সাদাকালো-গণতন্ত্রী ও প্রগতিবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বিশ্লেষণ by আহমদ রফিক
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বাঙালির ভাষিক আবেগ আপাতত শান্ত বাকি ১১ মাসের জন্য। বইমেলাও আগামী ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করে আছে। এভাবেই আমাদের 'মহান একুশে' তর্পণ বছরের পর বছর। ভাষাসংগ্রামকারীরাও এক মাসের তৎপরতা শেষে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে আগামী ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায়।
মাসের বা বছরের সময়-তামামির দিকে তাকালে বরাবরের সত্য একটাই এবং তাতে নতুন সংযোজন নেই। ফেব্রুয়ারি আমাদের গর্ব ও অহংকারের মাস। এককথায় ভাষার মাস, মাতৃভাষা বাংলার মাস। এর বাইরে আমাদের শিক্ষিত সমাজে, শহুরে সমাজে মাতৃভাষা নিয়ে বড় একটা মাথাব্যথা নেই। ভাষার ব্যবহারিক উন্নতি, প্রসার, চর্চা ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহ সীমিতসংখ্যক মানুষের।
মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের প্রবল আবেগ কেন এক মাসের বৃত্তে বন্দি হয়ে থাকল, কেন তা জীবনের সর্বস্তরে প্রবাহিত হয়নি। এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া দরকার। দরকার জাতির ভালো-মন্দ, উন্নতি-অবনতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। বিশেষ করে যখন বাঙালি নামক জাতির জনশ্রেণীর জবানি ভাষা, তাদের সাহিত্যের ভাষা বাংলা এবং বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের সংবিধানমাফিক 'প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা'।
এ অবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় এবং উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পরিবর্তে যদি অন্য কোনো ভাষা অর্থাৎ ইংরেজি ব্যবহৃত হতে থাকে, তাহলে তাতে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয় কি না তা সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ অনেকের বিশ্বাস_বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে অনেক লড়াইয়ের পর যখন স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, তখন সে রাষ্ট্রের জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহৃত হওয়াটাই উচিত। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই তো মাতৃভাষা জাতীয় ভাষা হিসেবে জীবন-জীবিকাসহ সর্বস্তরে যুক্ত।
কিন্তু বাংলাদেশে ভাষার চালচিত্রটা বিপরীত। লড়াই করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পর ভাষাসংগ্রামীদের উত্তরসূরি পরবর্তী প্রজন্ম কেন মাতৃভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষা ইংরেজিকে মাতৃভাষার স্থানে বসিয়েছে। এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়ে বলা দরকার যে ভাষা নিয়ে জাতিত্ব নিয়ে যত দিন লড়াই চলেছে, চলেছে আর্থ-সামাজিক স্তরে শ্রেণীস্বার্থ পূরণের জন্য, তত দিন ওই দুটো বিষয়ের সঙ্গে গভীর মানসিক যোগ ছিল উঠতি বাঙালি মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণীর। এরপর লড়াই শেষ, প্রাপ্তি সম্পন্ন, ভাষাচেতনা, জাতিত্বচেতনারও প্রয়োজন শেষ। কথাগুলো ঢালাওভাবে সব বাঙালির জন্য নয়, শিক্ষিত বাঙালির সংখ্যাগুরু অংশের জন্য সত্য।
কিন্তু কেন এ বিপরীতমুখী যাত্রা। এর প্রধান কারণ, মাতৃভাষা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম না হওয়ার ফলে জীবিকার সঙ্গে যত সম্পর্ক সবই ইংরেজির, মাতৃভাষা বাংলা নয়। এ জন্যই অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইংরেজিরই যত মূল্যমান, বাংলার সেখানে স্থান নেই। জীবিকার প্রয়োজনে এবং জীবনযাত্রায় অধিকতর সচ্ছলতা তৈরির জন্য ইংরেজিকে গ্রহণ করেছেন একদা বাংলাপ্রেমী রাজনীতিবিদ পেশাজীবী এবং তাঁদের উত্তরসূরি অধিকাংশই।
