সাক্ষাৎকার গ্রহণ :শেখ রোকন-নিরাপদ পানির অধিকারে শহর ও গ্রামে বৈষম্য বাড়ছে by ডা. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম

নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়াটার এইডের বাংলাদেশভিত্তিক আবাসিক প্রতিনিধি ডা. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ২০০৮ সালে বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের আগে কয়েক বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন। সেখানে তিনি প্লান ইন্টারন্যাশনালের কর্মসূচি প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি একই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রোগ্রাম সাপোর্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সহকারী প্রধান হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। জনাব ইসলাম ১৯৮৩ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৯৪ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন


সমকাল : এবার যখন বিশ্ব পানি দিবস উদযাপিত হচ্ছে, তখন পানি নিয়ে নানা দুঃসংবাদই শোনা যাচ্ছে। সুসংবাদ কি কিছু রয়েছে?
খায়রুল ইসলাম : একটা সুসংবাদ আপনাকে দিতে পারি। গত ৬ মার্চ হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) এবং ইউনিসেফের জয়েন্ট মনিটরিং রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, এমডিজি সেভেনে সুপেয় পানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল, তা বৈশ্বিকভাবে অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন ট্র্যাকে রয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখবর। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, বাংলাদেশ কিন্তু এমডিজি নির্ধারণের আগে থেকেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিল। আশির দশকে ইউনিসেফ সারাদেশে নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু করেছিল। সেটা সারাদেশেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। আমরা একটা হিসাব করে বলি যে প্রায় এক কোটি নলকূপ। এর কমবেশি ৯০ ভাগই হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন। আমরা একসময় বলতাম যে, বাংলাদেশে একসেস টু ড্রিংকিং ওয়াটার প্রায় ৯৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। গৃহস্থালি কাজে নলকূপের পানি ব্যবহারের কারণেই নিরাপদ পানীয়ের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে ছিলাম।
সমকাল :গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে তো দেশে আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে বলে অনেকে আশঙ্কা করেন।
খায়রুল ইসলাম :সেটা একটা ধারণা। এখনও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিশ্চিত হয়নি। তবে হ্যাঁ, সারফেস ওয়াটারে আর্সেনিক থাকার ঝুঁকি থাকে না। আর্সেনিকের কারণেই আমরা সব নলকূপের পানি সুপেয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারছি না। আর্সেনিকের কারণেই একসেস টু সেফ ড্রিংকিং ওয়াটার ৯৭ থেকে ৭৬-৭৮ ভাগে নামিয়ে আনতে হয়েছে। পানি মানুষ ঠিকই পান করছে; কিন্তু সেটা নিরাপদ কি-না, আর্সেনিকের কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পানিপ্রাপ্তি ৯৭ ভাগ, নিরাপদ হচ্ছে ৭৮ ভাগ। ২০০৮ সালে এসে দেখা গেল, সেটা ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আবার গত ৬ মার্চ যে প্রতিবেদন প্রকাশ হলো, তা করা হয়েছে ২০১০ সালের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে। সেখানে বাংলাদেশের অর্জন ৮১ শতাংশ। এটা বৈশ্বিক গড় অর্জনের চেয়ে বেশি।
সমকাল :তার মানে, আর্সেনিকমুক্তির ক্ষেত্রে আমরা সাফল্য অর্জন করে চলছি?
