গ্যালারি? অংশ সে তো খেলারই by আনিসুল হক
বাংলাদেশের তিনটা উইকেট পড়ে গেছে। কন্যা তার মায়ের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠাল: অফিশিয়াল ব্যাটিং কুফা অব বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। এসএমএস পড়েই তিনি ফুঁসে উঠলেন, ‘তোমাকে না বললাম, আমি মাঠে গেলেই বাংলাদেশ হারে। কেন আনলা আমাকে?’ পাশের সঙ্গীর মুখে চিপস, তিনি চিবোচ্ছেন না। চিপস চিবোতে গিয়ে বাংলাদেশের উইকেট পড়েছে। আরেকটা কামড়ে যদি আরেকটা পড়ে।
বাংলাদেশের কোটি মানুষ এই ভাবে কোটি রকমের কৌশল অবলম্বন করে দলকে জেতায়। বৃথাই আপনারা খেলোয়াড় কিংবা কোচকে দায়ী করেন। আসল কাজ তো করে দর্শকেরা। কেউ দাঁড়ালে বিপক্ষের উইকেট পড়ে, কেউ বা স্থির হয়ে বসে থেকে দলকে জেতায়!
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশের খেলার দিন গ্রান্ডস্ট্যান্ডের একেবারে সামনের সারিতে গিয়ে বসেছি।
নিশ্চিন্ত মনে খেলা দেখছি। নাজমুল যা করার করে দিয়েছেন। ৩২ রানে লঙ্কানদের তিন মহারথী বিদায় নিয়েছেন। আমার পাশে বসেছে কামরুজ্জামানের মেয়ে প্রিমা। তাকে জিগ্যেস করি, খেলা বোঝো? টেলিভিশনে সেই শট ধরে দেখিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন আসতে শুরু করল। এসএমএসে একজন বললেন, ‘আপনার মেয়ে তো আপনার মতোই দেখতে হয়েছে।’ মানুষের কল্পনাশক্তি সত্যি অপরিসীম।
আকাশে মেঘ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। ছাদের নিচে আসন খুঁজে নিলাম। বৃষ্টি শুরু হলো। খোলা গ্যালারিতে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজছেন।
বৃষ্টি থামল। গ্রাউন্ডসম্যানরা মাঠ শুকানোর চেষ্টা করছেন। পানি-শোষক যন্ত্র দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে।
আটটার দিকে খেলা শুরু হলো। ৪০ ওভারে ২১২ করতে হবে। এর চেয়ে তো ৫০ ওভারে ২৩২ ভালো ছিল। গ্যালারি হতাশ। মাঠ নরম, বল সীমানা ছাড়াবে কম। পিচ আবার উল্টাপাল্টা আচরণ করবে না তো?
তামিম আর নাজিমউদ্দিন নামলেন। দর্শকদের বুক কাঁপছে। সঙ্গিনী বললেন, ‘চলো, চলে যাই।’ নাজিমউদ্দিন আউট। ৮ রানের মাথায়। ওর কাছে কারও প্রত্যাশা নেই। জহুরুল গেলেন। আমরা নীরব। মুশফিক কেন নামছেন? নাসির না কেন? মুশফিকও গেলেন। ৪০ তখন স্কোরবোর্ডে। স্টেডিয়াম নীরব। সাকিব নামছেন। দুর্বল গলায় তাকে উৎসাহ দেবার চেষ্টা।
পাশের দর্শক গলগল করে ঘামছেন। তাঁর সমস্ত শরীর ভেজা। তিনি আমাকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করছেন উত্তেজনায় ও আবেগে। আমি নিজেকে রক্ষা করে চলেছি।
হঠাৎ কী হলো। সাকিব-তামিম রান নেওয়ার চেষ্টা করলেন। বল ছুড়ে স্টাম্প ভেঙে দেওয়া হলো। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আসছে। আমরা গ্যালারিতে বসে কিছু বুঝছি না। আমি বললাম, আউট। দোয়া-দরুদ পড়ছি।
নট আউট। পর্দায় ভেসে উঠল। চোখে জল এসে গেল। সাকিব আছেন। তামিম আছেন।
ঘর্মাক্ত সহদর্শক হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম। তামিমের অর্ধশত হলো। আমরা গান ধরলাম, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
সাকিব আউট। তামিম আউট। গান বাজছে, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু...,’ আমরা সবাই গলা মেলাচ্ছি, ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’।
আমাদের রংপুরের নাসির আর মাহমুদউল্লাহ এসে সেট হয়ে গেলেন। দরকারি রানের সংখ্যা দ্রুত কমছে। আমরা জানি, আর ভয় নাই। গান বাজছে, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। আমরা জবাব দিলাম, ‘হবে হবে হবে নিশ্চয়’।
নাসিরের ব্যাট থেকে চার এসে গেল। আমরা জিতে গেছি। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত বিশ্বকাপ রানার্সআপ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা করুক।
