টমেটো বেগুন কপি_ মাঠজুড়ে সবুজ ব্যসত্ম কৃষক- ময়মনসিংহের দুর্গম চরে বাম্পার ফলন, দৈনিক শতাধিক ট্রাক by বাবুল হোসেন
ময়মনসিংহ ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের দুর্গম বোররচরের মাঠের পর মাঠ জুড়ে ঠাসা শীতের সবজিতে। েেতর পর েেত ধরে আছে কাঁচা পাকা টমেটো। বেগুন, কাঁচামরিচ আর ফুলকপি বাঁধাকপিসহ শীতের সব সবজি যতদূর চোখ যায়।
সবজির এই ভরা মৌসুমে েেত ব্যসত্ম বোররচরের কিষান- কিষানীসহ বাড়ির ছোট বড় সকল মানুষ। সবজি তোলা, বাছাই, বেচাবিক্রি_ সবকিছুই চলছে বোররচরের মাঠে। তুলনামূলক ফলন কম ও কাঙ্ৰিত দাম না পাওয়ায় অসন্তুষ্ট কৃষকদের এখন দম ফেলার সময় নেই। বোররচরের মাঠ থেকে প্রতিদিন গড়পড়তায় শতাধিক ট্রাক সবজি নিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার আড়তসহ দেশের নানা স্থানে। কেবল লাভজনক সবজির আবাদ করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বোররচরের নদীভাঙ্গা অভাবী মানুষজন। বোররচর। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র পারের এক দুর্গম চরের নাম। এই বোররচরের সিংহভাগ এখনও ব্রহ্মপুত্রের পেটে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনকবলিত বোররচরের সংগ্রামী মানুষ গত কয়েক বছর আগেও ছিল অনেকটা নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যসত্ম। অভাব অনটনের সঙ্গে নিত্য লড়াই সংগ্রাম ছিল বোররচরের মানুষের একমাত্র নিয়তি। কিন্তু সেদিন এখন কেবলই অতীত। গত পাঁচ/ছয় বছর ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বোররচরের অভাবী মানুষজন। শীতকালীন সবজি আবাদ ভাগ্য খুলে দিয়েছে বোররচরের মানুষজনের। বোররচরে একখ- ফসলি জমি আছে এ রকম সব মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা সচ্ছল_ এমনটাই দাবি করেছেন বোররচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাহারম্নল ইসলাম বুলবুল। ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২৫ কি.মি. দূরের গ্রাম বোররচর। বোররচরের ঠিক মাঝখান বরাবর অনেকটা সর্পিল আকারে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র। জলবায়ুর পরিবর্তনের পরও প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে বোররচর। একদিক লোকালয়ের জমি ভাঙছে তো আরেকদিকে জেগে উঠছে বিসত্মীর্ণ চর। আর জেগে ওঠা সেই পলিমাটি জমা উর্বর চরেই আবাদ হচ্ছে শীতকালীন নানারকম শাকসবজি। মাঠের পর মাঠ ঘন সবুজে ঢাকা। চারদিকে যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজের সমারোহ। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচের তে। শত শত একরে গত পাঁচ/ছয় বছর ধরে চলছে এই সবজির আবাদ। গেল মৌসুমের এক হিসাব থেকে জানা গেছে কেবল ঢাকার আড়তেই বোররচরের সবজি বেচাবিক্রি হয়েছে ৩৬ কোটি টাকার। এর বাইরে ময়মনসিংহের স্থানীয় হাটবাজারে বেচাবিক্রি তো ছিলই। এর আগের মৌসুমে এই অঙ্ক ছিল ৩২ কোটি টাকা। তবে এবারে সবজির ফলন কম হওয়ায় এবং কাঙ্ৰিত দাম না মেলায় বোররচরের কৃষকরা বলছেন এই অঙ্ক নেমে আসতে পারে। বোররচরে শীতকালীন সবজির এখন ভরা মৌসুম। ফুলকপি, বাঁধাকপি আর বেগুন উঠেছে মৌসুমের শুরম্নতেই। এখন চলছে টমেটো আর কাঁচামরিচের পালা। বোররচরে ব্যসত্ম কৃষকরা রাত দিন মাঠে কাজ করছে। বসে নেই বাড়ির কিষানীরাও। তে থেকে কাঁচা টমেটো তুলে পরিষ্কার ও বাছাইয়ের পর জাগ দিয়ে পাকানো হচ্ছে বিশেষ কায়দায়। পাকা টমেটো পরে চালান দেয়া হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের নানাস্থানে। এজন্য বোররচরে