মৃত টেস্টেও প্রাণ এনেছিল বাংলাদেশ-বাংলাদেশ : ৩৫০/৯ ডি. ও ১১৯/৩ ডি.-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৪৪ ও ১০০/২, ফল : ম্যাচ ড্র by মোস্তফা মামুন
নাবালক বাংলাদেশের টেস্ট দল সাবালক হলো! চট্টগ্রাম থেকে যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসের_ক্রিকেটের অনেক কিছু শুরু হয়, তেমনি নতুন যুগ শুরু হলো সম্ভবত। সেই যুগ, যে যুগে বাংলাদেশ ব্যাট হাতে জানায় তারা টেস্ট খেলতে শিখেছে। সেই যুগ, যে যুগে বাংলাদেশ মৃতপ্রায় টেস্টের মৃত পঞ্চম দিনে নাটকীয়তার হাওয়া যোগ করে। সেই যুগ, যে যুগে বাংলাদেশের অধিনায়ক দু-দুবার ডিক্লেয়ার করার সাহস দেখান।এই টেস্টের মৃত্যু লিখে দিয়ে গেছে বৃষ্টিবিধৌত দুই দিন। তারপর যা তা মৃত্যু-পরবর্তী ক্রিয়াকর্মই। কাজেই লাঞ্চের ঘণ্টাখানেক পর টেস্টের ফলের হিসাব বাদ দিয়ে এখান থেকে বাংলাদেশের সুশিক্ষা আর কুশিক্ষাগুলোর তালিকা করছিলাম।
দেখলাম অর্জনের অর্ঘ্য যেমন অনেক, তেমনি বর্জন করার মতো বর্জ্যও আছে কিছু। তালিকাটা দাঁড়াল এ রকম-সুশিক্ষা : ১. ইলিয়াস সানি-সূত্রে জানা গেল, এখনকার তরুণ প্রজন্ম ঘরোয়া ক্রিকেটের সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেনে নিতে পারে। তার মানে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে আমরা যতই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি না কেন এরও একটা উপযোগিতা আছে।
২. নির্বাচকদের চোখকেও সম্মান করতে হয়। প্রায় জহুরির কাছাকাছি তাঁরা। যাঁকে আনছেন তিনিই আলো ছড়াচ্ছেন। ইলিয়াস সানি-নাসির-রকিবুল।
৩. মুশফিকের অধিনায়কত্ব। বোলিং পরিবর্তনে চাতুর্য, ফিল্ডিং সাজানোর দক্ষতা, ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সপ্রতিভ উপস্থিতি মিলিয়ে দলটাকে দারুণ চনমনে আর একসূত্রে গাঁথা মনে হয়।
কুশিক্ষা : ১. বৃষ্টির সামান্য হানাতে দুই দিন ভেসে যাওয়াটা চূড়ান্ত অপেশাদারি সাংগঠনিক শক্তির পরিচয়। চট্টগ্রামে এরপর ক্রিকেট আয়োজনের আগে জানতে হবে, ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক হয়েছে কি না।
২. ইমরুল কায়েস আবার ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসের আউটটা যাঁরা দেখেননি তাঁদের যেন পুনরাভিনয় করে দেখালেন তিনি কিভাবে আউট হয়েছিলেন। গত কিছুদিনের নিয়মিত ওপেনিং জুটি নিয়ে কী তাহলে ভাবনার সময় হয়ে গেল!
৩. ক্যাচ ফেলা। এই প্রায় নিখুঁত টেস্টেও বিষফোড়ার মতো দুঃখ হয়ে রইল ক্যাচ ফেলা। আগের দিন ইলিয়াস সানির বলে তিনটা ক্যাচ পড়েছে, কাল সকালেও পড়ল গোটাকয়েক। টেস্ট, যেখানে সুযোগ আসে কালেভদ্রে সেখানে একটা ক্যাচের মূূল্য অনেক। বুঝতে হবে!