এ অবস্থা চলতে থাকলে এমন একসময় আসবে, যখন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা বিলুপ্তির পথ ধরবে, নিদেনপক্ষে কোণঠাসা হয়ে সাহিত্যের এক কোণে পড়ে থাকবে। অনেক গর্বের বাংলা সাহিত্য ঐতিহ্যিক নমুনা হিসেবে জাদুঘরে ঠাঁই নেবে। আর অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের জবানি ভাষা হিসেবে টিকে থাকবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো, উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা, মায়া জনগোষ্ঠী বা জঙ্গলে বিতাড়িত অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মৌখিক ভাষার মতো।
মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন ও সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য বিস্তার পূর্বোক্ত অবস্থার এবং বর্তমানে শিক্ষিত বাঙালি মানসিকতার প্রধান কারণ। তাঁরা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ ও আভিজাত্যের উত্তরণের জন্য, সর্বোপরি পশ্চিমা ভোগবাদী সমাজের আন্তর্জাতিক সদস্য হয়ে উঠতে স্বদেশে অনুরূপ সমাজ গড়ে তোলার পক্ষপাতী_হোক না সে এলিট সমাজ গোটা জনগোষ্ঠীর তুলনায় অতিশয় সংখ্যালঘু।
কিন্তু ভোগের বাসনায় এই সংখ্যালঘু শ্রেণীর বিস্তার ঘটছে। সমাজের উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মেধাবী সন্তানরা পাড়ি জমাচ্ছে আমেরিকা-কানাডা ইউরোপে, স্বদেশে ফেরার বাসনা পরিত্যাগ করে। যাঁরা স্বদেশে আছেন, তাঁরা আছেন বিদেশি কেতায় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজি চর্চাকে জীবনের মূলধন গণ্য করে। সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এতে করে এই বিশেষ শ্রেণী, শক্তিমান শ্রেণীর মধ্যে অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে তাদের বিদেশনির্ভর কমপ্রেডর চরিত্রের প্রকাশ ও বিস্তার ঘটছে। এর ফলে স্বদেশের সর্বাঙ্গীণ ও সর্বজনীন উন্নতি ঘটছে না। বিশাল জনশ্রেণী বাংলানির্ভর হওয়ার কারণে জীবনযাত্রার সর্বস্তরে বিশেষভাবে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে, পিছিয়ে থাকছে। লক্ষ করার বিষয় যে দীর্ঘ সময়েও (যেমন গত ৪০ বছরে) শাসক শ্রেণী তথা সুবিধাভোগী শ্রেণী গোটা জাতিকে, পশ্চাৎপদ জনশ্রেণীকে শিক্ষিত করে তোলার কোনো রকম চেষ্টাই করেনি।
এই না করার পেছনে শ্রেণীস্বার্থ জড়িয়ে আছে। ১৬ কোটি মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা হলে এর একটা বড়োসড়ো অংশ উচ্চশিক্ষার দিকে এগিয়ে যাবে, হয়তোবা দাবি তুলবে তাদের মুখের ভাষা বাংলাকে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের জন্য। এ ছাড়াও এতসংখ্যক শিক্ষার্থী সমাগমে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হবে, যা সুবিধাভোগীর কাম্য হতে পারে না। কারণ সুবিধার সবটুকুই তারা ছোটখাটো বৃত্তে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।
এমন সব কূটকারণের বশবর্তী হয়ে ইংরেজি শিক্ষিত শাসকগোষ্ঠী ও নানা স্তরের পেশাজীবী, বিশেষত ধনিক-বণিক শ্রেণী দেশীয় বনাম বিদেশি ভাষার দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রেখেছে। দ্বন্দ্বের শেষে সিনথেসিস যদি বা ঘটে, তাহলে বিদেশি ভাষা ও পুঁজির সঙ্গে একান্ত আঁতাতে। সে ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তি এই সংখ্যালঘু শ্রেণীর সাহায্যে এগিয়ে থাকবে। সাম্রাজ্যবাদ বরাবরই তো বৃহত্তর জনশ্রেণীর বিরোধী ভূমিকায় অবস্থান করে থাকে।
