মন্ত্রণালয়ের কালক্ষেপণে ছয় কোটি টাকা গচ্চা! by পার্থ সারথি দাস
মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও কালক্ষেপণের খেসারত হিসেবে সরকারকে গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে দীর্ঘ ছয়টি বছর। অবশেষে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই অর্থ পাচ্ছে ব্রিটিশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এডমান্ড নাটাল লিমিটেড। অবশ্য তাদের চাওয়া ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি, ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৯০তম কিলোমিটারে ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর প্রায় ৮১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ১৯৯৮ সালের ২৬ এপ্রিল।
এ নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার ১৬০ কোটি টাকা ও সে দেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাণিজ্যিক ঋণ ১৬০ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যায়। কাজটি পায় ব্রিটিশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এডমান্ড নাটালস লিমিটেড। ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করে। একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে এডমান্ড নাটাল থেকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ অর্থ কেটে রাখে বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তী সময়ে চুক্তির শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কেটে রাখা ওই অর্থ ফেরত চায়। সরকারের অর্থ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই অর্থ ফেরতও দেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক ঢিলেমি ও অদূরদর্শিতার কারণে মাঝে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এই বিলম্বের জন্য মুদ্রা বিনিময় মূল্যের ব্যবধান বাবদ ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালের ১৩ নভেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হলে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জানিয়ে দেয়, কেটে রাখা অর্থ ফেরতে বিলম্ব হচ্ছে সত্য; তবে এই বিলম্বের জন্য সুদ দেওয়ার অবকাশ নেই।
যোগাযোগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতা ও চিঠি চালাচালির প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণের ফলে মাঝে পার হয়ে যায় দীর্ঘ তিনটি বছর। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি এক চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানায়, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে ঠিকাদারের সব দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। এ কারণে তাদের এই দাবি মানার অবকাশ নেই। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এই দাবি ছাড়া বাকি বিলের অর্থ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ২০০৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের পাওনা ২০০৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল। তা না দেওয়ায় চুক্তির ধারামতে আরো ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। এই সুদসহ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করা পাওনা দাঁড়ায় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৮ সালের ১১ জুলাই ডিসপুট অ্যাডজুডিকেশন বোর্ডে (ড্যাব) দাবি উপস্থাপন করে। নির্ধারিত ৫৬ দিনের মধ্যে ওই বোর্ডে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা উলি্লখিত ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি নিষ্পত্তির জন্য আইসিসি-ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আরবিট্রেশন এশিয়া অফিস সিঙ্গাপুর আদালতে মামলা করে। ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট ঘোষিত ওই আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। এই রায় ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। শুরু করেন দেনদরবার। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা করে পাওনার পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সমর্থ হয় সড়ক বিভাগ। এখন বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৫ টাকা ৮ পয়সা পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই মুহূর্তে আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারব না। নথি দেখে তারপর কথা বলতে হবে।'
মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিষয়টি এত দিন ঝুলে থাকল কেন, আর কী কারণে এত টাকা দিতে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কারণ খুঁজতে গেলে আমার কথায় কেউ আহত হতে পারেন। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, এই অর্থ দেওয়ার আগে আমরা অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয় এবং আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করতে চাইছি। দেশের স্বার্থে দেশের অর্থ রক্ষার চেষ্টা করব। আর কোনো উপায় বের করতে না পারলে তো তা (অর্থ) দিতেই হবে।'
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর আমরা স্থানীয়ভাবেও বসেছি। নাটালের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পাওনা অর্থ নেওয়ার জন্য আসতে চিঠি দেওয়া হবে। এ নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়া চলছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব এবং দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালিতে সময় ব্যয় হওয়ায় এখন সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। সময়ের কাজ সময়ে করলে এটা এড়ানো সম্ভব হতো।
এই অর্থ প্রদানের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত কমিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনার পর গত ২১ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এদিকে এডমান্ড নাটাল থেকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ অর্থ কেটে রাখে বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তী সময়ে চুক্তির শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কেটে রাখা ওই অর্থ ফেরত চায়। সরকারের অর্থ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই অর্থ ফেরতও দেয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক ঢিলেমি ও অদূরদর্শিতার কারণে মাঝে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এই বিলম্বের জন্য মুদ্রা বিনিময় মূল্যের ব্যবধান বাবদ ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালের ১৩ নভেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হলে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জানিয়ে দেয়, কেটে রাখা অর্থ ফেরতে বিলম্ব হচ্ছে সত্য; তবে এই বিলম্বের জন্য সুদ দেওয়ার অবকাশ নেই।
যোগাযোগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতা ও চিঠি চালাচালির প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণের ফলে মাঝে পার হয়ে যায় দীর্ঘ তিনটি বছর। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি এক চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানায়, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে ঠিকাদারের সব দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। এ কারণে তাদের এই দাবি মানার অবকাশ নেই। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এই দাবি ছাড়া বাকি বিলের অর্থ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ২০০৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের পাওনা ২০০৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল। তা না দেওয়ায় চুক্তির ধারামতে আরো ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। এই সুদসহ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করা পাওনা দাঁড়ায় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৮ সালের ১১ জুলাই ডিসপুট অ্যাডজুডিকেশন বোর্ডে (ড্যাব) দাবি উপস্থাপন করে। নির্ধারিত ৫৬ দিনের মধ্যে ওই বোর্ডে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা উলি্লখিত ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি নিষ্পত্তির জন্য আইসিসি-ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আরবিট্রেশন এশিয়া অফিস সিঙ্গাপুর আদালতে মামলা করে। ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট ঘোষিত ওই আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। এই রায় ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। শুরু করেন দেনদরবার। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা করে পাওনার পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সমর্থ হয় সড়ক বিভাগ। এখন বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৫ টাকা ৮ পয়সা পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই মুহূর্তে আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারব না। নথি দেখে তারপর কথা বলতে হবে।'
মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিষয়টি এত দিন ঝুলে থাকল কেন, আর কী কারণে এত টাকা দিতে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কারণ খুঁজতে গেলে আমার কথায় কেউ আহত হতে পারেন। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, এই অর্থ দেওয়ার আগে আমরা অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয় এবং আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করতে চাইছি। দেশের স্বার্থে দেশের অর্থ রক্ষার চেষ্টা করব। আর কোনো উপায় বের করতে না পারলে তো তা (অর্থ) দিতেই হবে।'
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর আমরা স্থানীয়ভাবেও বসেছি। নাটালের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পাওনা অর্থ নেওয়ার জন্য আসতে চিঠি দেওয়া হবে। এ নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়া চলছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব এবং দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালিতে সময় ব্যয় হওয়ায় এখন সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। সময়ের কাজ সময়ে করলে এটা এড়ানো সম্ভব হতো।
এই অর্থ প্রদানের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত কমিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনার পর গত ২১ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
No comments