স্বপ্নপূরণের দিন by উৎপল শুভ্র
ভারতীয় সাংবাদিকদের মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। শ্রীলঙ্কানদের ১৯৯৬। মনে পড়ছে সেই ক্রিকেটীয় রূপকথা—সব পূর্বানুমান ঝোড়ো হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়। মনে করিয়ে দিচ্ছে মুশফিকুর রহিমের দল। এই এশিয়া কাপের বাংলাদেশও তো এমনই এক অভাবিত বিস্ময়।
আজ ২২ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনাল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এই দিনটিতে বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটীয় বিবেচনাবোধ বা সমর্থন অনুযায়ী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দুটি দলকে নিয়ে জোড় সাজিয়েছে। অতি কল্পনাবিলাসীও বাংলাদেশকে ফাইনালে ভাবতে সাহস পায়নি। সেই অভাবিত ঘটনা যখন ঘটেই গেছে, স্বপ্নটা কি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারে না! ১৯৮৩ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার রূপকথা দেখেছিল মধুরেণ সমাপয়েৎ। মুশফিকুর রহিমের দল কি পারবে ইজেলে তুলির শেষ পোঁচটা দিতে?
হারানোর তো কিছু নেই। ফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতম খেলোয়াড় ইউনুস খান এটিকেই দেখালেন বাংলাদেশের বড় শক্তি বলে, ‘ওদের তো হারানোর কিছু নেই।’ কিছুক্ষণ পর মুশফিকুর রহিমও বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার রহস্য বলে মানলেন এটিকেই, ‘পুরো টুর্নামেন্টেই আমাদের হারানোর কিছু ছিল না।’
আজও নেই। তবে পার্থক্য তো একটা আছেই। এত দিন বাংলাদেশ একেকটা ম্যাচ ধরে ভেবেছে, বৃহত্তর ছবিটা কখনো কল্পনায়ও আনেনি। পর পর দুই ম্যাচে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর যে বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপটই। দেশজুড়ে উড়ছে প্রত্যাশার ফানুস—ট্রফিটা চাই-ই চাই!
পাকিস্তান যথেষ্টই প্রবল প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের কাছে এক রকম অজেয়ও। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এই একটা দলকেই এখনো হারানো হয়নি। তবে পাকিস্তানের চেয়েও আজকের ফাইনালে বড় প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে প্রত্যাশার ওই সীমাহীন চাপকে। এর সঙ্গে তো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এই প্রথম পরিচয়!
প্রথম পরিচয়, ঠিক আছে। তাই বলে সেটি জয় করা যাবে না, এমন তো নয়। অভূতপূর্ব কত কিছুই না ঘটল এই টুর্নামেন্টে! এতই যে, এই বাংলাদেশকে আমাদের এত দিনের চেনা-জানা কোনো দল বলেই মনে হচ্ছে না। এই দল এক-দুজনের মুখ চেয়ে তাকিয়ে থাকে না। যখন যাঁর কাছে সময়ের দাবি, সে-ই হাত তুলে দাঁড়িয়ে যায়। এই দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হেলায় হারায়। বিশ্বকাপ রানার্সআপদের বলেকয়ে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেয়।
ইউনুস খানের চোখে পড়ছে আরেকটা বড় পরিবর্তনও। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা। কি বোলিং, কি ফিল্ডিং, কি ব্যাটিং—সবকিছুতেই আক্রমণাত্মক মেজাজ। দলের মানসিকতাটাই এমন বদলে গেছে যে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ফাইনালটাকে ‘চাপ’-এর বদলে মনে করছেন সুযোগ, ‘এই যে সুযোগটা এসেছে, এটা তো সব সময় আসে না।’
ইউনুস খানের আরেকটি কথাও মনে করিয়ে দিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কাকে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনায়াস রান তাড়া দেখে বাংলাদেশকে ‘ভেরি গুড চেজিং টিম’ বলে রায় দিয়ে দিলেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গার দলেরও বড় পরিচয় ছিল এটা। এখানেও একটা ফেঁকড়া আছে। টানা তিন ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট কৃত্রিম আলোয় আরও বেশি ব্যাটিংবান্ধব প্রমাণিত বলে কিছুটা সুবিধাও পেয়েছে। আজও টস-ভাগ্য মুশফিকুরের দিকে তাকিয়ে হাসবে তো?
