চরাচর-বিশ্ব ধরিত্রী দিবস by তামান্না ইসলাম অলি

'ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা।' কত না সুন্দর আমাদের এই পৃথিবী। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বনের সৌন্দর্যে মানুষ আচ্ছন্ন হয়ে আছে আজীবন। এই আচ্ছন্নতায় সৃষ্টি হয়েছে অগণিত শিল্প। বহু পর্যটক হাজার বছর ধরে পথ হেঁটেছেন পৃথিবীর পথে। আমাদের আবাস এই পৃথিবী।


আমরা সবাই একে খুব ভালোবাসি। তবে খুব হতাশ হয়ে বলতে হয়, পৃথিবী হয়ে যাচ্ছে বসবাসের অনুপযোগী। আর এর দায় আমাদের। যদি বাঁচতে হয়, তাহলে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। এ কাজটি আমাদেরই।
আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গেলরড নেলসন ১৯৭০ সালে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তারই ফল আজকের ধরিত্রী দিবস। তখন তিনি এর নাম দিয়েছিলেন 'এনভায়রনমেন্টাল টিচ-ইন'। এবার এ দিবসটির ৪১তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। শুরুতে ২০ মিলিয়ন মানুষ এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আর ২০০৯ সালে এতে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৫০০ মিলিয়ন। তবে আন্দোলনকারীর সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় তার ফল বিশ্ববাসী পায়নি, যদিও এর কিছু প্রাপ্তি আছে। আগামী শতকে বিশ্বের তাপমাত্রা যেন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সে জন্য ১৮৯টি দেশ ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনে একমত হয়েছে, যদিও চারটি দেশ স্বাক্ষর না করায় এটি বাধ্যতামূলক হয়নি। এ সম্মেলনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে এ জন্য আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পাইনি। এরই মধ্যে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু জনগণ যদি সচেতন না হয় তবে সেটা কতটুকু কাজে আসবে?
যত দিন যাচ্ছে, পৃথিবী ততই হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এই গ্যাস ছড়ানো দেশের তালিকায় উন্নত দেশগুলো তো আছেই। ইদানীং যোগ হয়েছে চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশ। ২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পে মারা গেল দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ। তার পর পরই আক্রান্ত হলো চিলি, ফিলিপাইন ও চীন। আর সবশেষে বিপর্যয় নেমে এল জাপানে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে অসময়ে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল হাওর অঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান। আর সিডর-আইলার দগদগে ক্ষত এখনো রয়েছে উপকূলবাসীর শরীরে।
এই ঘন ঘন ভূমিকম্প, খরা, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল_সবই আমাদের নিজেদের ডেকে আনা। আমাদের দেশে আজ পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে বন। সমুদ্র সৈকতকে করা হচ্ছে আবাসিক এলাকা। বিশ্বের দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঢাকায় মানুষ বাড়ছে হু হু করে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়ি-গাড়ি। বাস-ট্রেনের তুলনায় প্রাইভেট গাড়ির সংখা দশ গুণ। তা-ও আবার রিকন্ডিশনড, যা পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। এ অবস্থায় আমাদের এই আবাসভূমিকে বাঁচাতে হলে বাড়াতে হবে সচেতনতা। আর এ জন্য দরকার জোরদার আন্দোলন।
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে সাগরের উচ্চতা বাড়ছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে বহু জনপদ। আর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে নিজ দেশকে টিকিয়ে রাখতে অন্যরা যতটা সোচ্চার, আমরা ঠিক ততটাই উদাসীন। মানুষ বাঁচাতে হলে বাঁচাতে হবে পরিবেশ। এ জন্য একদিকে যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করে তোলা। আমাদের জন্মভূমি যেন সব দেশের সেরা, সব দেশের রানি হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে টিকে থাকতে পারে_এবারের ধরিত্রী দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.