বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই পদ্মা সেতু নিয়ে সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রী by হামিদ-উজ-জামান মামুন
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই পদ্মা সেতুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটিকে রাজি করানোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিকল্প অর্থায়নের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জোরেশোরে এ কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, শীঘ্রই প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ংকিমের সঙ্গে সাক্ষাতের তারিখ পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। পদ্মা সেতু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নতুন প্রেসিডেন্টকে সব বিষয় খুলে বলা দরকার। ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসবে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীও থাকবেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কানাডার তিন নাগরিক ও নাভালিন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘুষের ডায়েরি সংগ্রহের বিষয়ে রয়েল মাউন্টেড পুলিশের চাওয়া তথ্য সরবরাহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি কানাডা সফরেও যাবেন দুদক কর্মকর্তারা।মঙ্গলবার সচিবালয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখনও বিদ্যমান প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছি, কারণ এটির কাজ দ্রুত শুরু করতে চাই। বর্তমানে প্রকল্প যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে বিশ্বব্যাংক সম্মতি দিলেই দশ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে। তবে বিশ্বব্যাংক না এলেও সমস্যা নেই, অন্যদের নিয়ে প্রকল্প হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটু দেরি হলেও অর্থায়ন সম্ভব হবে, কারণ আজকের বাংলাদেশ আর ২০০৬/০৭ সালের বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে আসবে, তবে সমস্যাটা সময় নিয়ে, আমরা দ্রুত কাজ করতে চাই।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দাতারা এ প্রকল্পে থাকবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি সেই চেষ্টাই করছি, সফল বা ব্যর্থ হলে বলব। তিনি জানান, বিকল্প অর্থায়নে চীনের একটি প্রস্তাব রয়েছে। সেটিও বর্তমান প্রকল্পের মতো। ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। সুদের হারও একই। ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব চায়না এতে বিনিয়োগ করবে। তবে শর্তগুলো নিয়ে আরও আলোচনা করতে হবে। এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প, তাই নতুন করে চুক্তি করতে হবে। এগুলো সময় সাপেক্ষ।
বিকল্প অর্থায়ন বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য বিকল্প সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। এখনো কোনটিই চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে বিশ্বব্যাংককে অর্থায়নে রাজি করানো প্রচেষ্টাও অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আঞ্চলিক টেকসই উন্নয়ন বিভাগের মহাপরিচালক এস চন্দরের সঙ্গে বৈঠকে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। কেননা তিনি নতুন তাই সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য এসেছিলেন।
অন্যদিকে এসএনসি নাভালিনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা ও কানাডিয়ান নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ১০ পার্সেন্ট ঘুষের তথ্য পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিম শীঘ্রই কানাডা যাচ্ছে বলে দুদক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। এই লক্ষ্যে দুদক কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নতুন করে পুরোদমে যোগাযোগও শুরু করেছে। দুদক গত এক বছর ধরে কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে যে চিঠি লিখে আসছিল (এমএলআরএ) তার জবাব আসার পর তাদের চাওয়া বেশ কিছু তথ্যসহ পাল্টাজবাবও পাঠানো হয়েছে দুদক থেকে। সোমবার দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের মাধ্যমে ওই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
দুদকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, দুদক টিম কানাডা সফরের অনুমতি পেতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার এম সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, কানাডার সঙ্গে আমাদের সর্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে। আশা করি ফলপ্রসূ কিছু হবে এবার।
দুদক জানায়, গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের দায়ের করা মামলার এজাহারের ইংরেজী ভার্সন, অনুসন্ধানকালে নাভালিনের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্য প্রমাণ, বনানীর সেতু ভবনে মন্ত্রীর কাছে ওই তিন কর্মকর্তার যাতায়াতের লিখিত ডকুমেন্টসহ দুদকের যে চারজন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কানাডা গমন করতে চান তাদের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত টিম ওই দেশে গিয়ে কী ধরনের তথ্য চাইবে, কিভাবে নাভালিনের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এ বিষয়েও কিছু ধারণা দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। এতে বলা হয়, কানাডিয়ান নাগরিক ও এসএনসি নাভালিনের শীর্ষ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) মোহাম্মদ ইসমাইল, রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ালেসকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া বাংলাদেশে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব নয়।
এর আগে গত সপ্তাহে রয়েল কানাডিয়ান পুলিশ ও সে দেশের এ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে পাঠানো চিঠিতে তিন কানাডীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে দুদকের কাছে কী ধরনের অভিযোগ আছে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে তিন জনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারের কপিও চাওয়া হয়। দুদক এ বিষয়ে লিখিতভাইে তাদের চাওয়ার বিষয়টিও জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদক গত ১৭ ডিসেম্বর সাবেক দুই মন্ত্রীকে মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে রেখে সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভুইয়া, সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পরামর্শক সংস্থা নিয়োগে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস ও এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় এজেন্ট মোহাম্মদ মোস্তফাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সেতু প্রকল্পে দুর্নীতিন ষড়যন্ত্র, ঘুষ গ্রহণের চেষ্টা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মামলায় এসএনসি লাভালিনের শীর্ষ তিন কর্মকর্তা রমেশ সাহা, মোহাম্মদ ইসমাইল ও কেভিন ওয়ালেসকেও আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এসে সেতুর পরামর্শক সংস্থার কাজ পেতে মন্ত্রী সচিবের সঙ্গে দেনদরবার, ঘুষ লেনদেনে বৈঠক ও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ বাদী হয়ে দায়ের করা ওই মামলার তদন্ত করছে চার সদস্যের একটি টিম।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে মামলার এফআইআরের কপি পাঠালে তারা পর্যবেক্ষণ করে আরও বেশ কিছু বিষয়ে দুদকের কাছে জানতে চায়। সেগুলো উত্তরও পাঠিয়েছে দুদক। এখন অপেক্ষা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রতিবেদনের জন্য।
No comments