বাংলা ভাষার এ আর্থ-সামাজিক অবনতি শুধু ভাষার জন্য লড়াই করা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গেও তা লক্ষ করার মতো। যেখানে সংকট আরো বেশি। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত বাঙালির জীবনে বাংলা ভাষা দুই শক্তিমান ভাষা ইংরেজি ও হিন্দির আগ্রাসনে মহাসংকটে। এলিট শ্রেণীর জীবন থেকে তো বাংলা নির্বাসিত, যেটুকু অবশিষ্ট তা বড়জোর শিল্প-সাহিত্যে ও রবীন্দ্রসংগীতে। তাই তাঁদের সচেতন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর স্বল্পসংখ্যকের কণ্ঠে প্রতিবাদী ঘোষণা : 'আক্রান্ত মাতৃভাষা : আসুন প্রতিরোধ করি'।
দ্বিমাত্রিক আক্রমণের শিকার পশ্চিমবঙ্গের ত্রিপুরায় বাংলা ভাষা। এ বিষয়ে ভাবিত পশ্চিমবঙ্গের সুধীজনদের আশঙ্কা, এভাবে সেখানে বাংলা ভাষা এখন গভীর সংকটে। তাদেরও আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে দূর ভবিষ্যতে জীবন-জীবিকা থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হয়ে মরুবালিতে জলস্রোত হারিয়ে যাওয়ার মতো করে বাংলা ভাষাও বিলুপ্তির পথ ধরবে।
আমার বিশ্বাস, এতটা বিপর্যয় সম্ভবত বাংলা ভাষার ভাগ্যে লেখা নেই। কারণ ৩০ কোটি বাঙালির মুখের ভাষা দু-তিন কোটি শিক্ষিত বাঙালির উটকো মানসিকতার টানে সাহিত্যের দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিপরীত স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা নয়। ভাষিক চেতনা কোনো না কোনো সময় ফিরে দাঁড়াবে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং আনুষ্ঠানিকতার রঙিন ফানুস এক পাশে সরিয়ে।
তবুও এ কথা সত্য, যে হারে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায়তনের সংখ্যা বাড়ছে_কিন্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত তাতে পূর্বোক্ত আশঙ্কা একেবারে ভিত্তিহীন নয়। বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক আরেক সমস্যা আরবি মাধ্যমের মাদ্রাসা শিক্ষার রূপকথা আর এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী আসে দরিদ্র শ্রেণী থেকে, কিছুসংখ্যক নিম্নমধ্যবিত্ত বা রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে।
মাদ্রাসা শিক্ষাও কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য সূত্রের বিপুল আর্থিক সাহায্যে যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সমাজে সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জানি, পাকিস্তানে ধর্মান্ধ তালেবান যোদ্ধা অর্থাৎ ছাত্রযোদ্ধা তৈরির কারখানা ছিল সেখানকার মাদ্রাসাগুলো। বিশেষ কারণে এদের অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ জোগান দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান উত্থান পাকিস্তানের রাজনৈতিক-সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেশটাকে যে কী ভয়াবহ রক্তাক্ত নৈরাজ্যের অঙ্গনে পেঁৗছে দিয়েছে, তা সবারই জানা।
কাজেই ভাষাবিষয়ক পর্যালোচনায় আমাদেরও ভাবনার কারণ, শঙ্কার কারণ রয়েছে এ জন্য যে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সম্মিলিত শক্তি বিপুল, রক্ষণশীলতা প্রবল। ঐতিহ্যবাহী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে তাদের সংযোগ নেই, তাই থাকার কথা নয় জাতীয়ভিত্তিক চেতনার সঙ্গে কিছুকাল আগে যে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল, তা অংশত মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার কারণে। যে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার জঙ্গিপনা এখনো সমূলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি, যদিও অনেকাংশে দমন করা হয়েছে।