খায়রুল ইসলাম :না, এই সাফল্যে আমাদের খুশি হওয়ার কারণ নেই। তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল যে, ২০১১ সালের মধ্যে আর্সেনিক সমস্যার সমাধান করে সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে। এখন ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এসে আমরা যদি পর্যালোচনা করি, দেখতে পাই সেটা অর্জিত হয়নি। ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে মাত্র এক শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এই হার চলতে থাকলে তো শতভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আরও ৪০ বছর লেগে যাবে।
সমকাল :আর্সেনিক নিয়ে প্রচারণা ও কর্মসূচিও কম দেখা যায় এখন। আগে আমরা দেখতাম গ্রামে গ্রামে টিউবওয়েলে লাল-সবুজ রঙ করে আর্সেনিক সতর্কতা জারি করা হতো। এখন তো আর সেগুলো চোখে পড়ে না।
খায়রুল ইসলাম :হ্যাঁ, কর্মসূচি ও প্রচারণা অনেক হয়ে গেছে। আর্সেনিক খাতে তহবিল বরাদ্দও কমে গেছে। ২০০৭ সালের পরে আসলে আর্সেনিক নিয়ে বিশেষ কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, সার্বিকভাবে ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন সেক্টরে বরাদ্দ বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮০০ কোটি টাকা। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সেটা বাড়িয়ে ১৪শ' কোটি করেছেন। পরের বছর তিনি সেটা ২০০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছেন। আমি শুনেছি তার টেবিলের কাচের নিচে নির্বাচনী ইশতেহার রাখা রয়েছে। এতে করে বোঝা যায় বাজেট বরাদ্দের সময় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মাথায় রাখেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো কী করল, শুধু ঢাকার পানি সংকট মোকাবেলার দিকে নজর দিলেন। দৌড় সালাহউদ্দিনের মতো কিছু নজির হয়তো তাদের সামনে ছিল। ঢাকায় আগে ৫০০ পাম্প ছিল, সেটা বাড়িয়ে এখন ছয়শ'র মতো করা হয়েছে। ওয়াসার বাইরেও ঢাকায় আরও ডিপটিউবওয়েল রয়েছে, যেগুলোর হিসাব ওয়াসার কাছে নেই। যেমন ঢাকা সেনানিবাস এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পিলখানায় তাদের নিজস্ব পাম্প রয়েছে। ওয়াসার পাম্পের জন্য জেনারেটর কেনা, যেসব ডিপটিউবওয়েলে পানি উঠছিল না, সেগুলোর পাশে আবার পাইপ পোতা_ এসব খাতে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এর সুফলও মিলছে। আপনি দেখবেন গত বছর এই মৌসুমে পানির পাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল, এবার তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
সমকাল : এভাবে ডিপটিউবওয়েল বসালে সাময়িক সুবিধা হয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তো ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের ক্ষতি করে ফেলা হচ্ছে। এতে নানারকম ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
খায়রুল ইসলাম : ঠিকই বলেছেন। আমি একবার স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে এই কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, সাতক্ষীরার আইলাদুর্গত অঞ্চলের মানুষ কিংবা কুমিল্লার শাহরাস্তির আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষ কীভাবে সুপেয় পানির কষ্টে ভুগছে। তিনি বলেছিলেন, ঢাকায় পর্যাপ্ত পাম্প না বসালে কারবালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে সারাদেশেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য সরকার ঢাকার পানি সংকট মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
সমকাল :রাজনৈতিক বা যে কারণেই হোক; সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার শহরাঞ্চলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
খায়রুল ইসলাম :হ্যাঁ, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এই খাতে যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার ৭০-৭৫ শতাংশই হয়েছে শহরাঞ্চলে। ঢাকা নগরীতে তো বটেই; বাকি বিনিয়োগও হচ্ছে খুলনা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিলেট ও বরিশাল মহানগরীতে পানি সরবরাহ ইত্যাদি। বিভিন্ন পৌরসভায় পানি সরবরাহ। প্রকল্পগুলো দেখলে বোঝা যায়, তিন-চারটা শুধু গ্রামাঞ্চলকে ফোকাস করে। বাকি সব শহরাঞ্চলের জন্য।
সমকাল : আমরা কি বলতে পারি যে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সরকার বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছে?
