যে সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে না by তারেক শামসুর রেহমান
সরকার যখন তার চার বছরের বর্ষপূর্তি পালন করছে, তখন সংবাদপত্রে এমন কতগুলো সংবাদ ছাপা হয়েছে, যা আমাদের আশাবাদী করে না। শুধু তা-ই নয়, সরকারের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগের সৃষ্টি করে। আমাদের সংবিধান নিয়ে আমরা গর্ব করি।
আমাদের সংবিধানে বেশ কিছু সুন্দর অনুচ্ছেদ রয়েছে, যা আমাদের অধিকারকেই শুধু সুরক্ষা করেনি; বরং একই সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনসাধারণের অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে এবং দৈনন্দিন জীবনে এর যে প্রভাব পড়বে, তাতে করে এ প্রশ্নটা এসেই যায় যে রাষ্ট্রের ভূমিকাটা তাহলে কী? যেখানে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, তখন সরকার দাম বাড়াল। কেন? সরকারের যুক্তি- ভর্তুকির ওপর থেকে 'চাপ' কমাতেই এই মূল্যবৃদ্ধি! মন্ত্রীরা গর্ব করে বলেন, পাশের দেশের চেয়ে আমাদের দাম কম। মিথ্যা বলেননি আমাদের মন্ত্রীরা। কিন্তু মন্ত্রী বাহাদুররা কী জানেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা কথা ব্যবহার করা হয়- PPP, অর্থাৎ Purchasing Power Parity। মূল কথা হচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী মাথাপিছু আয় নির্ধারণ করার এক ধরনের হিসাব। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য একদিকে যেমন PPP ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে তেমন ব্যবহার করা হয় PQLI, অর্থাৎ Physical Quality of Life Index। একটু ব্যাখ্যা করলে যা বলা যায় তা হচ্ছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী মাথাপিছু আয় নির্ধারণ করা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর ভারতের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এক নয়। তাদের মাসিক আয়, আমাদের টাকার মানের হিসাবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি- প্রায় দ্বিগুণ। এ ক্ষেত্রে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেশি। জ্বালানি তেলের যে দাম সেখানে, তা জনজীবনে যে প্রভাব ফেলে, তা অনেকটা সহনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে জনজীবনে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাবে গ্যাসের দাম বাড়বে, বাড়বে বিদ্যুতের দাম। তাহলে সরকার কী জনস্বার্থে এ কাজটি করল? সংবিধানে যেখানে জনসাধারণের নূ্যনতম মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, এতে করে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার খর্বের শামিল। আমরা পরিসংখ্যান দিয়েও আমাদের যুক্তির পক্ষে কথা বলতে পারি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কেননা পরিবহন খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৭.৪১ শতাংশ, সেখানে ২০১২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। আর চলতি ২০১৩ সালে তা যদি ১৫ শতাংশকে অতিক্রম করে আমি অবাক হব না। একই সময় ২০০৯ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬.১৯ শতাংশ। আর ২০১২ সালে এ হার ছিল ৬.৪২ শতাংশ। ২০১৩ সালে এই হার যে বাড়বে, তা তো কাউকে বলে দিতে হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। লিটারপ্রতি সাত টাকা দাম বাড়ায় প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে গত বছরের চেয়ে প্রায় এক টাকা বেশি খরচ হবে। বোরো উৎপাদনে প্রায় ৪১ শতাংশ খরচ হয় সেচকাজে। ডিজেলের দাম বাড়ায় এ ব্যয় বেড়ে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। অঙ্কের হিসাবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা কৃষকের পকেট কাটা যাবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা। এই তথ্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের। করপোরেশনের মতে, কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বাড়তি ৩৫০ কোটি টাকা, আর কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎবিহীন অঞ্চলে জনগণকে বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ৩১৬ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এই বাড়তি অর্থ যে মূল্যস্ফীতিকে আরো উস্কে দেবে, তা কাউকে বলে দিতে হয় না। তাহলে সরকারের দায়িত্বটি কী? শুধু ক্ষমতায় থাকা আর গণবিরোধী এসব কর্মসূচি গ্রহণ করা? সরকার তো জনস্বার্থে কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়ন করে। কিন্তু যেসব কর্মসূচি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তা তো কোনো অবস্থাতেই নেওয়া উচিত নয়। সরকার শেষ সময়ে এসে এমন সব কর্মসূচি নিচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই সরকারের পক্ষে যাবে না। জনস্বার্থের সঙ্গে যেসব বিষয় জড়িত, সেসব বিষয়ে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত। সরকার কোনো কোনো খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু তা জনগণের উপকারে আসছে না। যেমন বলা যেতে পারে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা মেটাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে। উদ্দেশ্য, সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা পূরণ করা। এটি ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। কিন্তু এতে করে কি সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে? না, সফল হয়নি। কেননা এই শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এটা অতীতে কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। এই শীতেও যখন লোডশেডিং হচ্ছে, তখন গ্রীষ্ম আমাদের কিভাবে কাটবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। স্পষ্টতই এবারের গ্রীষ্মটা আমাদের ভালো যাবে না। অথচ শত শত কোটি টাকা আমরা কুইক রেন্টালের নামে ভর্তুকি দিয়েছি। অভিযোগ আছে, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের সঙ্গে জড়িত। দেশে বর্তমানে মোট রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৩২টি। বেশির ভাগই ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে চালাতে হয়। সরকার এ খাতে ভর্তুকি দেয়। কোনো কোনো কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি, সে ক্ষেত্রে ২০১১ সালে ভর্তুকি দিয়েছিল ছয় হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর ২০১২ সালের পরিসংখ্যান আমাদের হাতে এলে দেখা যাবে ভর্তুকির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার অঙ্ককেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক। এটা সরকারের প্রথম 'প্রায়োরিটি' হওয়া উচিত ছিল; কিন্তু তা হয়নি। সরকারের একজন জ্বালানি উপদেষ্টা থাকলেও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের প্রচুর কয়লাসম্পদ রয়েছে, যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মোট পাঁচটি খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। মজুদের পরিমাণ দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন টন। এ পরিমাণ কয়লাসম্পদ ৭৩ টিসিএফ গ্যাসের সমতুল্য। তবে সবটা তোলা যাবে না। যা তোলা যাবে, তা আমাদের ৩০ থেকে ৪০ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা দেবে। কয়লা উত্তোলন নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে সত্য, একটি 'রাজনীতি'ও আছে। তবে সরকার যদি আন্তরিক হতো, আমার বিশ্বাস আমরা 'জাতির স্বার্থে' কয়লা উত্তোলন করে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম। অভিযোগ আছে, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে 'সহায়তা' করার উদ্দেশ্যেই সরকার কয়লা উৎপাদনে যাচ্ছে না। গত এক বছরে এ ব্যাপারে কোনো বড় অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, সরকার কার স্বার্থ রক্ষা করছে? জনগণের না 'বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের'?
