জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়- মন চলো পাখির নগরে by জান্নাতুল ফেরদৌস
‘শীতকালে ঘুম ভাঙে খুব সকালে, অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির শব্দে। ঘুম ভাঙার পর জানালা খুলে পাশের লেকটার দিকে তাকাই। গাঢ় কুয়াশায় হালকাভাবে চোখে পড়ে লাল শাপলা আর শাপলার পাতার ওপর নানা রঙের অতিথি পাখি। যতবার দেখি ততবারই আমি মুগ্ধ হই।’
বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান।
এখন শীতকাল। শীতের সঙ্গে সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ছে অতিথি পাখির আগমন। এখানে দিন শুরু হয় পাখির কলকাকলিতে। মানুষের ঘুম ভাঙার অনেক আগেই পাখিগুলোর কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। তীব্র শীতে জড়সড় হয়ে ছাত্ররা যখন ক্লাসের দিকে ছোটেন, তখন রাস্তার পাশের লেকগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় কর্মব্যস্ত অসংখ্য পাখি, কেউ খাবার খুঁজতে ব্যস্ত, কেউ পানিতে সাঁতার কাটছে, কেউ চুপচাপ শাপলা পাতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আবার হয়তো ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি শব্দ করতে করতে উড়ে যাচ্ছে এক লেক থেকে অন্য লেকে।
এ রকম এক সকালেই হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে যায় ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী ফারজানা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, সকালে সবচেয়ে বেশি পাখি দেখা যায়, তাই খুব ভোরে চলে এসেছি। এখানে অনেক পাখি, কুয়াশা কেটে গেলে আরও ভালো বোঝা যাবে।’
বেলা বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। না, শুধু বাইরে থেকে আসা দর্শনাথী নয়, ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাসের অবসরে আড্ডা দিতে বসে যান লেকগুলোর পাশে। এ রকম এক আড্ডায় কথা হয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বছর ক্যাম্পাসে পাখি কম এসেছিল, তখন লেকগুলোর দিকে তাকালে মনে হতো, কী যেন নেই। এবার প্রচুর পাখি এসেছে। পাখি দেখতে খুব ভালো লাগে।’ তাঁর কথার রেশ ধরেই লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান বলেন, ‘এ বছরের নভেম্বরের শুরুতে যখন পাখি আসতে শুরু করে, তখন অন্য রকম একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল মনে। আসলে শীতকালে অতিথি পাখি ছাড়া আমাদের ক্যাম্পাসের কথা ভাবাই যায় না।’
শীতের এই অতিথিরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে কতটা প্রিয়, তা বোঝা যায় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিজভী সুলতানার কথায়, ‘সকালের ঘুম আমার খুব প্রিয়। ঢাকায় বাসা হওয়ার কারণে হলে খুব বেশি থাকা হয় না। তবে শীতকালে হলে থাকলে খুব সকালে উঠে বন্ধুদের নিয়ে হাঁটতে বের হই শুধু অতিথি পাখি দেখতে।’
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘দুপুরের দিকে পাখিগুলো যখন সারি বেঁধে লেকের পাশে ঘাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন দেখতে খুব ভালো লাগে। আর মজা লাগে যখন দেখি শাপলার একটা পাতার ওপর তিনটা পাখি দাঁড়িয়ে আছে, মানে হয় এদের শরীর কতটা হালকা।’
বিকেলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আকাশে উড়তে শুরু করে। এগুলোর কলকাকলির সঙ্গে ক্যাম্পাস মুখরিত হতে থাকে শিক্ষার্থীদের আড্ডায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফুন্নাহার বলেন, ‘প্রতিদিনই আড্ডা দিই, প্রতিদিনই বসে বসে পাখি দেখি।’
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্র রায় বলেন, ‘একদিন বিকেলে ছবি তুলতে বের হয়েছি বন্ধুদের নিয়ে। হঠাৎ এক বন্ধু বলল আকাশের দিকে তাকাতে, তাকিয়ে আমার চোখ আটকে গেল। যত দূর দেখা যায়, পুরো আকাশজুড়ে পাখি আর পাখি, আমি একটার পর একটা ছবি তুলতে শুরু করলাম, কিন্তু একটা ছবিও বাস্তবের মতো সুন্দর হচ্ছিল না। হঠাৎ আমার মনে হলো, এই সৌন্দর্যকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করা যায় না। এই ছবি গেঁথে থাকবে আমাদের মনের ফ্রেমে।’
প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘অতিথি পাখি আমাদের ক্যাম্পাসের অমূল্য সম্পদ। অনেক দূরের দেশ থেকে ২৫-৩০ প্রজাতির পাখি শীতের সময় এখানে আসে আশ্রয়ের খোঁজে। এদের রক্ষার দায়িত্বও তাই আমাদের। অতিথি পাখি দেখতে সংরক্ষিত এলাকায় চলাচল করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে নিয়মগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা আমাদের মানা উচিত, যাতে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির বিচরণ বিঘ্নিত না হয়।’
এখন ঢাকায় শীত জেঁকে বসেছে। এখনই তো পাখি দেখার সময়। আপনি আসছেন কবে?
