‘বাচ্চু আমার ভয়ে ঘরের পাটাতনে লুকিয়ে ছিলেন’ by অশোকেশ রায় ও রেজাউল করিম বিপুল

একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর নগরকান্দার লস্কারদিয়ায় গিয়ে রেডিওতে শুনতে পেলাম, পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর আহ্বান প্রচার করা হচ্ছে।
খুশিতে-আনন্দে বিজয়ের উৎসবে সামিল হতে সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুর শহরের দিকে ছুটলাম। শহরের আলীপুরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই মনে হলো, এক ব্যক্তি ছুটে চলে গেলেন। দোতলা বাড়ির ওপরে উঠে গেলেন তিনি। পরে জানতে পারলাম, ওই লোক বাড়িটির ছাদের পাটাতনে গিয়ে লুকিয়েছিলেন। আর তিনি হচ্ছেন, কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকার। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই আমাকে দেখেই ভয়ে পালিয়ে থাকেন তিনি। ওই বাড়ির বাসিন্দারা নাকি বাচ্চুরও আত্মীয় ছিলেন।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার সম্পর্কে এ ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, “ফরিদপুরের কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধী তার ধূর্ততার কারণেই মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার রোষ থেকে বেঁচে যান।”

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ বাংলানিউজকে আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাচ্চু রাজাকার নগরকান্দা, সালথা ও বোয়ালমারীর পাশাপাশি ফরিদপুর শহরে নানা অপকর্ম-অপরাধ করেছেন। আর আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অবরুদ্ধ শহরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। যদি স্বাধীনতার পরে নিজ হাতে বাচ্চু রাজাকারকে শাস্তি দিতে কিংবা তাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখলে বেশি শান্তি পেতাম। তারপরও ফাঁসিতে আমি খুশি। এখন তাকে দ্রুত ধরে এনে এ রায় কার্যকর করা হোক।”

পুরো মুক্তিযুদ্ধকালে ছোটখাটো যুদ্ধ ও যুদ্ধের স্বপক্ষে কর্মকাণ্ড চালিয়ে একাত্তরের অবরুদ্ধ ফরিদপুর শহরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকার-আলবদর ও শান্তি কমিটিকে তটস্থ করে রেখেছিলেন সে সময়কার ফরিদপুর জেলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র মাসুদ। ১৬ বছরের মাসুদ ফরিদপুরের কনিষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধাও। মাসুদ ও তার সঙ্গী যোদ্ধারা গোপনে ঘুরে ঘুরে এসব কাজকর্ম করেন। বিশেষ করে পাকিস্তান দিবসের আগের দিন শহরের তিনটি স্থানে এবং ফরিদপুর জিলা স্কুলে পরীক্ষা চলাকালে গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে আলোড়ন তোলেন সৈয়দ মাসুদ হোসেন ও তার সঙ্গীরা। এ কাজের জন্য শান্তি কমিটির মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে আটক থেকে এক সপ্তাহ চরম নির্যাতিতও হন কিশোর এই যোদ্ধা।

মাসুদ বলেন, “আমি তখন মাত্র ১৬ বছরের কিশোর। তাই মুজাহিদ বা বাচ্চু রাজাকারকে ওইভাবে সরাসরি চিনতাম না। তবে ফরিদপুর স্টেডিয়ামের আর্মি ও রাজাকার-আলবদর নির্যাতন ক্যাম্পে সপ্তাহখানেক আটকে থেকে চোখের সামনে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন করতে দেখেছি পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি বাঙালি-বিহারিদেরও। ভাসা ভাসাভাবে বাচ্চুর নাম শুনতেও পারি। তবে আমি নিশ্চিত যে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঠিকই বাচ্চু আমাকে চিনে রেখেছিলেন। তার প্রমাণ পেয়েছি, একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর আমাকে দেখেই বাচ্চুর পালানোর ঘটনায়।”

