ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ- ঘন কুয়াশায় নৌ চলাচল ব্যাহত, সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে
চলমান শৈত্যপ্রবাহ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রবিবারও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতে ব্যাহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
শীতজনিত কারণে রবিবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। নষ্ট হচ্ছে বোরো বীজতলা। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে রবিবার সকালে আড়াই ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। ঘন কুয়াশায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে। রাজধানীতেও গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ সোমবার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাংশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। কুষ্টিয়া ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং সীতাকু-, রাঙ্গামাটি, ফেনী, হাতিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ ও খুলনা এবং সিলেট বিভাগের অবশিষ্ট অংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
ঠাকুরগাঁও ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, তীব্র শীতে এ অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন মারা গেছে। কচি বোরো বীজতলা কুঁকড়ে যাচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহ্ নেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দেড়শতাধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের জবেদা খাতুন (৫৬) মারা গেছেন। শীতার্তদের মাঝে কোন ধরনের বস্ত্র মেলেনি।
নীলফামারী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নীলফামারী থেকে জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে নীলফামারীবাসী। বোরো মৌসুমের কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এর আগের শৈত্যপ্রবাহে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। জনজীবন বিপর্যস্ত। বৃষ্টির ন্যায় ঝিরি ঝিরি কুয়াশাপাতে ৫ হাত অদূরেও কিছু দেখা যায়নি। তবে ১টার পর কুয়াশা কেটে গেলে সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহ ছিল অব্যাহত। ঠা-া থেকে বাঁচতে চলছে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা।
মানিকগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে রবিবার ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আড়াইঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে একটি ফেরি মাঝনদীতে আটকে থাকে। উভয়পাড়ে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, রবিবার ছয়টার দিকে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে নৌ চ্যানেলের বিকন ও সিগন্যাল বাতি ঢেকে যায় এবং দৃষ্টিসীমা কমে আসে। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই রো রো ফেরি ভাষা শহীদ বরকত করে মাঝনদীতে নোঙর করতে বাধ্য হয়। এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে ছয়টি ও দৌলতদিয়া ঘাটে পাঁচটি ফেরি যানবাহন পার করার অপেক্ষায় পন্টুনে বাঁধা থাকে।
বগুড়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, শীত কাবু করে চলে যাওয়ার পথে পা ফেলেই ফের ফিরে এসেছে। এবার শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কাটা অনেক। দিনের বেলায় কুয়াশায় ঢেকে থাকা নিস্তেজ রোদের মধ্যে বরফের মতো শীতল বাতাস শরীরে এসে পড়লে কয়েক প্রস্থ কাপড়েও চলে না। দ্বিতীয় দফায় শীতের এই তা-বে গরম কাপড় পরেই মানুষ ঘুমাতে যায়। সকালে উঠেও নিস্তার নেই। শরীরে একবার গরম কাপড় পরলে খোলার নাম নেই। যাদের প্রতিদিন ঠা-া পানিতে গোসল করার অভ্যাস তাঁদের অভ্যাসও পাল্টে গিয়েছে। ঠা-া পানি তো নয়ই, দু’তিন দিন পর গোসল সারছেন গরম পানিতে।
দিনাজপুর ॥ স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, পুরো জেলায় তীব্র শীতে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় সন্ধ্যার পর মানুষ বাইরে থাকতে পারছে না। দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জনসাধারণ দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষ শীতের প্রকোপের কারণে কাজে যেতে পারছে না। জেলা শহর থেকে ১১টি রুটে যানবাহন চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বিঘœ ঘটছে। দিনাজপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রকাশ, গত ৩ দিনে জেলায় ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় ৮৮ জন। এদের মধ্যে ৩২ জন দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শীতের কারণে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত ৩ দিনে শিশু বিভাগে শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক আহমদ শামীম আল রাজি জনকণ্ঠকে জানান, এবারে শীত মৌসুমে ২৩ হাজার পিস কম্বল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে বরাদ্দকৃত সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় শীতবস্ত্র ক্রয় করে বিতরণের জন্য ১৩টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, তৃতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহের দ্বিতীয় দিনে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠা-া ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে জেলার হতদরিদ্র ৮ লাখ মানুষ। ঘন কুয়াশায় সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। তীব্র শীতের কারণে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছে চরম বিপাকে। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, সদর হাসপাতালে ১৭ জন ডায়রিয়া রোগীসহ শীতজনিত রোগে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩২ শিশু। হাসপাতালে এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন শীত অব্যাহত থাকলে আগামীতে এমন রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে।
নওগাঁ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, গত দু’দিনে নওগাঁ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে আর ঘন কুয়াশায় শীত জেঁকে বসেছে।
No comments