ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সীতাকুণ্ডে বিপজ্জনক যান চলাচল by প্রণব বল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যান চলাচল। ভারী ট্রাক ও বড় বড় ট্রাক্টর-ট্রেইলারের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলে এই অংশের কোথাও দেবে গেছে (রুটিং), কোথাও এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে (শোভিং), কিছু জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে বিটুমিন সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চালকেরা বলেছেন, এতে অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির যান চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে।


ভারী যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কের এই দশা বলে দাবি করেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রকৌশলীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ডের ইকোপার্ক, বাইপাস, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা ঘাট, ফৌজদারহাট টোল সড়কের প্রবেশমুখ এবং জলিল টেক্সটাইল মিল এলাকায় সড়কের অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
মো. মহিউদ্দিন নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিন গাড়ি অতিক্রম করতে হয়। দিনের বেলায় গতি কমিয়ে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাই। রাতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ কারণে বিপদে না পড়লে রাতে গাড়ি চালাই না।’
‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক ও সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্বপন কুমার নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের কয়েকটি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওদিকে এখনো আমরা কাজ শুরু করিনি। তবে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট থেকে মেরামতকাজ করতে করতে সীতাকুণ্ডের দিকে যাচ্ছি। আশা করি, দুই মাসের মধ্যে মেরামতকাজ শেষ হবে।’
সওজ সূত্র জানায়, সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ার পর চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ সিটি গেট থেকে মিরসরাইয়ের ধুমঘাট পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে টাকা এখনো পাওয়া যায়নি।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন, তাহের ব্রাদার্সের ইবিএল-এসইএল যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠান ও রেজা কনস্ট্রাকশন। এসব প্রতিষ্ঠানই মূলত সড়কের প্রাথমিক মেরামতকাজ করবে।
সীতাকুণ্ড অংশের কাজের দায়িত্বে রয়েছে সিনো হাইড্রো ও ইবিএল-এসইএল।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সওজের প্রকৌশলী অরুণ আলো চাকমা বলেন, ‘চার লেনের কাজ যারা করবে, তারাই মেরামতকাজ করবে। বর্ষার পরপর আমরা এই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অস্থায়ী ভিত্তিতে মেরামত করেছি। এখন আবার এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু টাকা পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারেরা মিরসরাই অংশে কাজ শেষ করছে। টাকা পেলে তারা সীতাকুণ্ডের কাজ শুরু করবে।’
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ক্ষেত্রে পেছনের দিকের ডানে ও বাঁয়ে একটি করে চাকার (সিঙ্গেল এক্সেল) যানবাহনের সর্বোচ্চ ২০ টন ওজন পরিবহনের কথা। বর্তমানে সিঙ্গেল এক্সেলের ট্রাক অথবা ট্রাক্টর-ট্রেইলার ২০ টনের স্থলে প্রায় ৪৫-৫০ টন পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। সড়কের ওপর এই বাড়তি চাপের কারণে বিটুমিন ও কংক্রিটের আস্তরণ সরে যাচ্ছে।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আরিফুল ইসলাম বলেন, বাড়বকুণ্ড, সীতাকুণ্ড বাইপাস এলাকায় মহাসড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ওই এলাকায় রাস্তা অতিক্রম করার সময় গাড়ির গতি কমিয়ে দেন চালকেরা। বিকেলের দিকে পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে যাত্রা করে। এই এলাকায় গাড়িগুলো গতি কমিয়ে দেওয়ায় এ সময় তীব্র যানজট দেখা দেয়।

No comments

Powered by Blogger.