বিপন্ন বাংলা ভাষার সংকট তাই একাধিক উৎস থেকে। স্বীকার করার দরকার যে বাংলাদেশে বাঙালি জাতি রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার (সামাজিক) দিক থেকে বহুধাবিভক্ত। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজ পুরোপুরি তিন ধারায় বিভক্ত_ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম ও আরবি মাধ্যমের বিভিন্নতায়। অবশেষে বিচার বিভাজনটা ইংরেজিপন্থী, বাংলাপন্থী ও মাদ্রাসাপন্থী হিসেবে।
এর একটা মতাদর্শগত বিভিন্নতার বিপজ্জনক দিকও রয়েছে এবং তা মোটামুটি বিচারে পাশ্চাত্যপন্থী (অনেকাংশে সাম্রাজ্যবাদনির্ভর), বাঙালি জাতীয়তাবাদপন্থী ও ধর্মীয় রক্ষণশীলপন্থী হিসেবে। শেষোক্ত অংশে উগ্র জঙ্গিবাদের উদ্ভবের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ তিনের মধ্যে বাংলা ধারাই তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বাকি দুটোই যথেষ্ট শক্তিমান। সেখানেই বিপদের সম্ভাবনা। গণতন্ত্রী-প্রগতিবাদী ইরানি রাজনীতি কী জাদুমন্ত্রেই না শাহ-বিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আয়াতুল্লাহপন্থী হিসেবে মজবুত ভিত তৈরি করেছিল, সেই ইতিহাস থেকে গণতন্ত্রী ও প্রগতিবাদী সবারই শিক্ষা নেওয়া অপরিহার্য।
এদিক থেকে বিবেচনায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা খুব একটা ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হয় না। আমরা কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যুক্তিহীন আত্মপ্রসাদে ভুগি। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস, এখন আর আত্মপ্রসাদের সুযোগ নেই এবং দিন দিন সে জায়গাটা সংকুচিত হচ্ছে। হচ্ছে বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদের নানা মাত্রিক প্রভাবের কারণে। ব্রিটিশ ভারতের মেকলের পোষ্যপুত্ররা প্রজন্মান্তরে বর্তমান বাংলাদেশে মার্কিন পরাশক্তির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দোসর, ভাষা-সংস্কৃতিও সে প্রভাববলয় থেকে মুক্ত নয়।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা বাংলার প্রচলন নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চরিত্র যেমন সাংস্কৃতিক, তেমনি রাজনৈতিক, অনেকটা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মতোই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গোটা বিষয়ের তাৎপর্য রাজনৈতিক-সামাজিক বিচারে গভীরতর।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক, কবি, প্রাবন্ধিক
মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের প্রবল আবেগ কেন এক মাসের বৃত্তে বন্দি হয়ে থাকল, কেন তা জীবনের সর্বস্তরে প্রবাহিত হয়নি। এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া দরকার। দরকার জাতির ভালো-মন্দ, উন্নতি-অবনতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। বিশেষ করে যখন বাঙালি নামক জাতির জনশ্রেণীর জবানি ভাষা, তাদের সাহিত্যের ভাষা বাংলা এবং বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের সংবিধানমাফিক 'প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা'।
এ অবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় এবং উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পরিবর্তে যদি অন্য কোনো ভাষা অর্থাৎ ইংরেজি ব্যবহৃত হতে থাকে, তাহলে তাতে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয় কি না তা সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ অনেকের বিশ্বাস_বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে অনেক লড়াইয়ের পর যখন স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, তখন সে রাষ্ট্রের জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহৃত হওয়াটাই উচিত। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই তো মাতৃভাষা জাতীয় ভাষা হিসেবে জীবন-জীবিকাসহ সর্বস্তরে যুক্ত।