হিসাবগুলো যতক্ষণে গুছিয়ে এনেছি ততক্ষণে চা বিরতি এসে গেছে। কিন্তু একি, এ তো চা বিরতি নয়, ইনিংস বিরতি। ৩ উইকেটে ১১৯ করে, ২২৫ রানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দান ছেড়ে দিয়েছে! ওদের টার্গেট একেবারে অবাস্তব নয়, ৩৭ ওভারে ২২৬। তিন দিনের ম্যাচে এর চেয়ে স্পোর্টিং ডিক্লারেশন আর কী হতে পারত! এ রকম পৌরুষ এর আগে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কের কাছ থেকে দেখিনি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কি খুব দেখেছি! এই সেদিনও তো ওয়েস্ট ইন্ডিজে মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর নেতিবাচকতার জন্য নিন্দিত হয়েছেন। না, ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না যে ব্যাটিং প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে কতজন অধিনায়ক এভাবে ম্যাচ জমানোর নূ্যনতম এ সুযোগটা নিতেন। যা বিশ্বমাপের অন্য অধিনায়করা করতেন কি না তাই নিয়ে যখন প্রশ্ন তখন সেটা করে ফেলেছে বাংলাদেশ এবং মুশফিক। একি নাবালক বাংলাদেশের সাবালকত্বে উত্তরণের দিন নয়! জয় আর হার দিয়ে খেলার মূল্যায়ন হয় সাধারণত কিন্তু কাগুজে মূল্যায়নই সব সময় শেষ কথা নয়। হার-জিতের অঙ্কে কখনো স্রেফ কিছু সংখ্যা পরিসংখ্যানের খাতায় রয়ে যায় মুখ গুঁজে। সাহস-বীরত্ব-পৌরুষ-শৌর্য-দর্শক বিনোদন তাকে ছাপিয়ে জ্বলজ্বল করে কখনো কখনো।
পৃথিবীর মতো ক্রিকেটেও দিন বদলায়। আজকের ধনী কালকে গরিব হয়, পরাক্রমশালীরা শক্তি হারিয়ে সাধারণ হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন সেই নিয়মের নির্মমতম ছবি। যে দলটাকে খেলতে দেখাটাই ছিল একটা আনন্দ, যাদের পূর্বসূরিদের সাফল্যভারে কেঁপেছে পুরো পৃথিবী, তারা এখন বাংলাদেশের সামনেই কী কম্পমান! এই দল কোনো চ্যালেঞ্জ নেবে, ৩৭ ওভারে ২২৬-এর কাণ্ড ঘটিয়ে এ কষ্ট কল্পনা। আর যে কল্পনা কষ্টের সেই কল্পনা সত্যি করার লাইনেও তারা যায়নি। বরং শুরুতেই ইলিয়াস সানি ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে দিয়ে দূর দিগন্তের রেখাটা উজ্জ্বল করেছিলেন। পরে সাকিব ফিরিয়েছেন সিমন্সকে কিন্তু তাহলেও এক সেশনে একটা টেস্ট দলকে অল আউট করা যায় না। আর বাংলাদেশের তো মাত্র সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটছে। তারপর তারুণ্য পেরিয়ে যখন যৌবন আসবে তখন হয়তো এ-ও নিত্যদিনের ঘটনা হবে। কাজেই ওরা ২ উইকেটে ১০০ করার পর ১৫ ওভার বাকি থাকতেই খেলা শেষ। করমর্দন আর পারস্পরিক অভিনন্দন বিনিময়ে ম্যাচের সমাপ্তি।
হারানো দিনে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তিদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগই পেতেন না নিশ্চিত। এই দলেও ঠিক সুযোগের দাবিদার কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলছিলাম ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন সামির কথা। তিনি অলরাউন্ডার বলে প্রচলিত, তা অলরাউন্ডার তাঁদেরই বলা হয় যাঁরা ব্যাট-বল দুটোই পারেন। তাঁর অলরাউন্ডারত্বের সংজ্ঞা সম্ভবত অন্য। দুটোর কোনোটাই খুব ভালো পারেন না বলে ব্যাটসম্যান বা বোলার কোনো শ্রেণীতেই আলাদা করে ফেলা যায় না বলে তিনি অধিনায়ক। তা এই অর্থহীন অধিনায়কের কাল সকালে হঠাৎ জ্বলে ওঠার