সংস্কৃতির অন্য অঙ্গন by মনজুরুল ইসলাম খান
সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিনে তাকে স্মরণ করে কোনো লেখা লিখতে হবে, কয়েক বছর আগে তা কল্পনাও করিনি। বরং জন্মদিনে কী রকম করে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যায় তা নিয়েই ভাবতে হতো।
ভাবতে হতো_ কথাটা এ কারণে বললাম, জন্মদিনে সঞ্জীবদার ভিন্ন কোনো অনুভূতি হয়েছে বলে আমার কখনও মনে হয়নি বরং অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক, গুনগুন করে গান করা, হঠাৎ আইডিয়া বের করে তা বাস্তবায়ন করা এসব আর কি! তাই তো সারপ্রাইজ জাতীয় কিছু না করলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা খুবই কষ্টকর হতো। সঞ্জীবদাকে যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের ছাড়া সারাদেশের মানুষ তাকে চিনত একজন সাংবাদিক, গায়ক হিসেবে। কিন্তু সঞ্জীবদার একটি বড় পরিচয় ও অবদানের কথা আমরা অনেকেই জানি না।
আমি তখন ডাকসু সাংস্কৃতিক দলের সদস্য। অশোক কর্মকার ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক। ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে তিনি নির্বাচিত হন। অশোকদার মাধ্যমেই পরিচিত হই ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় নেতা সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে। ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী চটপটে, মিশুক এবং সঙ্গীতে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী এই মানুষটিকে প্রথম দেখা থেকেই ভালো লাগতে থাকল। প্রথম দেখায় টিএসসিতে ডাকসু সাংস্কৃতিক দলের রুমে বসে তার গাওয়া মান্না দের বিখ্যাত গান 'এ তো রাগ নয় এ যে অভিমান' শুনে যারপরনাই মুগ্ধ আমি। টিএসসিতে আসার সময় পেলেই সঞ্জীবদার সঙ্গে আড্ডা মারাটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। আমাদের সেই আড্ডার অনেকেই আজ সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন জগতের আলোকিত মানুষ। যেমন_ অশোক কর্মকার (প্রথম আলো), জুয়েল (কণ্ঠশিল্পী, নির্মাতা), সৈয়দ আওলাদ (গীতিকার, নির্মাতা), সোহানা (কণ্ঠশিল্পী), কিরীটি (চিত্রশিল্পী), গৌতম (তবলাবাদক), আল বেরুনি অনুসহ (কণ্ঠশিল্পী) সাংস্কৃতিক জগতের অনেক চেনা মানুষ।
এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য ও টিএসসিকেন্দ্রিক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তথা সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সঞ্জীবদা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত গেয়ে গেয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার কাজে ভূমিকা রাখছেন। হঠাৎ করেই স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনী টিএসসিতে আক্রমণ শুরু করল। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যেতে লাগলাম। হলেও থাকতে পারছি না পুলিশি হয়রানির ভয়ে। আমাদের আশ্রয়স্থল হলো সঞ্জীবদার বোনের (নীলিমাদি) বাসায়। পরিবাগের সেই বাসায় সঞ্জীবদার রুমটি আমাদের টিএসসিকেন্দ্রিক সংস্কৃতিকর্মীদের আড্ডাস্থল হয়ে গেল। তখন কারফিউ চলছে। হঠাৎ করে সঞ্জীবদা একটি ম্যাগাজিনে কুকুরের ছবি দেখিয়ে অশোকদাকে (অশোক কর্মকার) বললেন কুকুরটির মাথায় এরশাদের মাথা এঁকে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে আইডিয়াটা অশোকদা লুফে নিয়ে একটি পোস্টারের ডিজাইন করে ফেললেন। আমরা সবাই চাঁদা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পোস্টারটি ছাপিয়ে কারফিউর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা শাহবাগসহ পুরো ইউনিভার্সিটি এলাকায় সেঁটে দিলাম। 'বিশ্ব বেহায়া এরশাদ' শিরোনামের সেই পোস্টার দেখে সাড়া পড়ে গেল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে।
