সিটি করপোরেশন-বেঁচে থাক মশা ...
ঢাকা সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়ন যেমন নগরবাসীর বরাবরের প্রত্যাশা; চারশ' বছরের ঐতিহ্যের ধারক এ নগরী কতটা আধুনিক হতে পারবে সে শঙ্কাও যেন চিরন্তন।
বিশেষ করে মশক নিধনের মতো প্রাথমিক পর্যায়ের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নগর কর্তৃপক্ষ যেভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলছে, তা হতাশাজনকই। বিশ্বের অনেক নগরী যখন নাগরিকের সূক্ষ্মতম অসুবিধাও দূর করতে বদ্ধপরিকর, তখন মশার উপদ্রব্যের মতো সর্বব্যাপী সমস্যার ব্যাপারেও আমাদের নগরকর্তাদের ঔদাসীন্য কেবল বেদনাই জাগায়। অনাকাঙ্ক্ষিত এ বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো চেপে বসেছে মশার ওষুধ কিনতে অতিরিক্ত ব্যয়। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ক্রয় ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে ডিসিসির অতিরিক্ত সাত কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ব্যয় বেড়েছে অথচ মশা কমেনি। রাষ্ট্রীয় অর্থের এমন অপচয়ের জবাব দেবে কে? বস্তুত মশক নিধনের নামে গত কয়েক দশকে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা একদিকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করছে, অন্যদিকে নাগরিক ভোগান্তি তৈরি করছে। তারা চায় মশা বেঁচে থাকুক, নির্বিঘ্নে বংশবিস্তার করে চলুক। যত বেশি মশার উপদ্রব, তত আয়। প্রিয় ঢাকাকে বসবাসযোগ্য রাখতে হলে এই চক্র ভাঙার বিকল্প নেই। ডিসিসি মেয়র সমকালের কাছে বলেছেন, মশার ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সহজ প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে মশার প্রকোপ কমছে না কেন? বৃক্ষের পরিচয় আমরা ফলের মাধ্যমেই পেতে চাই। এটা ঠিক, ঢাকা থেকে মশক নির্মূল করতে হলে কেবল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ব্যক্তিপর্যায়ের সচেতনতা। কিন্তু কীটনাশক ছিটানোর মতো মশক নিধনের মূল কাজটি ডিসিসিকেই করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে কার্যকর রাসায়নিক ক্রয় ও প্রয়োগের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই।
No comments