সরকারকে লুলা-ল্যাংড়া বানিয়ে ছেড়ে দেব: খালেদা জিয়া by তানভীর সোহেল ও আলম পলাশ

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘এ সরকারকে আমরা ফেলে দিতে চাই না। তাদের লুলা-ল্যাংড়া করে ছেড়ে দিতে চাই। দেখি তারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কত দূর যেতে পারে।’ গতকাল সোমবার চাঁদপুর স্টেডিয়ামে এক জনসভায় খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।


গত ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে চাঁদপুরে নিহত দুজনের স্মরণে এই জনসভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। ওই দিন নিহত লিমন হোসেন ছৈয়াল ও আবুল হোসেন মৃধার পরিবারের সদস্যরা জনসভার মঞ্চে ছিলেন। খালেদা জিয়া মঞ্চে উঠে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সান্ত্বনা দেন। তিনি প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ করে টাকাও দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গুলি করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের একদিন বিচার হবেই। এখন না হলেও আমরা অবশ্যই বিচার করব।’
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, গত তিন বছরে সরকার জনগণকে কিছু দিতে পারেনি। কেবল লাশ উপহার দিয়েছে। এখন ঘরেও মানুষ নিরাপদ নয়। সম্প্রতি দুজন সাংবাদিক বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এখনো পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। হয়তো তারা কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে ধরবে খুনি হিসেবে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাকি ভালো। তাঁর উচিত ছিল অনেক আগেই পদত্যাগ করা।
খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামীতে অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আপনাদের যদি তত্ত্বাবধায়ক নামটি পছন্দ না হয় তাহলে অন্য যেকোনো নামে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, মেশিনেও ভোট নেওয়া যাবে না। সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, ১২ মার্চের মহাসমাবেশ থেকে যে ঘোষণা দেওয়ার, তা তো আপনারা শুনতে পাবেন। আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠা নয়, শান্তিপূর্ণ জনভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আপনাদের অবস্থান করতে হবে। আমিও থাকব আপনাদের সঙ্গে।’
১২ মার্চ ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশের দিন পাল্টা কোনো কর্মসূচি না দিতে সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকা চল কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
খালেদা দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিনিয়ত না মরে একবার জেগে উঠে প্রতিবাদ করতে হবে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বিএসএফ বলছে, তারা সীমান্তে হত্যা বন্ধ করবে না। সরকারও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বিএসএফ হত্যা বন্ধ না করলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি চাঁদপুরে নিহত ব্যক্তিদের আলোকচিত্র দেখিয়ে বলেন, ‘তারা শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি। এই ছবিতে দেখেন কীভাবে উলঙ্গ করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে উলঙ্গ করে নির্যাতন করেছে, পুলিশও তা-ই করছে। এরা কি বাংলাদেশের পুলিশ? আগে কখনো এ রকম দেখিনি।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মমিনুল হক। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, আব্দুল মঈন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়া গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। বিকেল পৌনে চারটায় তিনি চাঁদপুরে পৌঁছান।
ঢাকা থেকে চাঁদপুরে আসার পথে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সড়কের দুই পাশে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিয়ে এবং তোরণ নির্মাণ করে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। জনসভায় শেষে তিনি আবার ঢাকায় ফিরে যান।

No comments

Powered by Blogger.