এসব নিয়ে ভাবাই উচিত নয়। কারণ, ভেবে লাভ নেই। পরে ব্যাটিংয়ের সুবিধা তো সম্প্রতি আবিষ্কৃত। নইলে ভারতের হাতে ব্যাট তুলে দেওয়ার পর স্কোরবোর্ডে ২৮৯ উঠে যাওয়ায় মুশফিকুরের ওই সিদ্ধান্তের কি কম সমালোচনা হয়েছিল! ‘ফাইনাল’ শব্দটা মাথায় বেশি ঘুরপাক না খেলে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেও জিততে পারে, পরে ব্যাটিং করেও।
কিন্তু কার হাতে লুকিয়ে জয়ের চাবি? কোনো একজনের নাম যে বলার উপায় নেই। টুকটাক পারফরম্যান্স আছে সবারই। তবে তার মধ্যেও তিন ম্যাচেই আলাদা ঔজ্জ্বল্যে জ্বলেছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। ইনিংসের শুরুতে ও মাঝখানে আজও এই দুজনের ব্যাটের দিকে আশায় তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। সাকিবের কাছে তো চাওয়ার শেষ নেই। বল হাতেও ম্যাজিকের প্রত্যাশা তাঁর কাছে।
টানা তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিমের জ্বর বাংলাদেশ দলে একটা ভয়ের কাঁপনই ছড়িয়ে দিয়েছিল। গত পরশু জ্বর-জ্বর ভাব নিয়েই খেলেছেন ওই অসাধারণ ইনিংসটা। জ্বর বাড়ায় কাল অনুশীলনও করেননি। তবে রাতের দিকে জ্বর একটু কমায় বাংলাদেশ দলেরও ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। তামিমের খেলার সম্ভাবনার পাশে তাই খুবই ছোট্ট একটা প্রশ্নচিহ্ন। আর কারও পাশে সেটিও নেই। তামিমের জ্বর হঠাৎ খুব বেড়ে না গেলে শ্রীলঙ্কাকে হারানো দলটিই আজ অপরিবর্তিত থাকার কথা।
জ্বর-টর থাকলেও হয়তো তা নিয়েই নেমে যাবেন তামিম! এমন ম্যাচ তো তাঁর জীবনে আর আসেনি। আবার কবে আসবে, কে জানে! এ তো শুধু ফাইনাল নয়, বাংলাদেশের উদ্যাপনের দিন। তা ফলাফল যা-ই হোক না কেন! কী বলছেন, হেরে গেলে উদ্যাপনের কী আছে? কেন, বাংলাদেশের এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাটাই কি উদ্যাপনের যথেষ্ট উপলক্ষ নয়!
হারানোর তো কিছু নেই। ফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতম খেলোয়াড় ইউনুস খান এটিকেই দেখালেন বাংলাদেশের বড় শক্তি বলে, ‘ওদের তো হারানোর কিছু নেই।’ কিছুক্ষণ পর মুশফিকুর রহিমও বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার রহস্য বলে মানলেন এটিকেই, ‘পুরো টুর্নামেন্টেই আমাদের হারানোর কিছু ছিল না।’
আজও নেই। তবে পার্থক্য তো একটা আছেই। এত দিন বাংলাদেশ একেকটা ম্যাচ ধরে ভেবেছে, বৃহত্তর ছবিটা কখনো কল্পনায়ও আনেনি। পর পর দুই ম্যাচে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর যে বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপটই। দেশজুড়ে উড়ছে প্রত্যাশার ফানুস—ট্রফিটা চাই-ই চাই!
পাকিস্তান যথেষ্টই প্রবল প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের কাছে এক রকম অজেয়ও। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এই একটা দলকেই এখনো হারানো হয়নি। তবে পাকিস্তানের চেয়েও আজকের ফাইনালে বড় প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে প্রত্যাশার ওই সীমাহীন চাপকে। এর সঙ্গে তো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এই প্রথম পরিচয়!