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সরকারের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। এই শীতের মৌসুমে শীতের সবজির দাম আকাশছোঁয়া। কৃষক উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। মাঝখানে কিছু ফড়িয়া ব্যবসায়ী কৃষিপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনকে তাঁদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত নীতির কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। আগে মানুষ যে পরিমাণ অর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে ব্যয় করত, এখন আর তা করতে পারে না। বেতন বৃদ্ধি না পাওয়ায় তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে। অথচ এই সাধারণ মানুষের ভোটেই মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। নির্বাচনী ইশতেহারও তারা পূরণ করতে পারেনি। মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু অদক্ষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মন্ত্রীরা রয়ে গেছেন। ২০১২ সালের অর্থনীতির বেহাল দৃশ্য চলতি ২০১৩ সালেও প্রভাব ফেলতে পারে। বাড়তে পারে জনদুর্ভোগ।
আমাদের আতঙ্কের একটা বড় জায়গা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। মন্ত্রী বদল করেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা আজও সরকার করতে পারেনি। ইলিয়াস আলী 'হারিয়ে' গেলেন। সরকার তাঁকে উদ্ধার করতে পারল না। ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের হাতকড়া পরা অবস্থায় মৃতদেহ পাওয়া গেল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়ি-মনোহরপুর মাঠের খালের পাশে। কে খুন করল তাঁকে? অভিযুক্ত র্যাব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো সরকারের। গত এক বছরে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রশ্নে সরকারের ব্যর্থতা ছিল চরম। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র- কোনো একটি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য খুব উজ্জ্বল নয়। রিজার্ভ বেড়েছে। তাতে অবদান রেখেছেন সাধারণ মানুষ, যাঁরা বিদেশে কঠিন পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন।
সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। পদ্মা সেতু আটকে গেল। ডেসটিনি, হলমার্ক লুট করল শত শত কোটি টাকা। পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নাড়ালেন সরকারের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা। মূল ব্যক্তিরা কেউই গ্রেপ্তার হলেন না। শেয়ারবাজার থেকে চলে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থমন্ত্রী অভিযোগ আনলেন 'ফাটকাবাজির'। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের দুর্নীতি তাড়াতে নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেলেন। তাই ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ যে বিপুল আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগের ওপর, তা এখন ফিকে হয়ে আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতা, ব্যর্থতা তাই আমাদের আশাবাদী করে না।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
আমাদের আতঙ্কের একটা বড় জায়গা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। মন্ত্রী বদল করেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা আজও সরকার করতে পারেনি। ইলিয়াস আলী 'হারিয়ে' গেলেন। সরকার তাঁকে উদ্ধার করতে পারল না। ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের হাতকড়া পরা অবস্থায় মৃতদেহ পাওয়া গেল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আদাবাড়ি-মনোহরপুর মাঠের খালের পাশে। কে খুন করল তাঁকে? অভিযুক্ত র্যাব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো সরকারের। গত এক বছরে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রশ্নে সরকারের ব্যর্থতা ছিল চরম। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র- কোনো একটি ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য খুব উজ্জ্বল নয়। রিজার্ভ বেড়েছে। তাতে অবদান রেখেছেন সাধারণ মানুষ, যাঁরা বিদেশে কঠিন পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন।
সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। পদ্মা সেতু আটকে গেল। ডেসটিনি, হলমার্ক লুট করল শত শত কোটি টাকা। পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নাড়ালেন সরকারের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা। মূল ব্যক্তিরা কেউই গ্রেপ্তার হলেন না। শেয়ারবাজার থেকে চলে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থমন্ত্রী অভিযোগ আনলেন 'ফাটকাবাজির'। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের দুর্নীতি তাড়াতে নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেলেন। তাই ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ যে বিপুল আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগের ওপর, তা এখন ফিকে হয়ে আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতা, ব্যর্থতা তাই আমাদের আশাবাদী করে না।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
No comments