খায়রুল ইসলাম :হ্যাঁ, বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। গ্রামের মধ্যেও কয়েকটি এলাকার কথা আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাই। পার্বত্য এলাকা এবং সিডর-আইলা আক্রান্ত এলাকা। এর মধ্যে হাওরাঞ্চল, বরেন্দ্র অঞ্চলের কথা বলতে পারি। এসব এলাকায় নিরাপদ পানিপ্রাপ্তির হার সারাদেশের গড়ের চেয়ে অনেক কম। পাহাড়ে বা উপকূলীয় অঞ্চলে মাইলের পর মাইল হেঁটে গিয়ে সুপেয় পানি আনতে হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে সেচের ডিপটিউবওয়েল যখন চালু হয়, তখন অন্যান্য নলকূপে আর পানি ওঠে না। বাড়িতে বাড়িতে ওভারহেড ট্যাঙ্ক করে দেওয়া হয়েছে। ডিপটিউবওয়েল চালু হলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন সবাই পানি সংগ্রহ করে। এভাবে গ্রামাঞ্চলে এখন সুপেয় পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখানে বিশেষ নজর দিতেই হবে আমাদের।
সমকাল :গ্রামাঞ্চলে অনেক ভূউপরিস্থ পানির উৎস ছিল অনেক। সেগুলোও তো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
খায়রুল ইসলাম :এ জন্য বড় পুকুর যেখানে ১২ মাস পানি থাকে বা বড় নদী যেটার পানি দূষিত হয়নি, সেটা থাকলে সুবিধা হয়। কিন্তু সারফেস ওয়াটারের জন্য বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। পুকুর বা নদী থেকে পানি নিয়ে প্রসেস করে খেতে হয়। আগে যে পুকুর বা নদীর পানি খাওয়া হতো, সেটা দূষণ থেকে রক্ষা করা হতো। সেখানে কেউ গোসল করত না, সেই পুকুরে মাছ চাষ করা হতো না। এখন তো সেভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সমকাল : নদী দূষণ তো এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, ঢাকার মতো নগরীতে পানি শোধন করেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
খায়রুল ইসলাম : সায়েদাবাদে এখন প্রি-প্লান্ট প্রসেসিং চলছে। কারণ শুকনো মৌসুমে পানির অবস্থা এতটাই খারাপ থাকে যে, শোধনাগারে সরাসরি দিলে প্লান্টই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নদী দূষণের জন্য দায়ী ৬০ শতাংশ শিল্পবর্জ্য, ৩০ শতাংশ মানববর্জ্য এবং ১০ ভাগ গৃহস্থালি বর্জ্য। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা থেকে রুল অব থাম্বের বিষয়টি পাওয়া গেছে। এখন ট্যানারি শিল্প না সরালে ৬০ শতাংশ দূষণ কমানো যাবে না। ৩০ ভাগ মানববর্জ্যের দূষণ কমাতে হলে ঢাকায় আরও তিন-চারটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দরকার। পাগলায় মাত্র ২৫ ভাগ আমরা ট্রিটমেন্ট করতে পারি। এসব ব্যবস্থা না নিলে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার পানি সুপেয় করে তোলা কঠিন। অবশ্য পরিবেশ অধিদফতর এখন কিছু কিছু শিল্প-কারখানায় অভিযান চালিয়ে ইটিপি বসাতে বলছে, জরিমানা করছে। তাতে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা উন্নত হবে। কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে হবে। সম্প্রতি দেখলাম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে যে, ২০১৪ সালের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তর না হলে তারা চামড়াজাত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেবে। ফলে আমরা আশা করতে পারি, ২০১৪ সালের পর বুড়িগঙ্গার দূষণ আরও কমতে পারে।
সমকাল :ঢাকার মতো বড় নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে নদীতেই কেবল দূষণ চলছে না, সারাদেশেই তো প্রায় একই চিত্র দেখছি আমরা।
খায়রুল ইসলাম :সারাদেশেই চলছে। কেবল শিল্প নয়, নানা ধরনের দূষণ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজের নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়ার পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গেছে, সেটাতে হাটের আবর্জনা দিয়ে নদী বুজে যাচ্ছে। সেই নদীর পানি সরাসরি খাওয়া দূরে থাক, ট্রিটমেন্ট প্লান্টে দিয়েও খাওয়া যাবে না। সাংঘাতিক খরস্রোতা কয়েকটি পয়েন্ট, যেমন চাঁদপুরের মেঘনা পয়েন্ট ছাড়া সারাদেশের নদীগুলোতে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে প্রবাহ না থাকায় দক্ষিণ দিক থেকে লবণাক্ততা বাড়ছে দিন দিন। অনেকে জানেন না, লবণাক্ততার কারণে বিভিন্ন নদীর পাড়ে অবস্থিত ইলেকট্রিক প্লান্ট চালানোও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। খুলনার শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফ্রেশ পানি আনতে হয় বার্জে করে। এখন সেই পানির জন্য ক্রমেই উজানে ঢুকতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচও বাড়ছে। খাবার পানি তো বটেই, শিল্পের জন্য পানি, সেচের জন্য পানি ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে। খাওয়া ও গৃহস্থালির জন্য আমরা মাত্র পাঁচ শতাংশ পানি ব্যবহার করি। বিপুল অংশ তো উৎপাদনের কাজে। সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।
সমকাল :সবার জন্য যদি অন্তত নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে সমাধান কী?
