বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩১৩ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। বাচ্চু মিয়া, বীর প্রতীক
কুশলী এক সাহসী যোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেন না। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ পিছু হটতে বাধ্য হলেন।
কুশলী এক সাহসী যোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেন না। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ পিছু হটতে বাধ্য হলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র একটি দল পিছু হটল না। তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য ফাঁদ (অ্যামবুশ) রচনা করলেন। এ দলে আছেন বাচ্চু মিয়া। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁদের ফাঁদে এসে হাজির হলো একদল পাকিস্তানি সেনা। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল বাচ্চু মিয়াসহ সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক পাকিস্তানি সেনারা। হতাহত হলো অনেক পাকিস্তানি সেনা। এ ঘটনা মাধবপুরের। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে।
মাধবপুর হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এপ্রিল মাসের শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল অবস্থান নিয়েছিল শাহবাজপুরে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের একটি শক্তিশালী দল অবস্থান নেয় শাহবাজপুর সেতুর অপর প্রান্তে। অপর একটি দল হেলিকপ্টারে প্যারাড্রপিং করে অবস্থান নেয় বাচ্চু মিয়াদের দলের পেছনে। প্রচণ্ড আক্রমণে বাচ্চু মিয়াদের দল শাহবাজপুর ছেড়ে অবস্থান নেয় মাধবপুরে।
তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মতিন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল)। বাচ্চু মিয়ারা মাধবপুর নদ সামনে রেখে বিস্তৃত এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তাঁদের এই অবস্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গি বিমান ও আর্টিলারির সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটে যান। কিন্তু বাচ্চু মিয়াসহ ১০-১২ জন চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজ অবস্থানে থেকে যান। তাঁদের কাছে উন্নত অস্ত্র বলতে ছিল চারটি এলএমজি। বাকি সব রাইফেল। তাই নিয়ে তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য ফাঁদ রচনা করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল কোথাও বাধা না পেয়ে ভেবেছিল, মুক্তিযোদ্ধারা সব মাধবপুর ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁরা বেশ ঢিলেঢালাভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। সেনারা সেতুর মাঝামাঝি আসামাত্র বাচ্চু মিয়াদের অস্ত্রগুলো একসঙ্গে গর্জে ওঠে। আকস্মিক এই আক্রমণে অগ্রগামী দলের অনেকে হতাহত হয়। এরপর বাচ্চু মিয়ারা ত্বরিত ওই এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করেন। এ অ্যামবুশে বাচ্চু মিয়া অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
বাচ্চু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট সেক্টরের অধীন চিমটিখিল বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘এস’ ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য বাচ্চু মিয়াকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ২৬১।
চাকরি থেকে অবসর পাওয়ার পর বাচ্চু মিয়াকে বেশ দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে হয়। তাঁর সাত সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে গিয়ে তাঁর যৎসামান্য যা সঞ্চয় ছিল, সব শেষ হয়ে যায়। পরে জীবন বাঁচাতে তিনি অনেক বছর সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। ২০০৯ সালে তিনি মারা গেছেন।
বাচ্চু মিয়ার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে। বাবার নাম সোনা মিয়া মুন্সি। মা দুরুতুন নেছা। স্ত্রী সলুফা বেগম।
সূত্র: প্রথম আলোর গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বীরত্বগাথা, জ্বলে একাত্তরের অগ্নিশিখা, এসআইএম নূরুন্নবী খান বীর বিক্রম।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
মাধবপুর হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এপ্রিল মাসের শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল অবস্থান নিয়েছিল শাহবাজপুরে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের একটি শক্তিশালী দল অবস্থান নেয় শাহবাজপুর সেতুর অপর প্রান্তে। অপর একটি দল হেলিকপ্টারে প্যারাড্রপিং করে অবস্থান নেয় বাচ্চু মিয়াদের দলের পেছনে। প্রচণ্ড আক্রমণে বাচ্চু মিয়াদের দল শাহবাজপুর ছেড়ে অবস্থান নেয় মাধবপুরে।
তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মতিন (বীর প্রতীক, পরে মেজর জেনারেল)। বাচ্চু মিয়ারা মাধবপুর নদ সামনে রেখে বিস্তৃত এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তাঁদের এই অবস্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গি বিমান ও আর্টিলারির সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটে যান। কিন্তু বাচ্চু মিয়াসহ ১০-১২ জন চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজ অবস্থানে থেকে যান। তাঁদের কাছে উন্নত অস্ত্র বলতে ছিল চারটি এলএমজি। বাকি সব রাইফেল। তাই নিয়ে তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য ফাঁদ রচনা করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দল কোথাও বাধা না পেয়ে ভেবেছিল, মুক্তিযোদ্ধারা সব মাধবপুর ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁরা বেশ ঢিলেঢালাভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। সেনারা সেতুর মাঝামাঝি আসামাত্র বাচ্চু মিয়াদের অস্ত্রগুলো একসঙ্গে গর্জে ওঠে। আকস্মিক এই আক্রমণে অগ্রগামী দলের অনেকে হতাহত হয়। এরপর বাচ্চু মিয়ারা ত্বরিত ওই এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করেন। এ অ্যামবুশে বাচ্চু মিয়া অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
বাচ্চু মিয়া চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট সেক্টরের অধীন চিমটিখিল বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টর ও নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘এস’ ফোর্সের অধীনে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য বাচ্চু মিয়াকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্ব ভূষণ নম্বর ২৬১।
চাকরি থেকে অবসর পাওয়ার পর বাচ্চু মিয়াকে বেশ দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে হয়। তাঁর সাত সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে গিয়ে তাঁর যৎসামান্য যা সঞ্চয় ছিল, সব শেষ হয়ে যায়। পরে জীবন বাঁচাতে তিনি অনেক বছর সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। ২০০৯ সালে তিনি মারা গেছেন।
বাচ্চু মিয়ার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে। বাবার নাম সোনা মিয়া মুন্সি। মা দুরুতুন নেছা। স্ত্রী সলুফা বেগম।
সূত্র: প্রথম আলোর গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বীরত্বগাথা, জ্বলে একাত্তরের অগ্নিশিখা, এসআইএম নূরুন্নবী খান বীর বিক্রম।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments