পবিত্র কোরআনের আলো-সামুদ জাতি তাদের অবাধ্যতার কারণে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল
৬৪. ওয়া ইয়া-ক্বাওমি হা-যিহী না-ক্বাতুল্লা-হি লাকুম আয়াতান ফাযারূহা- তা'কুল ফী আরদ্বিল্লা-হি ওয়া লা-তামাচ্ছূহা- বিছূয়িন, ফাইয়া'খুযাকুম আ'যা-বুন ক্বারীব।
৬৫. ফাআ'ক্বারূহা- ফাক্বা-লা তামাত্তাঊ' ফী দা-রিকুম ছালা-ছাতা আইয়্যামিন। যা-লিকা ওয়া'দুন গাইরু মাক্যূব্।
৬৬. ফালাম্মা- জা-আ আমরুনা- নাজ্জাইনা- ছ্বালিহান ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ মাআ'হূ বিরাহ্মাতিম্ মিন্না- ওয়া মিন খিয্য়ি ইয়াওমায়িযিন; ইন্না রাব্বাকা হুওয়াল ক্বাউইয়্যুল আ'যীয।
৬৭. ওয়া আখাযাল্লাযীনা য্বালামুস সাইহ্বাতু ফাআচ্ছ্ববাহূ ফী দিয়া-রিহিম জা-ছিমীন।
৬৮. কাআল্লাম ইয়াগ্নাও ফীহা-; আলা- ইন্না ছামূদা- কাফারূ রাব্বাহুম; আলা- বু'দাল্ লিছামূদ। [সুরা : হুদ, আয়াত : ৬৪-৬৮]
অনুবাদ : ৬৪। (নবী সালিহ আরো বললেন) হে আমার জাতি, এটা আল্লাহর তরফ থেকে আসা এক মাদি উট, এটা তোমাদের জন্য একটি নিদর্শনরূপে এসেছে। সুতরাং এটাকে আল্লাহর জমিনে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে খেতে দাও। এটাকে তোমরা অসদুদ্দেশ্যে স্পর্শ করতে যেও না। যদি তা করা হয়, তবে তোমরা অতিসত্বর শাস্তির মধ্যে নিপতিত হয়ে যাবে। (একটি অলৌকিক উটের আবির্ভাব প্রসঙ্গে সামুদ জাতিকে এ কথা বলা হয়েছিল)
৬৫. এরপর তারা (সেই অলৌকিক) মাদি উটটিকে মেরে ফেলল। অতএব নবী সালিহ তাদের বললেন, (তোমরা মহা অপরাধ করেছ, যার ভয়াবহ পরিণতি তোমরা দেখতে পাবে) তোমরা তোমাদের ঘরবাড়িতে তিন দিন ফুর্তি করে নাও। (এর পরই নির্ধারিত পরিণতি আসবে) এটা এমন এক প্রতিশ্রুতি, যার ব্যত্যয় কেউ ঘটাতে পারবে না।
৬৬. এরপর যখন আমার হুকুম এসে গেল, অর্থাৎ সাধারণ শাস্তি নেমে এলো, তখন আমি নবী সালিহকে এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইমান এনেছিল, তাদের আমার বিশেষ রহমতে রক্ষা করলাম। আর সে দিনের লাঞ্ছনা থেকে আমি তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম। (হে নবী মুহাম্মদ!) নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক সেই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
৬৭. আর যারা অত্যাচারী হয়ে উঠল, তাদের আঘাত হানল এক মহাগর্জন। এতে তারা তাদের বাসস্থানেই মুখথুবড়ে পড়ে থাকল।
৬৮. (জনপদটির অবস্থা এমন হয়েছিল,) যেন তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। (হে মানবজাতি!) মনে রেখো, সামুদ জাতি তাদের প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছিল। আর এটাও মনে রেখো, সামুদ জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ব্যাখ্যা : আদ জাতির কাহিনী বর্ণনা করার পর প্রসঙ্গ আসে সামুদ জাতির। সামুদ জাতি আদ জাতিরই পরবর্তী বংশধর। এ কথা আগেই আলোচিত হয়েছে। ৬১ নম্বর আয়াত থেকে এসেছে সামুদ জাতির প্রসঙ্গ। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী সালিহকে পাঠানো হয়েছিল তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু তারা সালিহ (আ.)-এর ডাকে সাড়া দেয়নি। যদিও তিনি ছিলেন সে জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরই একজন। আলোচ্য আয়াতগুলোতে অবাধ্য সামুদ জাতির প্রতি আল্লাহর যে পরীক্ষা এসেছিল এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে তারা যে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করেছিল, সেই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে সামুদ জাতি কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল সেই মর্মস্পর্শী বিবরণ। ৬৪ নম্বর আয়াতে একটি আলোচিত মাদি উটের কথা বলা হয়েছে। এটি একটি মোজিজা। এর মাধ্যমে অবাধ্য ও অত্যাচারী সামুদ জাতিকে পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সে পরীক্ষায়ও ব্যর্থ হয়েছে। ৬৫ নম্বর আয়াতে তিন দিনের সময় দেওয়ার কথা বলে আমোদ-ফুর্তি করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা এক ধরনের সূক্ষ্ম বিদ্রূপও। তাদের এভাবে সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি। ৬৬, ৬৭ ও ৬৮ এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে সামুদ জাতিকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এর বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সুরা আ'রাফে বর্ণিত হয়েছে, সামুদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল ভূমিকম্পের মাধ্যমে। এখানে বলা হচ্ছে, ভয়ংকর গর্জনের কথা। বর্ণনা দুটির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ভূমিকম্প এবং ভয়াল গর্জন পরস্পর সম্পৃক্ত। দুটি বিবরণ থেকে বোঝা যায়, দুটি এক সঙ্গেই হয়েছিল। ৬৮ নম্বর আয়াতে সামুদ জাতির পতনের কাহিনী বর্ণনা শেষে মানব জাতির জন্য একটা উপসংহারমূলক সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সামুদ জাতি অবাধ্য হয়েছিল এবং তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। এটাই অবাধ্যদের পরিণতি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৬৬. ফালাম্মা- জা-আ আমরুনা- নাজ্জাইনা- ছ্বালিহান ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ মাআ'হূ বিরাহ্মাতিম্ মিন্না- ওয়া মিন খিয্য়ি ইয়াওমায়িযিন; ইন্না রাব্বাকা হুওয়াল ক্বাউইয়্যুল আ'যীয।