খায়রুল ইসলাম : আমি মনে করি, গত বছর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় রয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক গ্রামে একটি করে খাবার পানির পুকুর সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যক্তিমালিকানা হোক, খাস জমিতে হোক, একটা পুকুর থাকতে হবে। সেটাতে যেন গোসল না করা হয়, জোয়ার বা বন্যার পানি যেন সেটাতে না ঢোকে। পার্বত্য এলাকার জন্য এভাবে একটি ঝরনা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করতে হলে গ্রামাঞ্চলের দিকে নজর দিতেই হবে।
সমকাল :পানি আইনের খসড়া নিয়ে এখন আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সমালোচনাও রয়েছে। আপনার মত কী?
খায়রুল ইসলাম :পানি আইনে একটি বিষয় রয়েছে; কিন্তু সেটা আমরা আরও সুস্পষ্ট করতে বলছি। পানি আইনে বলা হয়েছে, ভূগর্ভের ও উপরের এবং বৃষ্টির পানির মালিক রাষ্ট্র। আগে বিষয়টির আইনগত ভিত্তি ছিল না। পানি আইন সংসদে পাস হলে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা বলছি, তেল-গ্যাস সম্পদের মতো পানিরও মজুদ নির্ধারণ করতে হবে। কারা, কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে, সেটার মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেটা নির্দিষ্ট করতে হবে। কারণ, তেলের মতো ভূগর্ভস্থ পানিও কিন্তু সীমিত। পানি তো তেলের চেয়ে কম মূল্যবান বা কৌশলগত দিকে থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সমকাল : ভূগর্ভস্থ পানির বাণিজ্যিকীকরণ তো এখনই শুরু হয়েছে। সাভারে দু'তিনটা কেস আমি জানি, যেখানে কয়েক কাঠা জমি কিনে সমানে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে বিক্রি হচ্ছে।
খায়রুল ইসলাম :হ্যাঁ, এভাবে কি তেল তুলে আমরা বিক্রি করতে পারব? আরও ব্যাপার হচ্ছে, সাভারে পাম্প বসিয়ে তো আশপাশের সব অঞ্চলের পানি টেনে নিয়ে বিক্রি করছে। এটা একটা বড় ব্যবসা। বিষয়টি বিধিবদ্ধ হতেই হবে। পানি আইনে পানির মজুদ, উত্তোলন, ব্যবহার সুস্পষ্ট করতেই হবে।
সমকাল :পানি আইনে পানি ব্যবহারের বিষয়ে লাইসেন্স নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।
খায়রুল ইসলাম :লাইসেন্স থাকতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে যে, সেটা যেন সাধারণ মানুষের হেনস্তার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। পানিকে যেন বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; তবে সেটা তাদের জন্য যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
সমকাল : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
খায়রুল ইসলাম :ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.