হজযাত্রী পরিবহনে এবারও সক্রিয় বিতর্কিত কাবো by টিপু সুলতান

বাংলাদেশ বিমানের হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আবারও প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিতর্কিত কাবো এয়ারলাইনস। গত বছর বড় ধরনের জালিয়াতির পরও এই নাইজেরীয় কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেনি বিমান, বরং চলতি বছর হজে কাবো থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া করতে প্রভাবশালী একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


বিমান সূত্র জানিয়েছে, এবার বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ধরা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার। তাঁদের অর্ধেক, অর্থাৎ ৬০ হাজার জনকে বহন করবে বাংলাদেশ বিমান। বাকি ৬০ হাজার বহন করবে সৌদি এয়ারলাইনস।
এদিকে বিভিন্ন হজ এজেন্সির আশঙ্কা, বিমান হজযাত্রীদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগাবে। কারণ, এর আগে এত বেশিসংখ্যক হজযাত্রী বিমান পরিবহন করেনি। অন্য বছরের মতো এবার তৃতীয় কোনো বিমান সংস্থাও ঢাকা থেকে হজযাত্রী নেবে না।
হজ এজেন্সির একাধিক মালিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা হজ প্যাকেজ করেন এক মাস সৌদি আরবে অবস্থান করতে হবে হিসেবে। সেভাবে ঘরভাড়া করা হয়, হাজিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। বিমান যদি এক মাসের অধিক সময় লাগায়, তাতে খরচ বেড়ে যাবে।
অবশ্য বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে ৬০ হাজার হজযাত্রী পরিবহনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান। এ জন্য তিনটি সুপরিসর উড়োজাহাজ ভাড়া করা হবে। এর সঙ্গে বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজগুলোও নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি হজযাত্রী পরিবহন করবে।
বিমান সূত্র জানায়, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উড়োজাহাজ ভাড়া করার জন্য ডাকা দরপত্রে ফ্রান্স, স্পেন, আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়াকেন্দ্রিক চারটি উড়োজাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েছে। দরপত্র যাচাই-বাছাই করে দুটি প্রস্তাব আমলে নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে এভিকো এশিয়া প্যাসিফিক ৫৮২ আসনের একটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ উড়োজাহাজ ভাড়ার প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটির প্রতি উড্ডয়ন-ঘণ্টা ভাড়া ১২ হাজার মার্কিন ডলার (নয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা)।
আর এয়ার আটলান্টা আইসল্যান্ডিকের ৫০৫ আসনের একটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ প্রস্তাবও মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় রয়েছে। এটির প্রতি উড্ডয়ন-ঘণ্টা ভাড়া হলো সাড়ে আট হাজার মার্কিন ডলার (ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা)। কিন্তু সমস্যা হলো, বিমান চায় হাজিদের সেবায় বাংলাদেশি কেবিন ক্রু দিতে। কিন্তু এয়ার আটলান্টা তাদের কেবিন ক্রু দিতে চায়।
বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কেবিন ক্রুর বিষয়টি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে এয়ার আটলান্টাকে বাদ দিয়ে শেষ মুহূর্তে সংকট দেখিয়ে কাবো থেকে যাতে উড়োজাহাজ ভাড়া করা যায়, সে জন্য একটি পক্ষ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ছাড়া তৃতীয় উড়োজাহাজ ভাড়ার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি বলে একই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কাবোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ: বিমান সূত্র জানায়, নাইজেরিয়ার কাবোর পক্ষে কয়েক বছর ধরে একটি চক্র সক্রিয়। সারা বছর কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও হজ মৌসুম এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রটি।
২০০৯ সালে কাবো উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়ে জালিয়াতি করে বিমান থেকে চুক্তির অতিরিক্ত বিপুল টাকা নিয়ে যায়। তখন এটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১০ সালে কাবোর ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ ভাড়া করতে রাজি না হওয়ায় তৎকালীন বিমানমন্ত্রী জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দেন সংসদীয় কমিটির একজন সদস্য ও বিমানের চেয়ারম্যান।
এরপর গত বছর আবারও হজ ফ্লাইটের জন্য একটি বোয়িং ৭৪৭ ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দেয় কাবো। দরপত্র প্রাথমিক বাছাইয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ কাবোকে চূড়ান্তও করে। কাবোর প্রস্তাবে বলা হয়, তারা হংকং এভিয়েশন ক্যাপিটাল নামে একটি সংস্থা থেকে উড়োজাহাজ এনে বিমানকে দেবে। ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিপত্রসহ বিমানকে হংকং এভিয়েশনের একটি অনাপত্তি সনদও জমা দেয় কাবো।
কিন্তু বিমানের পক্ষ থেকে হংকং এভিয়েশন ক্যাপিটালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই কোম্পানি জানায়, তাদের সঙ্গে কাবোর কোনো চুক্তি হয়নি। তাদের প্যাড, সিল ও সই জাল করে কাবো বিমানকে জমা দিয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগে গত বছর কাবো বাদ পড়ে। চলতি বছর আবারও কাবোর পক্ষে কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিক তদবির করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে কাবো এয়ারলাইনস এবারও উড়োজাহাজ ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এমডি। তিনি বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রস্তাব এসেছে, যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকেই উড়োজাহাজ আনার চুক্তি হবে।

No comments

Powered by Blogger.