প্রথম দিনে পাকিস্তানকে বাগে পেয়েও হারানো যায়নি। ২২ মার্চ চেষ্টাটা হয়ে যাক। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তা না হলে বলতাম, এই ট্রফি বাংলাদেশের প্রাপ্য। পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি। আমরা পেরেছি। আর আমরা পাকিস্তানকেও প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। কাজেই প্রকৃতির উচিত ন্যায়বিচার করা।
এশিয়া যেন আজ এক নতুন চ্যাম্পিয়নকে অভিষিক্ত করে।
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশের খেলার দিন গ্রান্ডস্ট্যান্ডের একেবারে সামনের সারিতে গিয়ে বসেছি।
নিশ্চিন্ত মনে খেলা দেখছি। নাজমুল যা করার করে দিয়েছেন। ৩২ রানে লঙ্কানদের তিন মহারথী বিদায় নিয়েছেন। আমার পাশে বসেছে কামরুজ্জামানের মেয়ে প্রিমা। তাকে জিগ্যেস করি, খেলা বোঝো? টেলিভিশনে সেই শট ধরে দেখিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন আসতে শুরু করল। এসএমএসে একজন বললেন, ‘আপনার মেয়ে তো আপনার মতোই দেখতে হয়েছে।’ মানুষের কল্পনাশক্তি সত্যি অপরিসীম।
আকাশে মেঘ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। ছাদের নিচে আসন খুঁজে নিলাম। বৃষ্টি শুরু হলো। খোলা গ্যালারিতে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজছেন।
বৃষ্টি থামল। গ্রাউন্ডসম্যানরা মাঠ শুকানোর চেষ্টা করছেন। পানি-শোষক যন্ত্র দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে।
আটটার দিকে খেলা শুরু হলো। ৪০ ওভারে ২১২ করতে হবে। এর চেয়ে তো ৫০ ওভারে ২৩২ ভালো ছিল। গ্যালারি হতাশ। মাঠ নরম, বল সীমানা ছাড়াবে কম। পিচ আবার উল্টাপাল্টা আচরণ করবে না তো?
তামিম আর নাজিমউদ্দিন নামলেন। দর্শকদের বুক কাঁপছে। সঙ্গিনী বললেন, ‘চলো, চলে যাই।’ নাজিমউদ্দিন আউট। ৮ রানের মাথায়। ওর কাছে কারও প্রত্যাশা নেই। জহুরুল গেলেন। আমরা নীরব। মুশফিক কেন নামছেন? নাসির না কেন? মুশফিকও গেলেন। ৪০ তখন স্কোরবোর্ডে। স্টেডিয়াম নীরব। সাকিব নামছেন। দুর্বল গলায় তাকে উৎসাহ দেবার চেষ্টা।
পাশের দর্শক গলগল করে ঘামছেন। তাঁর সমস্ত শরীর ভেজা। তিনি আমাকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করছেন উত্তেজনায় ও আবেগে। আমি নিজেকে রক্ষা করে চলেছি।
হঠাৎ কী হলো। সাকিব-তামিম রান নেওয়ার চেষ্টা করলেন। বল ছুড়ে স্টাম্প ভেঙে দেওয়া হলো। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আসছে। আমরা গ্যালারিতে বসে কিছু বুঝছি না। আমি বললাম, আউট। দোয়া-দরুদ পড়ছি।
নট আউট। পর্দায় ভেসে উঠল। চোখে জল এসে গেল। সাকিব আছেন। তামিম আছেন।
ঘর্মাক্ত সহদর্শক হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম। তামিমের অর্ধশত হলো। আমরা গান ধরলাম, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...
সাকিব আউট। তামিম আউট। গান বাজছে, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু...,’ আমরা সবাই গলা মেলাচ্ছি, ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’।
আমাদের রংপুরের নাসির আর মাহমুদউল্লাহ এসে সেট হয়ে গেলেন। দরকারি রানের সংখ্যা দ্রুত কমছে। আমরা জানি, আর ভয় নাই। গান বাজছে, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। আমরা জবাব দিলাম, ‘হবে হবে হবে নিশ্চয়’।
নাসিরের ব্যাট থেকে চার এসে গেল। আমরা জিতে গেছি। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত বিশ্বকাপ রানার্সআপ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা করুক।
প্রথম দিনে পাকিস্তানকে বাগে পেয়েও হারানো যায়নি। ২২ মার্চ চেষ্টাটা হয়ে যাক। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তা না হলে বলতাম, এই ট্রফি বাংলাদেশের প্রাপ্য। পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি। আমরা পেরেছি। আর আমরা পাকিস্তানকেও প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। কাজেই প্রকৃতির উচিত ন্যায়বিচার করা।
এশিয়া যেন আজ এক নতুন চ্যাম্পিয়নকে অভিষিক্ত করে।
No comments