প্রথম পরিচয়, ঠিক আছে। তাই বলে সেটি জয় করা যাবে না, এমন তো নয়। অভূতপূর্ব কত কিছুই না ঘটল এই টুর্নামেন্টে! এতই যে, এই বাংলাদেশকে আমাদের এত দিনের চেনা-জানা কোনো দল বলেই মনে হচ্ছে না। এই দল এক-দুজনের মুখ চেয়ে তাকিয়ে থাকে না। যখন যাঁর কাছে সময়ের দাবি, সে-ই হাত তুলে দাঁড়িয়ে যায়। এই দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হেলায় হারায়। বিশ্বকাপ রানার্সআপদের বলেকয়ে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেয়।
ইউনুস খানের চোখে পড়ছে আরেকটা বড় পরিবর্তনও। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা। কি বোলিং, কি ফিল্ডিং, কি ব্যাটিং—সবকিছুতেই আক্রমণাত্মক মেজাজ। দলের মানসিকতাটাই এমন বদলে গেছে যে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ফাইনালটাকে ‘চাপ’-এর বদলে মনে করছেন সুযোগ, ‘এই যে সুযোগটা এসেছে, এটা তো সব সময় আসে না।’
ইউনুস খানের আরেকটি কথাও মনে করিয়ে দিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কাকে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনায়াস রান তাড়া দেখে বাংলাদেশকে ‘ভেরি গুড চেজিং টিম’ বলে রায় দিয়ে দিলেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গার দলেরও বড় পরিচয় ছিল এটা। এখানেও একটা ফেঁকড়া আছে। টানা তিন ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট কৃত্রিম আলোয় আরও বেশি ব্যাটিংবান্ধব প্রমাণিত বলে কিছুটা সুবিধাও পেয়েছে। আজও টস-ভাগ্য মুশফিকুরের দিকে তাকিয়ে হাসবে তো?
এসব নিয়ে ভাবাই উচিত নয়। কারণ, ভেবে লাভ নেই। পরে ব্যাটিংয়ের সুবিধা তো সম্প্রতি আবিষ্কৃত। নইলে ভারতের হাতে ব্যাট তুলে দেওয়ার পর স্কোরবোর্ডে ২৮৯ উঠে যাওয়ায় মুশফিকুরের ওই সিদ্ধান্তের কি কম সমালোচনা হয়েছিল! ‘ফাইনাল’ শব্দটা মাথায় বেশি ঘুরপাক না খেলে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেও জিততে পারে, পরে ব্যাটিং করেও।
কিন্তু কার হাতে লুকিয়ে জয়ের চাবি? কোনো একজনের নাম যে বলার উপায় নেই। টুকটাক পারফরম্যান্স আছে সবারই। তবে তার মধ্যেও তিন ম্যাচেই আলাদা ঔজ্জ্বল্যে জ্বলেছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। ইনিংসের শুরুতে ও মাঝখানে আজও এই দুজনের ব্যাটের দিকে আশায় তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। সাকিবের কাছে তো চাওয়ার শেষ নেই। বল হাতেও ম্যাজিকের প্রত্যাশা তাঁর কাছে।
টানা তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিমের জ্বর বাংলাদেশ দলে একটা ভয়ের কাঁপনই ছড়িয়ে দিয়েছিল। গত পরশু জ্বর-জ্বর ভাব নিয়েই খেলেছেন ওই অসাধারণ ইনিংসটা। জ্বর বাড়ায় কাল অনুশীলনও করেননি। তবে রাতের দিকে জ্বর একটু কমায় বাংলাদেশ দলেরও ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। তামিমের খেলার সম্ভাবনার পাশে তাই খুবই ছোট্ট একটা প্রশ্নচিহ্ন। আর কারও পাশে সেটিও নেই। তামিমের জ্বর হঠাৎ খুব বেড়ে না গেলে শ্রীলঙ্কাকে হারানো দলটিই আজ অপরিবর্তিত থাকার কথা।
জ্বর-টর থাকলেও হয়তো তা নিয়েই নেমে যাবেন তামিম! এমন ম্যাচ তো তাঁর জীবনে আর আসেনি। আবার কবে আসবে, কে জানে! এ তো শুধু ফাইনাল নয়, বাংলাদেশের উদ্যাপনের দিন। তা ফলাফল যা-ই হোক না কেন! কী বলছেন, হেরে গেলে উদ্যাপনের কী আছে? কেন, বাংলাদেশের এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলাটাই কি উদ্যাপনের যথেষ্ট উপলক্ষ নয়!
No comments