ইচ্ছা হলো। সকালে নেমে ব্যাট চালাতে শুরু করলেন যেভাবে ওয়ানডের শেষ ওভারগুলোতে মরিয়া ব্যাটসম্যানরা ব্যাট থ্রো করে। একেবারে ঝড়ো ইনিংস খেলে ৪৩ বলে ৫৮, আটটি চার আর দুটো ছক্কায়। সামি পাদপ্রদীপের আলোটা এভাবে কেড়ে নিলেন বটে কিন্তু সানিকে তো আর এই ব্যাট দিয়ে আড়াল করা যায় না। তিনি আগের দিনের মতোই জ্বলন্ত। আরো ২ উইকেট নিয়ে পরিণত হলেন অভিষেকে ৬ উইকেট নেওয়া তৃতীয় বাংলাদেশি বোলারে, সাকিব ওপাশ থেকে এমন তৎপর না হলে হয়তো মঞ্জুরুল এবং নাঈমুরকে ছাড়িয়ে সপ্তম উইকেটটাও নিতে পারতেন। তা না পারলেও অভিষেকেই সেনাপতি হয়ে দলকে এনে দিলেন ১০৬ রানের লিড। তার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে যোগ করল ৪২ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৯। সেখানে যিনি নেতৃত্ব দিলেন তাঁর কথাও বলতে হয় আলাদা করে। প্রথম ইনিংসে রক্তপাতের শিকার হয়ে মাঠের বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে ফিদেল এডওয়ার্ডসের চ্যালেঞ্জ সামলেছেন মাথা উঁচু করেই। তবু একটা কিন্তু ছিল। শেষপর্যন্ত যে ওর বলেই আউট হয়েছিলেন। এক দিনের মধ্যেই নিজেকে জানানোর আরেকটা সুযোগ। এবার সেটা নষ্ট না করে স্ট্রোকসমৃদ্ধ হাফ সেঞ্চুরি। প্লেড অন হওয়ার আগে ৯৩ বলে খেলা ৫০ রানের ইনিংসটাই ইনিংস ঘোষণার মূল জ্বালানি হয়ে মুশফিককে সুযোগ করে দিল প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসেই ডিক্লেয়ার করার। সেটা তিনি করলেন এবং তার আগে-পরে যা সেটা বাংলাদেশের টেস্ট দলের সাবালকত্বে উত্তরণের পরিষ্কার ছবি।
চট্টগ্রাম দিয়েছে অনেক। বাংলাদেশ ফিরছে অনেক কিছু নিয়ে এবং নিশ্চিতভাবে সেটা ঢাকা টেস্টে টনিকের কাজ করার কথা। কিন্তু ঢাকার উইকেটের চিন্তা করলে যে একটু থামতে হচ্ছে। ঢাকা শহরের বেশির ভাগ মানুষ যেমন ঢাকায় থেকেও শহরটাকে নিজেদের প্রাণের শহর মনে করে না, তেমনি ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হয়েও যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আর্তিটা ঠিক শুনতে পায় না। উইকেটে বাউন্স তুলনামূলক বেশি, সেটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেই বেশি যায়। টার্ন কম, সেটাও তো বাংলাদেশের জন্য দুঃখের কথা।
চট্টগ্রামের সাবালকত্বে উত্তরণ না ঢাকায় আবার নাবালকত্বে পতন হয়ে যায়!
২. নির্বাচকদের চোখকেও সম্মান করতে হয়। প্রায় জহুরির কাছাকাছি তাঁরা। যাঁকে আনছেন তিনিই আলো ছড়াচ্ছেন। ইলিয়াস সানি-নাসির-রকিবুল।
৩. মুশফিকের অধিনায়কত্ব। বোলিং পরিবর্তনে চাতুর্য, ফিল্ডিং সাজানোর দক্ষতা, ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সপ্রতিভ উপস্থিতি মিলিয়ে দলটাকে দারুণ চনমনে আর একসূত্রে গাঁথা মনে হয়।
কুশিক্ষা : ১. বৃষ্টির সামান্য হানাতে দুই দিন ভেসে যাওয়াটা চূড়ান্ত অপেশাদারি সাংগঠনিক শক্তির পরিচয়। চট্টগ্রামে এরপর ক্রিকেট আয়োজনের আগে জানতে হবে, ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক হয়েছে কি না।
২. ইমরুল কায়েস আবার ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসের আউটটা যাঁরা দেখেননি তাঁদের যেন পুনরাভিনয় করে দেখালেন তিনি কিভাবে আউট হয়েছিলেন। গত কিছুদিনের নিয়মিত ওপেনিং জুটি নিয়ে কী তাহলে ভাবনার সময় হয়ে গেল!
