সাজিয়া তো চলেই গেল, বিচার হবে তো? by তৌহিদা শিরোপা
ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেলেও নিজের জীবন রক্ষা করতে পারেননি চিকিৎসক সাজিয়া আফরিন। অপরাধী ধরা পড়েছে। বিচার হবে তো? কী ভেবেছিল মেয়েটা মারা যাওয়ার আগমুহূর্তে? মাকে কি ডেকেছিল? নিশ্চয় অনেক ভয় পেয়েছিল—এমন অনেক কথা এখন সাজিয়ার মায়ের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার দক্ষিণখানের ব্র্যাক ক্লিনিকে ওই ক্লিনিকের ওয়ার্ডবয় ফয়সাল সাজিয়া আফরিনকে খুন করেন। নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে।
সাজিয়া ও নাদিয়া দুই বোন। মনিরুল ইসলামের দুই পায়রা। হায়েনার ছোবলে একটি পায়রা মারা গেল। শূন্য খাঁচার মতো ঢাকার কাওলার সাজিয়াদের বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা। এই ভাড়া বাড়িটিতে তাঁরা উঠেছেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। মেধাবী চিকিৎসক মেয়ের একটা নিজের ঘর লাগে। তাই একটু বড় দেখে এই বাড়িভাড়া নেন। আজ সব আছে, শুধু মেয়েটি নেই। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে গাইনিতে এফসিপিএস প্রথম পর্ব শেষ করেন। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সাম্মানিক (অনারারি) প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ঢাকার দক্ষিণখানের ব্র্যাক ক্লিনিকে তাঁর কাজের বয়সসীমা মাত্র নয় দিন। চাকরি করলে পড়াশোনায় অসুবিধা হয়। তাই মা-বাবাকেও বলেছিলেন কাজটা ছেড়ে দেবেন। ২৯ নভেম্বর সকালে মাকে বলেন, আজই এখানে শেষ কাজ। তখন কি জানতেন চাকরির শেষ দিন মেয়ের জীবনের শেষ দিন হয়ে যাবে? তাহলে কি সাজিয়া আগে থেকে বুঝতে পেরেছিলেন? কেউ কি বিরক্ত করত তাঁকে? মা-বাবা দুজনই একসঙ্গে ‘না’ বললেন। সাজিয়ার বাবা মনিরুল বলেন, ‘কেউ বিরক্ত করলে আমাকে না বললেও ওর মা বা ছোট বোনকে বলত।’
সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর ছোট বোনের সঙ্গে কেনাকাটা করতে যান। সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে মাকে বলেন, এখনই বের হতে হবে, নাইট ডিউটি আছে। মা দৌড়ে যান রান্নাঘরে ভাত রান্না করতে। গিয়ে দেখেন গ্যাস নেই। তখন ছোট বোন কমলার খোসা ছাড়িয়ে বোনকে খেতে দেয়। মা-বাবা বলেন, যাওয়ার সময় হোটেল থেকে রাতের খাবার যেন কিনে নিয়ে যান। মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে বের হয়ে যান সাজিয়া। রাত নয়টার দিকে মনিরুল ইসলাম ফোন করেন মেয়ে খাবার কিনেছে কি না। মেয়ে জানান রুটি-ভাজি কিনে নিয়েছে। বাবা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নিস।’ সেটাই ছিল সাজিয়ার সঙ্গে তাঁর বাবার শেষ কথা।
অপরাধী ফয়সালের দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী, রাত ১২টা ২০ মিনিটে সাজিয়ার ঘরে ধাক্কা দেন তিনি। জোর করে ঘরে ঢুকে পড়েন। ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন সাজিয়াকে। এরপর নিজেকে বাঁচাতে সাজিয়া চিৎকার করতে থাকেন। সাজিয়ার মুখ চেপে ধরেন ফয়সাল। একপর্যায়ে শ্বাস রোধ করে সাজিয়াকে মেরে ফেলেন। পরদিন সকাল সাতটার দিকে সাজিয়ার বাবার কাছে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ইব্রাহীম হোসেন ফোন করেন। তখনো তাঁরা জানতেন না তাঁদের মেয়ে নেই। ক্লিনিকের তিনতলায় সাজিয়ার কেবিনে গিয়ে দেখেন তাঁর নিথর দেহ পড়ে আছে। ‘সবাই তো মরে যায়, কিন্তু এভাবে কেন মরতে হলো আমাদের মেয়েকে?’ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সাজিয়া আফরিনের মা-বাবা।
