বায়ান্ন বাজার ॥ তিপ্পান্ন গলি
নবীন বসন্ত। গাছে গাছে নতুন পাতা ও মুকুল। শিমুল-পলাশের শাখায় শাখায় রঙের আভাস। কোকিলের উদাস করা গান। এ সবের বার্তা নিয়েই প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত।
শীতের নির্জীব, বির্মষ, মলিন, জরাজীর্ণ ও রুক্ষসূক্ষ্মময় ভাবও ধুয়েমুছে দিয়ে গেল মৌসুমের প্রথম ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এরই সঙ্গে ধুয়েমুছে গেল প্রকৃতির সমস্ত ধুলোবালি। ফলে বসনত্মের বর্ণিলতা ধরা দিল আরও সি্নগ্ধ ও শুভ্ররূপে। তবে অনাকাঙ্ৰিত শিলা ৰতি করে গেল ফসলের। কাম্য ছিল বৃষ্টির_ ঝড় ও শিলার নয়। কিন্তু ত্রয়ী এসেছে একত্রে। ফলে ৰতি হয়েছে রোপা, ইরি, বোরো, ইটভাঁটি, সবজি ও আমের মুকুলের। বুধবার শুধু বিকেলেই নয়, রাত ১০টার পর থেকে মাঝ রাত পর্যনত্ম হয়েছে মুষলধারে শিলাবৃষ্টি। যদি এমনটি আরও হয়, তাহলে এ ৰতি কাটিয়ে ওঠা হবে দুষ্কর।এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। তার ওপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে চাল, চিনি, ডাল, তেলের দাম। সরকারের একেক মন্ত্রী একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ আছে, বাজার মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা চলছে, দাম আর বাড়বে না। আবার কেউ বলছেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্ডিকেট আছে, এই সিন্ডিকেটই কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর ভুক্তভোগী ক্রেতাদের বক্তব্য সিন্ডিকেটের কথা তো কয়েক বছর যাবতই শুনে আসছি, তাদের বিরম্নদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। গত ঈদে চিনি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারেরই একটি গোয়েন্দা সংস্থা ৮ চিনি ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করল। কিন্তু বিচারের আওতায় আনার কথা বলেও, তাদের বিচার হলো না। তাহলে কি আমাদের বুঝতে হবে সিন্ডিকেট অনেক বেশি শক্তিশালী, নাকি প্রভাবশালী কারও আশ্রয়েই আছে সিন্ডিকেট? মুক্তিযুদ্ধের পৰের হোক বা বিপৰের হোক কোন সরকারই ধরছে না তাদের টিকিটি। সিন্ডিকেটের এই অদৃশ্য অাঁতাতে মার খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্রেতারা আরও বলেন, চিকন চালের দাম আবার চলে গেছে সেই আগের জায়গায়। সবচেয়ে ভাল মিনিকেট চাল এখন কিনতে হচ্ছে ৪৪/৪৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু এক দেড় মাস আগেও এই চাল বিক্রি হয়েছে ৩০/৩২ টাকা কেজি। দিন এনে দিন খাওয়া গরিবের মোটা চালের দামও বেড়েই চলেছে। চিনির দামও আবার বাড়ছে। নানা কেলেঙ্কারির পর সরকার নির্ধারণ করে দিল খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজি। এই দামে তো কেউই কখনও চিনি কিনতে পারেনি, কিনেছে ৫৫ টাকা কেজি করে। কয়েক মাস এই দামে চিনি বেচাবিক্রি হলেও আবার বেড়ে চলেছে চিনির দাম। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮/৬০ টাকা কেজি দরে। মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০/১২৫ টাকা, ৭০ টাকা কেজির পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫/৯০ টাকা কেজি করে। সাধারণ ফল লেবু, তার দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ৮/১০ টাকা হালির লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০/৩৫ টাকা হালি। কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে আটার দামও। কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে গেছে আটার দাম। আসলেই সাধারণ চাকরিজীবী মানুষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। নানা বাহানায় শুষে নিচ্ছে এদের। এভাবেই যদি সব কিছুর দাম বাড়তে থাকে, আর সরকার যদি কঠোর পদৰেপ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রকারানত্মরে সহায়তা করে_ তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে?
No comments