সঞ্জীবদাকে নিয়ে কথা উঠলে তার অনেক গুণের কথাই অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে কেউ কথা বলেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। তাই তার জন্মদিনের প্রাক্কালে তাকে স্মরণ করতে গিয়ে আমার মতো নগণ্য সহযোগীর হৃদয়ে গেঁথে থাকা অনেক স্মৃতির মধ্যে একটি স্মৃতিকে তুলে দিলাম পাঠক সমীপে।
mnzu_kh@yahoo.com
আমি তখন ডাকসু সাংস্কৃতিক দলের সদস্য। অশোক কর্মকার ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক। ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে তিনি নির্বাচিত হন। অশোকদার মাধ্যমেই পরিচিত হই ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় নেতা সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে। ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী চটপটে, মিশুক এবং সঙ্গীতে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী এই মানুষটিকে প্রথম দেখা থেকেই ভালো লাগতে থাকল। প্রথম দেখায় টিএসসিতে ডাকসু সাংস্কৃতিক দলের রুমে বসে তার গাওয়া মান্না দের বিখ্যাত গান 'এ তো রাগ নয় এ যে অভিমান' শুনে যারপরনাই মুগ্ধ আমি। টিএসসিতে আসার সময় পেলেই সঞ্জীবদার সঙ্গে আড্ডা মারাটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। আমাদের সেই আড্ডার অনেকেই আজ সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন জগতের আলোকিত মানুষ। যেমন_ অশোক কর্মকার (প্রথম আলো), জুয়েল (কণ্ঠশিল্পী, নির্মাতা), সৈয়দ আওলাদ (গীতিকার, নির্মাতা), সোহানা (কণ্ঠশিল্পী), কিরীটি (চিত্রশিল্পী), গৌতম (তবলাবাদক), আল বেরুনি অনুসহ (কণ্ঠশিল্পী) সাংস্কৃতিক জগতের অনেক চেনা মানুষ।
এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য ও টিএসসিকেন্দ্রিক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তথা সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সঞ্জীবদা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত গেয়ে গেয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার কাজে ভূমিকা রাখছেন। হঠাৎ করেই স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনী টিএসসিতে আক্রমণ শুরু করল। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যেতে লাগলাম। হলেও থাকতে পারছি না পুলিশি হয়রানির ভয়ে। আমাদের আশ্রয়স্থল হলো সঞ্জীবদার বোনের (নীলিমাদি) বাসায়। পরিবাগের সেই বাসায় সঞ্জীবদার রুমটি আমাদের টিএসসিকেন্দ্রিক সংস্কৃতিকর্মীদের আড্ডাস্থল হয়ে গেল। তখন কারফিউ চলছে। হঠাৎ করে সঞ্জীবদা একটি ম্যাগাজিনে কুকুরের ছবি দেখিয়ে অশোকদাকে (অশোক কর্মকার) বললেন কুকুরটির মাথায় এরশাদের মাথা এঁকে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে আইডিয়াটা অশোকদা লুফে নিয়ে একটি পোস্টারের ডিজাইন করে ফেললেন। আমরা সবাই চাঁদা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পোস্টারটি ছাপিয়ে কারফিউর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা শাহবাগসহ পুরো ইউনিভার্সিটি এলাকায় সেঁটে দিলাম। 'বিশ্ব বেহায়া এরশাদ' শিরোনামের সেই পোস্টার দেখে সাড়া পড়ে গেল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে।
সঞ্জীবদাকে নিয়ে কথা উঠলে তার অনেক গুণের কথাই অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে কেউ কথা বলেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। তাই তার জন্মদিনের প্রাক্কালে তাকে স্মরণ করতে গিয়ে আমার মতো নগণ্য সহযোগীর হৃদয়ে গেঁথে থাকা অনেক স্মৃতির মধ্যে একটি স্মৃতিকে তুলে দিলাম পাঠক সমীপে।
mnzu_kh@yahoo.com
No comments