কিন্তু বাংলাদেশে ভাষার চালচিত্রটা বিপরীত। লড়াই করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পর ভাষাসংগ্রামীদের উত্তরসূরি পরবর্তী প্রজন্ম কেন মাতৃভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষা ইংরেজিকে মাতৃভাষার স্থানে বসিয়েছে। এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়ে বলা দরকার যে ভাষা নিয়ে জাতিত্ব নিয়ে যত দিন লড়াই চলেছে, চলেছে আর্থ-সামাজিক স্তরে শ্রেণীস্বার্থ পূরণের জন্য, তত দিন ওই দুটো বিষয়ের সঙ্গে গভীর মানসিক যোগ ছিল উঠতি বাঙালি মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণীর। এরপর লড়াই শেষ, প্রাপ্তি সম্পন্ন, ভাষাচেতনা, জাতিত্বচেতনারও প্রয়োজন শেষ। কথাগুলো ঢালাওভাবে সব বাঙালির জন্য নয়, শিক্ষিত বাঙালির সংখ্যাগুরু অংশের জন্য সত্য।
কিন্তু কেন এ বিপরীতমুখী যাত্রা। এর প্রধান কারণ, মাতৃভাষা উচ্চশিক্ষার মাধ্যম না হওয়ার ফলে জীবিকার সঙ্গে যত সম্পর্ক সবই ইংরেজির, মাতৃভাষা বাংলা নয়। এ জন্যই অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইংরেজিরই যত মূল্যমান, বাংলার সেখানে স্থান নেই। জীবিকার প্রয়োজনে এবং জীবনযাত্রায় অধিকতর সচ্ছলতা তৈরির জন্য ইংরেজিকে গ্রহণ করেছেন একদা বাংলাপ্রেমী রাজনীতিবিদ পেশাজীবী এবং তাঁদের উত্তরসূরি অধিকাংশই।
এ অবস্থা চলতে থাকলে এমন একসময় আসবে, যখন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা বিলুপ্তির পথ ধরবে, নিদেনপক্ষে কোণঠাসা হয়ে সাহিত্যের এক কোণে পড়ে থাকবে। অনেক গর্বের বাংলা সাহিত্য ঐতিহ্যিক নমুনা হিসেবে জাদুঘরে ঠাঁই নেবে। আর অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের জবানি ভাষা হিসেবে টিকে থাকবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো, উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা, মায়া জনগোষ্ঠী বা জঙ্গলে বিতাড়িত অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মৌখিক ভাষার মতো।
মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিশ্বায়ন ও সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য বিস্তার পূর্বোক্ত অবস্থার এবং বর্তমানে শিক্ষিত বাঙালি মানসিকতার প্রধান কারণ। তাঁরা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ ও আভিজাত্যের উত্তরণের জন্য, সর্বোপরি পশ্চিমা ভোগবাদী সমাজের আন্তর্জাতিক সদস্য হয়ে উঠতে স্বদেশে অনুরূপ সমাজ গড়ে তোলার পক্ষপাতী_হোক না সে এলিট সমাজ গোটা জনগোষ্ঠীর তুলনায় অতিশয় সংখ্যালঘু।
কিন্তু ভোগের বাসনায় এই সংখ্যালঘু শ্রেণীর বিস্তার ঘটছে। সমাজের উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর মেধাবী সন্তানরা পাড়ি জমাচ্ছে আমেরিকা-কানাডা ইউরোপে, স্বদেশে ফেরার বাসনা পরিত্যাগ করে। যাঁরা স্বদেশে আছেন, তাঁরা আছেন বিদেশি কেতায় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজি চর্চাকে জীবনের মূলধন গণ্য করে। সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এতে করে এই বিশেষ শ্রেণী, শক্তিমান শ্রেণীর মধ্যে অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে তাদের বিদেশনির্ভর কমপ্রেডর চরিত্রের প্রকাশ ও বিস্তার ঘটছে। এর ফলে স্বদেশের সর্বাঙ্গীণ ও সর্বজনীন উন্নতি ঘটছে না। বিশাল জনশ্রেণী বাংলানির্ভর হওয়ার কারণে জীবনযাত্রার সর্বস্তরে বিশেষভাবে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে, পিছিয়ে থাকছে। লক্ষ করার বিষয় যে দীর্ঘ সময়েও (যেমন গত ৪০ বছরে) শাসক শ্রেণী তথা সুবিধাভোগী শ্রেণী গোটা জাতিকে, পশ্চাৎপদ জনশ্রেণীকে শিক্ষিত করে তোলার কোনো রকম চেষ্টাই করেনি।