এখন শীতকাল। শীতের সঙ্গে সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ছে অতিথি পাখির আগমন। এখানে দিন শুরু হয় পাখির কলকাকলিতে। মানুষের ঘুম ভাঙার অনেক আগেই পাখিগুলোর কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। তীব্র শীতে জড়সড় হয়ে ছাত্ররা যখন ক্লাসের দিকে ছোটেন, তখন রাস্তার পাশের লেকগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় কর্মব্যস্ত অসংখ্য পাখি, কেউ খাবার খুঁজতে ব্যস্ত, কেউ পানিতে সাঁতার কাটছে, কেউ চুপচাপ শাপলা পাতার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আবার হয়তো ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি শব্দ করতে করতে উড়ে যাচ্ছে এক লেক থেকে অন্য লেকে।
এ রকম এক সকালেই হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে যায় ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী ফারজানা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, সকালে সবচেয়ে বেশি পাখি দেখা যায়, তাই খুব ভোরে চলে এসেছি। এখানে অনেক পাখি, কুয়াশা কেটে গেলে আরও ভালো বোঝা যাবে।’
বেলা বেড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। না, শুধু বাইরে থেকে আসা দর্শনাথী নয়, ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাসের অবসরে আড্ডা দিতে বসে যান লেকগুলোর পাশে। এ রকম এক আড্ডায় কথা হয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বছর ক্যাম্পাসে পাখি কম এসেছিল, তখন লেকগুলোর দিকে তাকালে মনে হতো, কী যেন নেই। এবার প্রচুর পাখি এসেছে। পাখি দেখতে খুব ভালো লাগে।’ তাঁর কথার রেশ ধরেই লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান বলেন, ‘এ বছরের নভেম্বরের শুরুতে যখন পাখি আসতে শুরু করে, তখন অন্য রকম একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল মনে। আসলে শীতকালে অতিথি পাখি ছাড়া আমাদের ক্যাম্পাসের কথা ভাবাই যায় না।’
শীতের এই অতিথিরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে কতটা প্রিয়, তা বোঝা যায় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিজভী সুলতানার কথায়, ‘সকালের ঘুম আমার খুব প্রিয়। ঢাকায় বাসা হওয়ার কারণে হলে খুব বেশি থাকা হয় না। তবে শীতকালে হলে থাকলে খুব সকালে উঠে বন্ধুদের নিয়ে হাঁটতে বের হই শুধু অতিথি পাখি দেখতে।’
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘দুপুরের দিকে পাখিগুলো যখন সারি বেঁধে লেকের পাশে ঘাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন দেখতে খুব ভালো লাগে। আর মজা লাগে যখন দেখি শাপলার একটা পাতার ওপর তিনটা পাখি দাঁড়িয়ে আছে, মানে হয় এদের শরীর কতটা হালকা।’
বিকেলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আকাশে উড়তে শুরু করে। এগুলোর কলকাকলির সঙ্গে ক্যাম্পাস মুখরিত হতে থাকে শিক্ষার্থীদের আড্ডায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফুন্নাহার বলেন, ‘প্রতিদিনই আড্ডা দিই, প্রতিদিনই বসে বসে পাখি দেখি।’
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্র রায় বলেন, ‘একদিন বিকেলে ছবি তুলতে বের হয়েছি বন্ধুদের নিয়ে। হঠাৎ এক বন্ধু বলল আকাশের দিকে তাকাতে, তাকিয়ে আমার চোখ আটকে গেল। যত দূর দেখা যায়, পুরো আকাশজুড়ে পাখি আর পাখি, আমি একটার পর একটা ছবি তুলতে শুরু করলাম, কিন্তু একটা ছবিও বাস্তবের মতো সুন্দর হচ্ছিল না। হঠাৎ আমার মনে হলো, এই সৌন্দর্যকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করা যায় না। এই ছবি গেঁথে থাকবে আমাদের মনের ফ্রেমে।’
প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘অতিথি পাখি আমাদের ক্যাম্পাসের অমূল্য সম্পদ। অনেক দূরের দেশ থেকে ২৫-৩০ প্রজাতির পাখি শীতের সময় এখানে আসে আশ্রয়ের খোঁজে। এদের রক্ষার দায়িত্বও তাই আমাদের। অতিথি পাখি দেখতে সংরক্ষিত এলাকায় চলাচল করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে নিয়মগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা আমাদের মানা উচিত, যাতে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির বিচরণ বিঘ্নিত না হয়।’
এখন ঢাকায় শীত জেঁকে বসেছে। এখনই তো পাখি দেখার সময়। আপনি আসছেন কবে?
No comments