৩. ক্যাচ ফেলা। এই প্রায় নিখুঁত টেস্টেও বিষফোড়ার মতো দুঃখ হয়ে রইল ক্যাচ ফেলা। আগের দিন ইলিয়াস সানির বলে তিনটা ক্যাচ পড়েছে, কাল সকালেও পড়ল গোটাকয়েক। টেস্ট, যেখানে সুযোগ আসে কালেভদ্রে সেখানে একটা ক্যাচের মূূল্য অনেক। বুঝতে হবে!
হিসাবগুলো যতক্ষণে গুছিয়ে এনেছি ততক্ষণে চা বিরতি এসে গেছে। কিন্তু একি, এ তো চা বিরতি নয়, ইনিংস বিরতি। ৩ উইকেটে ১১৯ করে, ২২৫ রানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ দান ছেড়ে দিয়েছে! ওদের টার্গেট একেবারে অবাস্তব নয়, ৩৭ ওভারে ২২৬। তিন দিনের ম্যাচে এর চেয়ে স্পোর্টিং ডিক্লারেশন আর কী হতে পারত! এ রকম পৌরুষ এর আগে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কের কাছ থেকে দেখিনি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কি খুব দেখেছি! এই সেদিনও তো ওয়েস্ট ইন্ডিজে মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর নেতিবাচকতার জন্য নিন্দিত হয়েছেন। না, ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না যে ব্যাটিং প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে কতজন অধিনায়ক এভাবে ম্যাচ জমানোর নূ্যনতম এ সুযোগটা নিতেন। যা বিশ্বমাপের অন্য অধিনায়করা করতেন কি না তাই নিয়ে যখন প্রশ্ন তখন সেটা করে ফেলেছে বাংলাদেশ এবং মুশফিক। একি নাবালক বাংলাদেশের সাবালকত্বে উত্তরণের দিন নয়! জয় আর হার দিয়ে খেলার মূল্যায়ন হয় সাধারণত কিন্তু কাগুজে মূল্যায়নই সব সময় শেষ কথা নয়। হার-জিতের অঙ্কে কখনো স্রেফ কিছু সংখ্যা পরিসংখ্যানের খাতায় রয়ে যায় মুখ গুঁজে। সাহস-বীরত্ব-পৌরুষ-শৌর্য-দর্শক বিনোদন তাকে ছাপিয়ে জ্বলজ্বল করে কখনো কখনো।
পৃথিবীর মতো ক্রিকেটেও দিন বদলায়। আজকের ধনী কালকে গরিব হয়, পরাক্রমশালীরা শক্তি হারিয়ে সাধারণ হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন সেই নিয়মের নির্মমতম ছবি। যে দলটাকে খেলতে দেখাটাই ছিল একটা আনন্দ, যাদের পূর্বসূরিদের সাফল্যভারে কেঁপেছে পুরো পৃথিবী, তারা এখন বাংলাদেশের সামনেই কী কম্পমান! এই দল কোনো চ্যালেঞ্জ নেবে, ৩৭ ওভারে ২২৬-এর কাণ্ড ঘটিয়ে এ কষ্ট কল্পনা। আর যে কল্পনা কষ্টের সেই কল্পনা সত্যি করার লাইনেও তারা যায়নি। বরং শুরুতেই ইলিয়াস সানি ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে দিয়ে দূর দিগন্তের রেখাটা উজ্জ্বল করেছিলেন। পরে সাকিব ফিরিয়েছেন সিমন্সকে কিন্তু তাহলেও এক সেশনে একটা টেস্ট দলকে অল আউট করা যায় না। আর বাংলাদেশের তো মাত্র সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটছে। তারপর তারুণ্য পেরিয়ে যখন যৌবন আসবে তখন হয়তো এ-ও নিত্যদিনের ঘটনা হবে। কাজেই ওরা ২ উইকেটে ১০০ করার পর ১৫ ওভার বাকি থাকতেই খেলা শেষ। করমর্দন আর পারস্পরিক অভিনন্দন বিনিময়ে ম্যাচের সমাপ্তি।
