকালীন ভিপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে ছাত্রদের একটি মিছিল চাষাঢ়া গোল চত্বরে অবস্থান নেয়। সারাদিনে একটি কাঠামো তৈরি করা হয়। দুই দিকে কালো ও মাঝখানে লাল রঙ লাগিয়ে দেয়া হয়। রাতে গুজব রটে কে বা কারা শহীদ মিনার ভেঙে ফেলতে পারে। সংস্কৃতি কর্মীরা রাত জেগে পাহারা বসায়।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট পৌরসভার কাছে শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু ১৯৮৮ সাল থেকে পৌরসভা ছিল জন- প্রতিনিধিবিহীন। তাই উপেক্ষিত থাকে এই দাবি। ২০০৩ সালে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার কাছে একই দাবি জানানো হয়। তিনি উদ্যোগ নেন শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ করার। নতুন করে ডিজাইন করা হয়। ২০০৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। তৎকালীন পৌর মেয়র ও বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর এই আন্তরিক উদ্যোগ প্রশংসিত হয় সর্বমহলে।
তথ্যসূত্র : রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ইতিকথা, ভবানী শংকর রায় সম্পাদিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ২৫ বছর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০। Ñরুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ
No comments