পদ্মা সেতু-দক্ষিণ-পশ্চিমের স্বপ্নের চাবি
প্রমত্ত পদ্মা নদীতে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রকৃত অর্থেই সাধিত হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলা, বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবন এবং একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনুপম দৃশ্য দেখার জন্য খ্যাত কুয়াকাটা পরিণত হবে রাজধানীর অতি কাছের এলাকায়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি, যাতায়াত হয়ে উঠবে সহজ ও সাশ্রয়ী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল ৬ কিলোমিটার ১৫০ মিটারের এ সেতু। অর্থায়নে এতদিন যথেষ্ট অনিশ্চয়তা ছিল। জাপানের সাম্প্রতিক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রধান উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের পর অর্থায়নের বিষয়ে শঙ্কা অনেকটাই দূর হয়ে গেল। এখন যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণ কাজে নেমে পড়া চাই। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইউয়েলার একটি সতর্কবার্তার প্রতি আমরাও সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে চাই। বাংলাদেশের এ যাবৎ সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প এই সেতু। একক কোনো প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন এ সেতুতে। বুধবার ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে : ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা এবং নির্মাণ কাজের সর্বোচ্চ মান। প্রকৃতপক্ষে, এগুলো আমাদের জনগণেরও প্রত্যাশা। সরকারি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিকদের কারও কারও তৎপরতা সুবিদিত। ২০ হাজার পাঁচশ' কোটি টাকার এ প্রকল্প তাদের জন্য সোনার খনি হিসেবে বিবেচিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যেও এ ধরনের প্রকল্প থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে সক্রিয়তার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা, স্বপ্নের এ সেতুটি বাংলাদেশের এবং বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ খুলে দিক এবং এটা কোনোভাবেই যেন মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যক্তিগত ভাগ্যের চাকা আরও ঘোরানোর হাতিয়ার হয়ে না ওঠে। এমনটি ঘটলে দাতাদের অর্থ ছাড়ে পদে পদে বিঘ্ন ঘটবে এবং নির্মাণ কাজের মানও ত্রুটিপূর্ণ হবে। বাংলাদেশে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তার অভাব নেই। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজে তাদের যুক্ত করা হবে, এটাই কাম্য। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের পছন্দ-অপছন্দ যত কম গুরুত্ব পায় ততই মঙ্গল। সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে। এখন নির্মাণ কাজের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এর বাছাই কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে আপস করা হবে না, এটাই কাম্য। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই গর্বের এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে, এমন অঙ্গীকার রয়েছে। দেশবাসীও চায় সম্ভাব্য কম সময়েই যেন খুলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমের স্বপ্নের দুয়ার। এতে সরকার সাধুবাদ পাবে, কিন্তু তার চেয়েও বড় পাওনা হবে আমাদের প্রিয় স্বদেশভূমির_ মহাকালের ব্যবধান ঘুচিয়ে অভিন্ন সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কে বাঁধা পড়বে বাংলাদেশ।
No comments