এই না করার পেছনে শ্রেণীস্বার্থ জড়িয়ে আছে। ১৬ কোটি মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা হলে এর একটা বড়োসড়ো অংশ উচ্চশিক্ষার দিকে এগিয়ে যাবে, হয়তোবা দাবি তুলবে তাদের মুখের ভাষা বাংলাকে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের জন্য। এ ছাড়াও এতসংখ্যক শিক্ষার্থী সমাগমে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হবে, যা সুবিধাভোগীর কাম্য হতে পারে না। কারণ সুবিধার সবটুকুই তারা ছোটখাটো বৃত্তে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।
এমন সব কূটকারণের বশবর্তী হয়ে ইংরেজি শিক্ষিত শাসকগোষ্ঠী ও নানা স্তরের পেশাজীবী, বিশেষত ধনিক-বণিক শ্রেণী দেশীয় বনাম বিদেশি ভাষার দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রেখেছে। দ্বন্দ্বের শেষে সিনথেসিস যদি বা ঘটে, তাহলে বিদেশি ভাষা ও পুঁজির সঙ্গে একান্ত আঁতাতে। সে ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তি এই সংখ্যালঘু শ্রেণীর সাহায্যে এগিয়ে থাকবে। সাম্রাজ্যবাদ বরাবরই তো বৃহত্তর জনশ্রেণীর বিরোধী ভূমিকায় অবস্থান করে থাকে।
বাংলা ভাষার এ আর্থ-সামাজিক অবনতি শুধু ভাষার জন্য লড়াই করা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গেও তা লক্ষ করার মতো। যেখানে সংকট আরো বেশি। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত বাঙালির জীবনে বাংলা ভাষা দুই শক্তিমান ভাষা ইংরেজি ও হিন্দির আগ্রাসনে মহাসংকটে। এলিট শ্রেণীর জীবন থেকে তো বাংলা নির্বাসিত, যেটুকু অবশিষ্ট তা বড়জোর শিল্প-সাহিত্যে ও রবীন্দ্রসংগীতে। তাই তাঁদের সচেতন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর স্বল্পসংখ্যকের কণ্ঠে প্রতিবাদী ঘোষণা : 'আক্রান্ত মাতৃভাষা : আসুন প্রতিরোধ করি'।
দ্বিমাত্রিক আক্রমণের শিকার পশ্চিমবঙ্গের ত্রিপুরায় বাংলা ভাষা। এ বিষয়ে ভাবিত পশ্চিমবঙ্গের সুধীজনদের আশঙ্কা, এভাবে সেখানে বাংলা ভাষা এখন গভীর সংকটে। তাদেরও আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে দূর ভবিষ্যতে জীবন-জীবিকা থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হয়ে মরুবালিতে জলস্রোত হারিয়ে যাওয়ার মতো করে বাংলা ভাষাও বিলুপ্তির পথ ধরবে।
আমার বিশ্বাস, এতটা বিপর্যয় সম্ভবত বাংলা ভাষার ভাগ্যে লেখা নেই। কারণ ৩০ কোটি বাঙালির মুখের ভাষা দু-তিন কোটি শিক্ষিত বাঙালির উটকো মানসিকতার টানে সাহিত্যের দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিপরীত স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা নয়। ভাষিক চেতনা কোনো না কোনো সময় ফিরে দাঁড়াবে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং আনুষ্ঠানিকতার রঙিন ফানুস এক পাশে সরিয়ে।
তবুও এ কথা সত্য, যে হারে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায়তনের সংখ্যা বাড়ছে_কিন্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত তাতে পূর্বোক্ত আশঙ্কা একেবারে ভিত্তিহীন নয়। বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক আরেক সমস্যা আরবি মাধ্যমের মাদ্রাসা শিক্ষার রূপকথা আর এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী আসে দরিদ্র শ্রেণী থেকে, কিছুসংখ্যক নিম্নমধ্যবিত্ত বা রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে।
মাদ্রাসা শিক্ষাও কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য সূত্রের বিপুল আর্থিক সাহায্যে যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সমাজে সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জানি, পাকিস্তানে ধর্মান্ধ তালেবান যোদ্ধা অর্থাৎ ছাত্রযোদ্ধা তৈরির কারখানা ছিল সেখানকার মাদ্রাসাগুলো। বিশেষ কারণে এদের অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ জোগান দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান উত্থান পাকিস্তানের রাজনৈতিক-সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেশটাকে যে কী ভয়াবহ রক্তাক্ত নৈরাজ্যের অঙ্গনে পেঁৗছে দিয়েছে, তা সবারই জানা।
কাজেই ভাষাবিষয়ক পর্যালোচনায় আমাদেরও ভাবনার কারণ, শঙ্কার কারণ রয়েছে এ জন্য যে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সম্মিলিত শক্তি বিপুল, রক্ষণশীলতা প্রবল। ঐতিহ্যবাহী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে তাদের সংযোগ নেই, তাই থাকার কথা নয় জাতীয়ভিত্তিক চেতনার সঙ্গে কিছুকাল আগে যে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল, তা অংশত মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার কারণে। যে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার জঙ্গিপনা এখনো সমূলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি, যদিও অনেকাংশে দমন করা হয়েছে।
বিপন্ন বাংলা ভাষার সংকট তাই একাধিক উৎস থেকে। স্বীকার করার দরকার যে বাংলাদেশে বাঙালি জাতি রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার (সামাজিক) দিক থেকে বহুধাবিভক্ত। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজ পুরোপুরি তিন ধারায় বিভক্ত_ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম ও আরবি মাধ্যমের বিভিন্নতায়। অবশেষে বিচার বিভাজনটা ইংরেজিপন্থী, বাংলাপন্থী ও মাদ্রাসাপন্থী হিসেবে।
এর একটা মতাদর্শগত বিভিন্নতার বিপজ্জনক দিকও রয়েছে এবং তা মোটামুটি বিচারে পাশ্চাত্যপন্থী (অনেকাংশে সাম্রাজ্যবাদনির্ভর), বাঙালি জাতীয়তাবাদপন্থী ও ধর্মীয় রক্ষণশীলপন্থী হিসেবে। শেষোক্ত অংশে উগ্র জঙ্গিবাদের উদ্ভবের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ তিনের মধ্যে বাংলা ধারাই তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং বাকি দুটোই যথেষ্ট শক্তিমান। সেখানেই বিপদের সম্ভাবনা। গণতন্ত্রী-প্রগতিবাদী ইরানি রাজনীতি কী জাদুমন্ত্রেই না শাহ-বিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আয়াতুল্লাহপন্থী হিসেবে মজবুত ভিত তৈরি করেছিল, সেই ইতিহাস থেকে গণতন্ত্রী ও প্রগতিবাদী সবারই শিক্ষা নেওয়া অপরিহার্য।
এদিক থেকে বিবেচনায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থা খুব একটা ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হয় না। আমরা কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যুক্তিহীন আত্মপ্রসাদে ভুগি। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস, এখন আর আত্মপ্রসাদের সুযোগ নেই এবং দিন দিন সে জায়গাটা সংকুচিত হচ্ছে। হচ্ছে বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদের নানা মাত্রিক প্রভাবের কারণে। ব্রিটিশ ভারতের মেকলের পোষ্যপুত্ররা প্রজন্মান্তরে বর্তমান বাংলাদেশে মার্কিন পরাশক্তির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দোসর, ভাষা-সংস্কৃতিও সে প্রভাববলয় থেকে মুক্ত নয়।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা বাংলার প্রচলন নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ লড়াই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চরিত্র যেমন সাংস্কৃতিক, তেমনি রাজনৈতিক, অনেকটা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মতোই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গোটা বিষয়ের তাৎপর্য রাজনৈতিক-সামাজিক বিচারে গভীরতর।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক, কবি, প্রাবন্ধিক
No comments