প্রতিদিন কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক ভিড় করছে। বোররচরের টমেটো, বেগুন, কপি, মরিচ যাচ্ছে ঢাকার কাওরানবাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজারে। এর বাইরে ছোট পিকআপ ও রিক্সাভ্যানে বোররচরের সবজি যাচ্ছে সিলেট, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, বগুড়া ও ময়মনসিংহের স্থানীয় হাটবাজারে। সবকিছু মিলিয়ে বোররচরে এখন শীতকালীন সবজি বেচাবিক্রির ধুম পড়েছে। নগদ কাঁচা অর্থের লেনদেনে চাঙ্গা বোররচরের কৃষককুল। প্রতিদিন এই লেনদেনের অঙ্ক অনত্মত ১০ লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন বোররচরের সম্পন্ন কৃষকরা। বোররচর কুষ্টিয়াপাড়া গ্রামের ুদ্র ও প্রানত্মিক কৃষক হেলাল উদ্দিন (৫৫)। চলতি শীতকালীন সবজি মৌসুমে তিনি ৩৬ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন টমেটো, বেগুন, কপি ও মরিচ। সার, কীটনাশক, বীজ ও লেবারসহ সাকল্যে খরচ হয়েছে তার ১৮ হাজার টাকা। মাত্র ৯০-১২০ দিনের এই শীতের ফসল থেকে তিনি বিক্রি করেছেন ৬০ হাজার টাকা। ফলন কম ও কাঙ্ৰিত মূল্য না পাওয়ার পরও হেলালের এই ফসল থেকে লাভ হয়েছে এবার ৪২ হাজার টাকা। পাইকাররা তার তে থেকেই কিনে নিয়েছে সব সবজি। বোররচর পশ্চিম কুৃষ্টিয়াপাড়া গ্রামের সম্পন্ন্ কৃষক আব্দুর রউফ (২৮) এবারের মৌসুমে এই সবজির আবাদ করেছেন ৮৮ শতাংশ জমিতে। প্রতি ১১ শতাংশ জমির সবজি আবাদে গড়পড়তায় ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। এই হিসাবে মৌসুমী এই সবজি আবাদ থেকে বোররচরের কৃষকরা অর্ধেক লাভ পাচ্ছেন বলে জানান রউফ। অনেকে আবার জমি ভাড়া নিয়েও আবাদ করছেন লাভজনক এই সবজির। মৌসুমের জন্য দু'তিন হাজার টাকায় ভাড়ায় মিলছে চরের জমি। অনেক বেপারি থেকে শুরম্ন করে অন্য এলাকার মানুষজনও বোররচরের জমি ভাড়া নিচ্ছেন সবজি আবাদের জন্য। বোররচরের কৃষকরা জানান, গত পাঁচ/ছয় বছর ধরে বোররচরে এই সবজির আবাদ চলছে। এর আগে এসব জমিতে আউশ ধান, পাট, বাদাম, ডাল ও আলু জাতীয় শস্য আবাদ করা হতো। এ সময়ে বোররচরের এই লাভজনক সবজি আবাদ ছড়িয়ে পড়ে মৃধাপাড়া, পয়েসত্মি তারাপুর, বাঘেরকান্দা, জাফরম-লের পাড়া, ডিগ্রীপাড়া, কুষ্টিয়ারচর, মধুমারীসহ গোটা বোররচর ইউনিয়ন ও আশপাশের চরগুলোতে। কৃষকদের দেয়া হিসাবমতে, ব্রহ্মপুত্রপারের বোররচর ও এর আশপাশের অনত্মত তিন/চার শত একর জমিতে এখন শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। এতে বোররচরের প্রায় সকল পরিবার এখন সবজি আবাদে জড়িত। সবজির এই ভরা মৌসুমে বোররচর থেকে প্রতিদিন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে করে প্রায় ৫শ' মে. টন টমেটো, ৪শ' মে. টন কপি, ৫শ' মণ বেগুন ও সপ্তাহে ৩/৪ দিন ২শ' মণ করে কাঁচামরিচ যাচ্ছে কেবল ঢাকার আড়তে। কৃষকরা জানিয়েছে, মৌসুমের শুরম্নতে কিছুটা দাম মিললেও দিন দিন তা পড়ে যাচ্ছে। গেলবারের ১৭/১৮ টাকা কেজি দরের টমেটো এবার েেত বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭/৮ টাকায়। বর্তমানে প্রতিমণ বেগুন েেত ২৫০ টাকায়, কাঁচামরিচ ৩৫০-৪০০ টাকায়, টমেটো ৩৫০ টাকায় বেচাবিক্রি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়াসহ জমিতে বন্যার পানি না ওঠার কারণে ফলনও মিলছে এবার তুলনামূলক কম। এর সঙ্গে সবজি পরিবহনে পথে পথে চাঁদাবাজি কৃষকদের লাভের অঙ্ক হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব নানা কারণে লোকসান না হলেও কাাঙ্ৰিত মুনাফা পাবে না বলে আশঙ্কা করছেন বোররচরের কৃষকরা।
No comments