কাবুলকে 'ন্যাটোর বাইরে ঘনিষ্ঠ মিত্রের' মর্যাদা দিল ওয়াশিংটন

আফগানিস্তানকে ন্যাটো জোটবহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে প্রতিরক্ষা সহায়তা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গতকাল শনিবার আকস্মিক ও সংক্ষিপ্ত সফরে আফগানিস্তানে গিয়ে এ ঘোষণা দেন।


২০১৪ সালে ন্যাটো সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর দেশটি নিরাপত্তার দিক থেকে অরক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তারই প্রেক্ষাপটে এ ঘোষণা দিলেন হিলারি।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে হিলারি বলেন, 'একে আমরা আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ভাবনার একটা জোরদার প্রকাশ হিসেবে দেখছি। আমরা মনে করি, সেনা প্রত্যাহারের পরও এই সম্পর্ক বিশেষভাবে সুবিধাজনক হবে।' তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে ছেড়ে যাবে না। বরং আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি স্থায়ী অংশীদারির সম্পর্ক গড়ে তুলছি আমরা।'
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে এই প্রথম কোনো দেশকে ন্যাটো জোটবহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের স্বীকৃত দিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ২০০৪ সালে পাকিস্তানকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এ সুবিধা ভোগ করে ইসরায়েল, মিসর, জাপান, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
সংবাদ সম্মেলনে হিলারি আরো বলেন, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি 'আদর্শ অবস্থা থেকে বহু দূরে হলেও (আগের তুলনায়) স্থিতিশীল'। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষতাও 'উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত' হয়েছে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্থানীয় বাহিনীর হাতে আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ন্যাটো। বর্তমানে ন্যাটোর এক লাখ ৩০ হাজার সেনা আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। ২০১৪ সালের মধ্যে এদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হবে। শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কিছু সেনা রয়ে যাবে। এর পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি সই করেছে কাবুল।
মূলত জাপানের রাজধানী টোকিওতে দাতাদের একটি সম্মেলনে যাওয়ার পথে আফগানিস্তানে সাড়ে তিন ঘণ্টার একটি বিরতি নেন হিলারি। ৭০ দেশের অংশগ্রহণে এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে আফগান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যেই এই বিরতি নেন তিনি। টোকিও সম্মেলনে কারজাইও যোগ দেবেন এবং বেসামরিক সহায়তা হিসেবে ৪০০ কোটি ডলার চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাবুল ও ইসলামাবাদের স্বার্থেই পথ খুলে দেওয়া হয়েছে
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার গত শুক্রবার বলেছেন, ন্যাটোর সরবরাহ পথ খুলে দেওয়া শুধু পাকিস্তানের স্বার্থই রক্ষা করেনি, আফগানিস্তানের জন্য লাভজনক হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বার্থেই একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের প্রয়োজন। দুই দেশের স্বার্থ একই সূত্রে বাঁধা। তিনি বলেন, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকেও স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, সীমা অতিক্রম করলে তা সহ্য করা হবে না। গত নভেম্বরে মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের ২৪ সেনা নিহত হলে ন্যাটোর রসদবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। দীর্ঘ আলোচনার পর গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র দুঃখ প্রকাশ করার পর ওই পথ খুলে দেওয়া হয়। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, এপিপি।

No comments

Powered by Blogger.