৬৭. ওয়া আখাযাল্লাযীনা য্বালামুস সাইহ্বাতু ফাআচ্ছ্ববাহূ ফী দিয়া-রিহিম জা-ছিমীন।
৬৮. কাআল্লাম ইয়াগ্নাও ফীহা-; আলা- ইন্না ছামূদা- কাফারূ রাব্বাহুম; আলা- বু'দাল্ লিছামূদ। [সুরা : হুদ, আয়াত : ৬৪-৬৮]
অনুবাদ : ৬৪। (নবী সালিহ আরো বললেন) হে আমার জাতি, এটা আল্লাহর তরফ থেকে আসা এক মাদি উট, এটা তোমাদের জন্য একটি নিদর্শনরূপে এসেছে। সুতরাং এটাকে আল্লাহর জমিনে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে খেতে দাও। এটাকে তোমরা অসদুদ্দেশ্যে স্পর্শ করতে যেও না। যদি তা করা হয়, তবে তোমরা অতিসত্বর শাস্তির মধ্যে নিপতিত হয়ে যাবে। (একটি অলৌকিক উটের আবির্ভাব প্রসঙ্গে সামুদ জাতিকে এ কথা বলা হয়েছিল)
৬৫. এরপর তারা (সেই অলৌকিক) মাদি উটটিকে মেরে ফেলল। অতএব নবী সালিহ তাদের বললেন, (তোমরা মহা অপরাধ করেছ, যার ভয়াবহ পরিণতি তোমরা দেখতে পাবে) তোমরা তোমাদের ঘরবাড়িতে তিন দিন ফুর্তি করে নাও। (এর পরই নির্ধারিত পরিণতি আসবে) এটা এমন এক প্রতিশ্রুতি, যার ব্যত্যয় কেউ ঘটাতে পারবে না।
৬৬. এরপর যখন আমার হুকুম এসে গেল, অর্থাৎ সাধারণ শাস্তি নেমে এলো, তখন আমি নবী সালিহকে এবং তাঁর সঙ্গে যারা ইমান এনেছিল, তাদের আমার বিশেষ রহমতে রক্ষা করলাম। আর সে দিনের লাঞ্ছনা থেকে আমি তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম। (হে নবী মুহাম্মদ!) নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক সেই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
৬৭. আর যারা অত্যাচারী হয়ে উঠল, তাদের আঘাত হানল এক মহাগর্জন। এতে তারা তাদের বাসস্থানেই মুখথুবড়ে পড়ে থাকল।
৬৮. (জনপদটির অবস্থা এমন হয়েছিল,) যেন তারা কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। (হে মানবজাতি!) মনে রেখো, সামুদ জাতি তাদের প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছিল। আর এটাও মনে রেখো, সামুদ জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ব্যাখ্যা : আদ জাতির কাহিনী বর্ণনা করার পর প্রসঙ্গ আসে সামুদ জাতির। সামুদ জাতি আদ জাতিরই পরবর্তী বংশধর। এ কথা আগেই আলোচিত হয়েছে। ৬১ নম্বর আয়াত থেকে এসেছে সামুদ জাতির প্রসঙ্গ। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী সালিহকে পাঠানো হয়েছিল তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু তারা সালিহ (আ.)-এর ডাকে সাড়া দেয়নি। যদিও তিনি ছিলেন সে জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরই একজন। আলোচ্য আয়াতগুলোতে অবাধ্য সামুদ জাতির প্রতি আল্লাহর যে পরীক্ষা এসেছিল এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে তারা যে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করেছিল, সেই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে সামুদ জাতি কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল সেই মর্মস্পর্শী বিবরণ। ৬৪ নম্বর আয়াতে একটি আলোচিত মাদি উটের কথা বলা হয়েছে। এটি একটি মোজিজা। এর মাধ্যমে অবাধ্য ও অত্যাচারী সামুদ জাতিকে পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সে পরীক্ষায়ও ব্যর্থ হয়েছে। ৬৫ নম্বর আয়াতে তিন দিনের সময় দেওয়ার কথা বলে আমোদ-ফুর্তি করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা এক ধরনের সূক্ষ্ম বিদ্রূপও। তাদের এভাবে সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি। ৬৬, ৬৭ ও ৬৮ এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে সামুদ জাতিকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এর বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সুরা আ'রাফে বর্ণিত হয়েছে, সামুদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল ভূমিকম্পের মাধ্যমে। এখানে বলা হচ্ছে, ভয়ংকর গর্জনের কথা। বর্ণনা দুটির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ভূমিকম্প এবং ভয়াল গর্জন পরস্পর সম্পৃক্ত। দুটি বিবরণ থেকে বোঝা যায়, দুটি এক সঙ্গেই হয়েছিল। ৬৮ নম্বর আয়াতে সামুদ জাতির পতনের কাহিনী বর্ণনা শেষে মানব জাতির জন্য একটা উপসংহারমূলক সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। সামুদ জাতি অবাধ্য হয়েছিল এবং তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। এটাই অবাধ্যদের পরিণতি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments