‘আমি হলে সব একসঙ্গে ছাড়তাম’
শচীনের সিদ্ধান্তে কি বিস্মিত? অবসরের সময়টা কি ঠিক আছে?
সৌরভ গাঙ্গুলী: সময়ের কথা যদি হয়...আমার মনে হয় ঠিকই আছে। আর আমি বিস্মিত নই। ২০১১ বিশ্বকাপের পর শচীন তো বলতে গেলে ওয়ানডে খেলেইনি।
সেই সমর্থন সে আর পাচ্ছিল না, অনেকেই পিছু লেগেছিল যাতে সে ক্রিকেট ছেড়ে দেয়। এখন অবশ্য ওরা অনেকেই চুপ মেরে যাবে।সৌরভ গাঙ্গুলী: সময়ের কথা যদি হয়...আমার মনে হয় ঠিকই আছে। আর আমি বিস্মিত নই। ২০১১ বিশ্বকাপের পর শচীন তো বলতে গেলে ওয়ানডে খেলেইনি।
শচীনের জায়গায় আপনি হলে কী করতেন?
সৌরভ: দেখুন, একই পরিস্থিতিতে একেক মানুষের আচরণ একেক রকম হয়। রেকর্ডের জন্য কেউ খেলে না...খেলে খেলাটার প্রতি আবেগ-ভালোবাসার কারণে। আর আবেগটাকেই বিবেচনায় নিতে হয়।
শচীনের কি উচিত ছিল ২০১১ বিশ্বকাপের পর অবসর নেওয়া?
সৌরভ: বিশ্বকাপের চেয়েও অনেক বেশি কিছু ক্রিকেটে আছে...বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হওয়ার চেয়েও যেমন বেশি কিছু আছে জীবনে। এটা শুধু একটা বিশ্বকাপ থেকে আরেকটা বিশ্বকাপের দিকে তাকানো নয়।
শচীনকে এত ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান করে তুলেছে কোন ব্যাপারটি, বিশেষ করে ওয়ানডেতে?
সৌরভ: শচীনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপারটি ঘটেছে, সেটা হলো ওপেনিংয়ে উঠে আসা...এতে পুরো ওভার হাতে পেয়েছে এবং বাউন্ডারি মারার সামর্থ্যের পুরোটা কাজে লাগাতে পেরেছে। আর ইনিংসকে খুব ভালোভাবে গুছিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য ছিল ওর। টেকনিক্যালি এতটা শুদ্ধ হওয়া ওকে আরও ধ্বংসাত্মক হতে সাহায্য করেছে।
ওপেন করার পরিকল্পনাটা শচীনেরই ছিল, ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে নভজোত সিং সিধু আনফিট হওয়ার পর...
সৌরভ: ইন্টারেস্টিং...সিধু তাহলে বেশ কিছু ক্যারিয়ার গড়েছে!
এ মুহূর্তে শচীনের কোন ইনিংসটার কথা মনে পড়ছে?
সৌরভ: অনেক...অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শারজায় ১৪৩ ও ১৩৪ (১৯৯৮ সালের এপ্রিলে)...২০০৭ সালে বেলফাস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৯ ও ৯৩, খুব দুরূহ উইকেট ছিল, বল যেন সবকিছুই করছিল। আমি খুব ভালো করে জানি, কারণ আমি আরেক প্রান্তে ছিলাম। আর ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটা কেই-বা ভুলতে পারে? ও ছিল অসাধারণ।
একটা সময় এসেছিল যখন শচীন ওয়ানডে ব্যাটিংকে অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল...
সৌরভ: আসলেই নিয়েছিল, তবে টেস্ট ক্রিকেটেও। ২২ গজটা মনে হতো যেন শুধু শচীনের জন্যই।
আপনারা দুজন মিলে ২১টি শতরানের জুটি গড়েছেন, যা এখনো বিশ্ব রেকর্ড। এমন সফল জুটির রহস্য কী?
সৌরভ: একটা কারণ ডানহাতি-বাঁহাতি মিশ্রণ...আমরা পরস্পরকে খুব ভালো বুঝতামও, একজন অনুমান করতে পারতাম আরেকজন কী চাইছে। আমরা দুজনই নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বাউন্ডারি মারতে পারতাম। আর সব কন্ডিশনেই খেলতে পারার ক্ষমতাও আমাদের সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ব্যাটিংয়ের সময় আপনাদের মধ্যে কি শুধু ক্রিকেট নিয়েই কথা হতো?
সৌরভ: বেশির ভাগই ক্রিকেট নিয়ে...কে ভালো বোলিং করছে, পরিস্থিতি কেমন, আমাদের কোনো একজনের ব্যাটিংয়ের ধরন পাল্টানো উচিত কি না...।
আরেক প্রান্ত থেকে শচীনের ব্যাটিং দেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সৌরভ: দারুণ মজার ছিল...ও শুরু থেকেই স্ট্রোকের ফোয়ারা ছোটাতে থাকলে আমি নিজের ব্যাটিংয়ে খানিকটা লাগাম পরাতাম। ৩০০ রান তাড়া করতে হলে আবার দুজনই শুরু থেকে হাত খুলে খেলতাম, কোনো বিকল্প থাকত না।
শচীন যদিও এখনো বলেননি, তবু এটা প্রায় নিশ্চিত, টেস্ট ক্রিকেট তিনি চালিয়ে যাবেন। আপনার মন্তব্য?
সৌরভ: আমি অবাক নই। শচীন অবশ্যই টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাবে, তবে খুব বেশি সময় নয়। কখন শেষ বলতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র শচীনই। ও নিজে যখন চাইবে, তখনই অবসর নেওয়া উচিত। আমার নিজের ব্যাপার যদি হতো, একসঙ্গে সব সংস্করণই ছাড়তাম।
সাম্প্রতিক সময়ে শচীনের সঙ্গে কথা হয়েছে?
সৌরভ: দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়নি।
নিকট ভবিষ্যতে কথা হলে শচীনকে কী বলবেন?
সৌরভ: বিরতিটা উপভোগ করো!
দেশের নায়কদের যেভাবে সম্মান জানানো উচিত, জাতি হিসেবে আমরা কি আমাদের নায়কদের তা দিতে পারি?
সৌরভ: না, আমরা পারি না। নায়কদের প্রতি আমাদের আচরণ আরও ভালো হওয়া উচিত।
No comments