মনিরুল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তা। বদলির চাকরি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। যখন তিনি সিলেট থেকে বদলি হলেন, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন দুই মেয়েকে নিয়ে আর টানাটানি নয়। পড়ালেখার ক্ষতি হয়। তাঁরা মায়ের সঙ্গে সিলেটেই থাকুক। ছুটি পেলেই মনিরুল ইসলাম ছুটে যান দুই কন্যার কাছে। বড় মেয়েটা বেশি মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো করে ভর্তি হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। পরে মাইগ্রেশন করে চলে যান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। মেয়েদের কখনো কোনো সমস্যা বুঝতে দেননি সাজিয়ার মা। একাই সব করেছেন। ‘আমরা সিলেটে থাকি বলে ও চলে এল। নিজের মেয়ে বলে বলছি না। একদম অন্য রকম আমাদের মেয়ে। চুপচাপ, ধার্মিক। নিজের মতো করে থাকত। কোনো আবদার ছিল না। সব সময় ভালো ফল করেছে। এই মেয়েকে নিয়ে খুব গর্ব ছিল আমার। যেদিন মেয়েটি এমবিবিএস শেষ করে, সেদিন মনে হয়েছে, আমার মেয়ে দেশের সম্পদ।’ গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হলো না সাজিয়ার। ‘এমন মেয়েকে এ রকম নির্মমভাবে কেন যেতে হলো?’ কাঁদতে কাঁদতে যখন সাজিয়ার মা প্রশ্ন করেন, উত্তর মেলে না। বাবার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। সাজিয়ার ঘরে ঢুকে তাঁর বাবা কিছু বই নিয়ে আসেন। ‘দেখেন, আমার মেয়ের এফসিপিএস দ্বিতীয় পার্টের বই। নিজ হাতে বাঁধিয়ে দিয়েছি। যাতে একটা একটা করে বই নিয়ে পড়তে পারে।’
সাজিয়ার মনটা উদার ছিল। কারও কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারতেন না। একবার নিজের মাটির ব্যাংক ভেঙে লিভার সিরোসিসের এক রোগীকে টাকা দিয়েছিলেন। মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কত স্বপ্ন ছিল। মা তো বলেই দিয়েছিলেন, শোন, বড় চিকিৎসক হলেও গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিবি না। কিন্তু বাবা তো মনের কথাটা বলতে পারেননি। ভেবেছিলেন, মেয়ের এফসিপিএস শেষ হলে বলবেন পুলিশের কোনো পরিবার ও তাঁদের গ্রামের কোনো মানুষ চিকিৎসার জন্য এলে যেন টাকা না নেন। বাবার মনের কথা মনেই রয়ে গেল।
সাজিয়ার সহকর্মী চিকিৎসক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি এমন হতে পারে। ক্লিনিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এমনটা হলো। এই ক্লিনিকে চারজন নারী চিকিৎসক আর আমি একা পুরুষ চিকিৎসক। ফলে তাঁদের নিরাপত্তার কথা আগে ভাবে ব্র্যাক। তবুও কীভাবে যে ঘটনাটা ঘটল। তবে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাজিয়া আপুর পরিবারকে যথাযথ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
সাজিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র এখনো দাখিল হয়নি। সাজিয়ার পরিবার চায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যেন ফয়সালের বিচার হয়। ফয়সাল বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। সবকিছু একসময় হয়তো আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু সাজিয়ার মা-বাবার মনের ক্ষত কি শুকাবে? চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের প্রথম চিকিৎসক মেয়েটিকে নিয়ে তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেল।
সাজিয়ার মা-বাবার আক্ষেপ, ‘সাজিয়া মারা যাওয়ার পর কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশন থেকে কেউ আসেননি। আপনারাই প্রথম এসেছেন। টেলিফোনে কেউ কেউ কেউ কথা বলেছেন। কিন্তু পাশের দেশ ভারতে ধর্ষণের শিকার মেয়েটার জন্য সারা দেশে কত আন্দোলন-প্রতিবাদ হলো। আমার মেয়েটা জীবন দিয়ে নিজের সম্মান রক্ষা করেছে। অথচ তার জন্য কিছুই হলো না। প্রতিবাদ ও বিচার হলে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না।’
সন্তানহারা এই মা-বাবাকে কোনো সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাইনি। কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে বিচার তো চাইতেই পারি। দামিনীর জন্য সারা ভারতের মানুষ একত্র হয়ে আন্দোলন করেছে। আমরাও তো সাজিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে পারি। যদি সবাই এক হয়ে আন্দোলন করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ১০টি মেয়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
সাজিয়া ও নাদিয়া দুই বোন। মনিরুল ইসলামের দুই পায়রা। হায়েনার ছোবলে একটি পায়রা মারা গেল। শূন্য খাঁচার মতো ঢাকার কাওলার সাজিয়াদের বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা। এই ভাড়া বাড়িটিতে তাঁরা উঠেছেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। মেধাবী চিকিৎসক মেয়ের একটা নিজের ঘর লাগে। তাই একটু বড় দেখে এই বাড়িভাড়া নেন। আজ সব আছে, শুধু মেয়েটি নেই। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে গাইনিতে এফসিপিএস প্রথম পর্ব শেষ করেন। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সাম্মানিক (অনারারি) প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ঢাকার দক্ষিণখানের ব্র্যাক ক্লিনিকে তাঁর কাজের বয়সসীমা মাত্র নয় দিন। চাকরি করলে পড়াশোনায় অসুবিধা হয়। তাই মা-বাবাকেও বলেছিলেন কাজটা ছেড়ে দেবেন। ২৯ নভেম্বর সকালে মাকে বলেন, আজই এখানে শেষ কাজ। তখন কি জানতেন চাকরির শেষ দিন মেয়ের জীবনের শেষ দিন হয়ে যাবে? তাহলে কি সাজিয়া আগে থেকে বুঝতে পেরেছিলেন? কেউ কি বিরক্ত করত তাঁকে? মা-বাবা দুজনই একসঙ্গে ‘না’ বললেন। সাজিয়ার বাবা মনিরুল বলেন, ‘কেউ বিরক্ত করলে আমাকে না বললেও ওর মা বা ছোট বোনকে বলত।’
সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর ছোট বোনের সঙ্গে কেনাকাটা করতে যান। সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে মাকে বলেন, এখনই বের হতে হবে, নাইট ডিউটি আছে। মা দৌড়ে যান রান্নাঘরে ভাত রান্না করতে। গিয়ে দেখেন গ্যাস নেই। তখন ছোট বোন কমলার খোসা ছাড়িয়ে বোনকে খেতে দেয়। মা-বাবা বলেন, যাওয়ার সময় হোটেল থেকে রাতের খাবার যেন কিনে নিয়ে যান। মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে বের হয়ে যান সাজিয়া। রাত নয়টার দিকে মনিরুল ইসলাম ফোন করেন মেয়ে খাবার কিনেছে কি না। মেয়ে জানান রুটি-ভাজি কিনে নিয়েছে। বাবা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নিস।’ সেটাই ছিল সাজিয়ার সঙ্গে তাঁর বাবার শেষ কথা।
অপরাধী ফয়সালের দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী, রাত ১২টা ২০ মিনিটে সাজিয়ার ঘরে ধাক্কা দেন তিনি। জোর করে ঘরে ঢুকে পড়েন। ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন সাজিয়াকে। এরপর নিজেকে বাঁচাতে সাজিয়া চিৎকার করতে থাকেন। সাজিয়ার মুখ চেপে ধরেন ফয়সাল। একপর্যায়ে শ্বাস রোধ করে সাজিয়াকে মেরে ফেলেন। পরদিন সকাল সাতটার দিকে সাজিয়ার বাবার কাছে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ইব্রাহীম হোসেন ফোন করেন। তখনো তাঁরা জানতেন না তাঁদের মেয়ে নেই। ক্লিনিকের তিনতলায় সাজিয়ার কেবিনে গিয়ে দেখেন তাঁর নিথর দেহ পড়ে আছে। ‘সবাই তো মরে যায়, কিন্তু এভাবে কেন মরতে হলো আমাদের মেয়েকে?’ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সাজিয়া আফরিনের মা-বাবা।
মনিরুল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তা। বদলির চাকরি। আজ এখানে তো কাল ওখানে। যখন তিনি সিলেট থেকে বদলি হলেন, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন দুই মেয়েকে নিয়ে আর টানাটানি নয়। পড়ালেখার ক্ষতি হয়। তাঁরা মায়ের সঙ্গে সিলেটেই থাকুক। ছুটি পেলেই মনিরুল ইসলাম ছুটে যান দুই কন্যার কাছে। বড় মেয়েটা বেশি মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো করে ভর্তি হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। পরে মাইগ্রেশন করে চলে যান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। মেয়েদের কখনো কোনো সমস্যা বুঝতে দেননি সাজিয়ার মা। একাই সব করেছেন। ‘আমরা সিলেটে থাকি বলে ও চলে এল। নিজের মেয়ে বলে বলছি না। একদম অন্য রকম আমাদের মেয়ে। চুপচাপ, ধার্মিক। নিজের মতো করে থাকত। কোনো আবদার ছিল না। সব সময় ভালো ফল করেছে। এই মেয়েকে নিয়ে খুব গর্ব ছিল আমার। যেদিন মেয়েটি এমবিবিএস শেষ করে, সেদিন মনে হয়েছে, আমার মেয়ে দেশের সম্পদ।’ গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হলো না সাজিয়ার। ‘এমন মেয়েকে এ রকম নির্মমভাবে কেন যেতে হলো?’ কাঁদতে কাঁদতে যখন সাজিয়ার মা প্রশ্ন করেন, উত্তর মেলে না। বাবার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। সাজিয়ার ঘরে ঢুকে তাঁর বাবা কিছু বই নিয়ে আসেন। ‘দেখেন, আমার মেয়ের এফসিপিএস দ্বিতীয় পার্টের বই। নিজ হাতে বাঁধিয়ে দিয়েছি। যাতে একটা একটা করে বই নিয়ে পড়তে পারে।’
সাজিয়ার মনটা উদার ছিল। কারও কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারতেন না। একবার নিজের মাটির ব্যাংক ভেঙে লিভার সিরোসিসের এক রোগীকে টাকা দিয়েছিলেন। মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কত স্বপ্ন ছিল। মা তো বলেই দিয়েছিলেন, শোন, বড় চিকিৎসক হলেও গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিবি না। কিন্তু বাবা তো মনের কথাটা বলতে পারেননি। ভেবেছিলেন, মেয়ের এফসিপিএস শেষ হলে বলবেন পুলিশের কোনো পরিবার ও তাঁদের গ্রামের কোনো মানুষ চিকিৎসার জন্য এলে যেন টাকা না নেন। বাবার মনের কথা মনেই রয়ে গেল।
সাজিয়ার সহকর্মী চিকিৎসক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি এমন হতে পারে। ক্লিনিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এমনটা হলো। এই ক্লিনিকে চারজন নারী চিকিৎসক আর আমি একা পুরুষ চিকিৎসক। ফলে তাঁদের নিরাপত্তার কথা আগে ভাবে ব্র্যাক। তবুও কীভাবে যে ঘটনাটা ঘটল। তবে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাজিয়া আপুর পরিবারকে যথাযথ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
সাজিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র এখনো দাখিল হয়নি। সাজিয়ার পরিবার চায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যেন ফয়সালের বিচার হয়। ফয়সাল বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। সবকিছু একসময় হয়তো আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু সাজিয়ার মা-বাবার মনের ক্ষত কি শুকাবে? চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের প্রথম চিকিৎসক মেয়েটিকে নিয়ে তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেল।
সাজিয়ার মা-বাবার আক্ষেপ, ‘সাজিয়া মারা যাওয়ার পর কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশন থেকে কেউ আসেননি। আপনারাই প্রথম এসেছেন। টেলিফোনে কেউ কেউ কেউ কথা বলেছেন। কিন্তু পাশের দেশ ভারতে ধর্ষণের শিকার মেয়েটার জন্য সারা দেশে কত আন্দোলন-প্রতিবাদ হলো। আমার মেয়েটা জীবন দিয়ে নিজের সম্মান রক্ষা করেছে। অথচ তার জন্য কিছুই হলো না। প্রতিবাদ ও বিচার হলে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না।’
সন্তানহারা এই মা-বাবাকে কোনো সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাইনি। কিন্তু আমরা সবাই এক হয়ে বিচার তো চাইতেই পারি। দামিনীর জন্য সারা ভারতের মানুষ একত্র হয়ে আন্দোলন করেছে। আমরাও তো সাজিয়ার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে পারি। যদি সবাই এক হয়ে আন্দোলন করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ১০টি মেয়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
No comments