হারানো দিনে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তিদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগই পেতেন না নিশ্চিত। এই দলেও ঠিক সুযোগের দাবিদার কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলছিলাম ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন সামির কথা। তিনি অলরাউন্ডার বলে প্রচলিত, তা অলরাউন্ডার তাঁদেরই বলা হয় যাঁরা ব্যাট-বল দুটোই পারেন। তাঁর অলরাউন্ডারত্বের সংজ্ঞা সম্ভবত অন্য। দুটোর কোনোটাই খুব ভালো পারেন না বলে ব্যাটসম্যান বা বোলার কোনো শ্রেণীতেই আলাদা করে ফেলা যায় না বলে তিনি অধিনায়ক। তা এই অর্থহীন অধিনায়কের কাল সকালে হঠাৎ জ্বলে ওঠার ইচ্ছা হলো। সকালে নেমে ব্যাট চালাতে শুরু করলেন যেভাবে ওয়ানডের শেষ ওভারগুলোতে মরিয়া ব্যাটসম্যানরা ব্যাট থ্রো করে। একেবারে ঝড়ো ইনিংস খেলে ৪৩ বলে ৫৮, আটটি চার আর দুটো ছক্কায়। সামি পাদপ্রদীপের আলোটা এভাবে কেড়ে নিলেন বটে কিন্তু সানিকে তো আর এই ব্যাট দিয়ে আড়াল করা যায় না। তিনি আগের দিনের মতোই জ্বলন্ত। আরো ২ উইকেট নিয়ে পরিণত হলেন অভিষেকে ৬ উইকেট নেওয়া তৃতীয় বাংলাদেশি বোলারে, সাকিব ওপাশ থেকে এমন তৎপর না হলে হয়তো মঞ্জুরুল এবং নাঈমুরকে ছাড়িয়ে সপ্তম উইকেটটাও নিতে পারতেন। তা না পারলেও অভিষেকেই সেনাপতি হয়ে দলকে এনে দিলেন ১০৬ রানের লিড। তার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে যোগ করল ৪২ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৯। সেখানে যিনি নেতৃত্ব দিলেন তাঁর কথাও বলতে হয় আলাদা করে। প্রথম ইনিংসে রক্তপাতের শিকার হয়ে মাঠের বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে ফিদেল এডওয়ার্ডসের চ্যালেঞ্জ সামলেছেন মাথা উঁচু করেই। তবু একটা কিন্তু ছিল। শেষপর্যন্ত যে ওর বলেই আউট হয়েছিলেন। এক দিনের মধ্যেই নিজেকে জানানোর আরেকটা সুযোগ। এবার সেটা নষ্ট না করে স্ট্রোকসমৃদ্ধ হাফ সেঞ্চুরি। প্লেড অন হওয়ার আগে ৯৩ বলে খেলা ৫০ রানের ইনিংসটাই ইনিংস ঘোষণার মূল জ্বালানি হয়ে মুশফিককে সুযোগ করে দিল প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসেই ডিক্লেয়ার করার। সেটা তিনি করলেন এবং তার আগে-পরে যা সেটা বাংলাদেশের টেস্ট দলের সাবালকত্বে উত্তরণের পরিষ্কার ছবি।
চট্টগ্রাম দিয়েছে অনেক। বাংলাদেশ ফিরছে অনেক কিছু নিয়ে এবং নিশ্চিতভাবে সেটা ঢাকা টেস্টে টনিকের কাজ করার কথা। কিন্তু ঢাকার উইকেটের চিন্তা করলে যে একটু থামতে হচ্ছে। ঢাকা শহরের বেশির ভাগ মানুষ যেমন ঢাকায় থেকেও শহরটাকে নিজেদের প্রাণের শহর মনে করে না, তেমনি ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হয়েও যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আর্তিটা ঠিক শুনতে পায় না। উইকেটে বাউন্স তুলনামূলক বেশি, সেটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেই বেশি যায়। টার্ন কম, সেটাও তো বাংলাদেশের জন্য দুঃখের কথা।
চট্টগ্রামের সাবালকত্বে উত্তরণ না ঢাকায় আবার নাবালকত্বে পতন হয়ে যায়!
No comments