“এরপর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে আসার পর বাচ্চু আমাকে দীর্ঘদিন অনুসরণ করেছেন, বাকা চাহনি দিয়ে কটাক্ষ করেছেন। এ ধরনের একদিনের ঘটনায় আমি তার সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায়ও জড়িয়েছিলাম। তারপর তিনি লেজ গুটিয়ে চম্পটও দেন”, যোগ করলেন মাসুদ।

উল্লেখ্য, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাচ্চুর বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয় ফরিদপুরে। রক্ষীবাহিনীর হাতে একমাত্র ভাই হারুন মারা যাওয়ার পরে বাচ্চু আত্মসমর্পণ করেন কোর্টে। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে জামিনে বের হয়ে আসেন তিনি। পরে বিভিন্ন জটিলতায় এই মামলা আর এগোয়নি।

জেল থেকে বের হয়ে বাচ্চু মাওলানা আবুল কালাম আযাদ নাম নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। স্বাধীনতার সময় লুট করা কোটি টাকার সম্পদ দিয়ে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। আগের বাহিনীর সদস্যের জমা করে শুরু হয় স্বাধীন দেশে বাচ্চুর নতুন তাণ্ডব। ততদিনে বিশিষ্ট মাওলানা হয়ে যাওয়া বাচ্চুর একাত্তরের কুকীর্তি প্রচার করতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন, ফরিপুরের যুবলীগ নেতা ছিরু মিয়া। আদালতে তার (বাচ্চু) নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি জামিন পেয়েছিলেন।

এরপর বাচ্চু কিছুদিন বাকীগঞ্জ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও শহরের টেপাখোলা মসজিদে ইমামতি করেন। এই টেপাখোল মসজিদেই একদিন কিশোরী ধর্ষণের চেষ্টা চালান বাচ্চু রাজাকার।

যে টেপাখোলা মসজিদে তিনি ইমামতি করতেন সেখানে তাকে খাবার দিতে আসতো প্রতিবেশী ওই দরিদ্র কিশোরী। সেদিন একা পেয়ে মেয়েটকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান বাচ্চু। মেয়েটির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে মেয়েটিকে রক্ষা ও বাচ্চুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এরপর মসজিদ থেকে বিতাড়িত হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যান বাচ্চু। তারপর আর কোনো দিন ফরিদপুর শহরে আসেননি তিনি।

বর্তমানে ৫৫ বছর বয়সী মাসুদ ৪১ বছর আগের সেসব স্মৃতি হাতড়ে আরও বলেন, “একাত্তরের ১৩ আগস্ট পাকিস্তান দিবসের আগের দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মনোবল ভেঙে দিতে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী নতুন পানির ট্যাংক, পুলিশ লাইন আর্মি-রাজাকার ক্যাম্প আর কোতোয়ালি থানার সামনে তিনটি এলাকায় তিনটি গ্রেনেড চার্জ করি আমরা। পরদিন প্রতিক্রিয়া জানতে আমি একা শহরে বের হয়ে ধরা পড়ে যাই যুব শান্তি কমিটির পাকিস্তানি দোসরদের হাতে। তারা আমাকে যুব শান্তি কমিটির অফিসে নিয়ে আগের রাতের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারধর করে তুলে দেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে।”

“পাকিস্তানি সেনারা আমাকেসহ আটক করা কয়েকজনকে বেশ কিছুটা পথ হাঁটিয়ে নিয়ে যায় ফরিদপুর স্টেডিয়ামের নির্যাতন ক্যাম্পে। যাওয়ার পথেও সেনারা পেছন থেকে আমাকে লাথি মারতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর ফরিদপুরের প্রধান মেজর আকরাম কোরাইশীর নেতৃত্বে আর্মি-রাজাকার-বিহারিদের হাতে টানা সাতদিন দিনরাত নির্যাতিত হই। তারা একদিন আমাকেসহ ৩০/৩৫ জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিঠমোড়া করে বেধে আর্মির গাড়িতেও তোলে। পরে কি মনে করে আমাকেসহ কয়েকজনকে রেখে যায়। বাকি ২১ জনকে নিয়ে শহরতলীর বাখুণ্ডা জোড়া ব্রিজের ওপরে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।”

সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, “এরপর আব্বা আমাকে পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে এক পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে আনেন নির্যাতন ক্যাম্প থেকে। ছাড়া পেয়েই আমি ও আমার এক বন্ধু চলে যাই খলিলপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখান থেকে দু’টি গ্রেনেড নিয়ে এসে লুকিয়ে রাখি। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমার স্কুল ফরিদপুর জিলা স্কুলে পরীক্ষা শুরু করে সবকিছু স্বাভাবিক দেখাতে। সে পরীক্ষা পণ্ড করতে তাই আমার কাছে থাকা গ্রেনেডটি বিস্ফোরণের সিদ্ধান্ত নেই।”

“একদিন পরীক্ষা চলাকালে বন্ধু মিলনকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম জেলা স্কুলে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রেনেড চার্জ করে দৌঁড়ে পালিয়ে এলাম। সেদিনই বিকেলে শহরে শান্তি কমিটির জনসভা ডেকে আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান মেজর আতা খাঁ। ফলে আর শহরে নিরাপদ মনে করলাম না। চলে গেলাম খলিলপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখান থেকেই যুদ্ধে অংশ নেই বাকি সাড়ে তিন মাস।”

আক্ষেপ করে মাসুদ বলেন, “অবরুদ্ধ শহরে তখনকার ইসলামী ছাত্রসংঘ নেতা হিসেবে পরে আলবদরে পরিণত হওয়া বাচ্চু রাজাকার এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেননি। মাঝে মাঝে নিজ এলাকা সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীতে গিয়ে ৫০টি গ্রামে গিয়ে চালিয়েছেন তাণ্ডব। এসব ঘটনা কানে আসতো আর প্রতিশোধস্পৃহায় জ্বলে-পুরে মরতাম। কিন্তু ভাসা ভাসা ভাবে চেনার কারণে এর হোতা যে বাচ্চু রাজাকার আর তার নেতা মুজাহিদ, তা তখন বুঝে উঠতে পারিনি। এসব জেনেছি, স্বাধীনতার পরে দালাল আইনে বাচ্চু জেলে যাবার পর। যদি জানতাম আর বাচ্চুকে ভালোভাবে চিনতাম তাহলে আর কোথাও না মেরে গ্রেনেডগুলো মারতাম বাচ্চুকে খুঁজে বের করে তার ওপরেই।”

একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বরের বাচ্চুর পালানোর ঘটনা সম্পর্কে মাসুদ বলেন, “সেদিন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরের বাড়িতে এসেছিলাম আম্মাকে দেখতে। এসে দেখলাম, বাড়িতে তালা দিয়ে আমার পরিবারের সবাই চলে গেছেন ততোদিনে মুক্তাঞ্চল হয়ে যাওয়া নগরকান্দার লস্কারদিয়ায় আমাদের আত্মীয় বাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে রওনা হলাম সেখানে। গিয়েই রেডিওতে শুনলাম, মিত্রবাহিনীর ভারতীয় কমান্ডার জেনারেল মানেক শার পাকিস্তানি সেনাদের প্রতি আত্মসমর্পণের আহ্বানের ঘোষণা প্রচারিত হচ্ছে। খুশিতে-আনন্দে বিজয়ের উৎসবে সামিল হতে সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুর শহরের দিকে ছুটলাম। শহরের আলীপুরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ওই বাড়িতেই ঘটলো আমাকে দেখে  কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকারের পালানোর ঘটনা।”

মাসুদ বলেন, “সেদিনও তো যুদ্ধ শেষ হয়নি। জানতে-বুঝতে পারলে তো তখনও বাচ্চুকে মেরে ফেলতে পারতাম। তাহলেও স্বাধীনতা পরবর্তী অপকর্মগুলো করতে পারতেন না এই লোক।”

“আর পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফের স্বমূর্তিতে ফেরেন বাচ্চু। জেল থেকে বের হয়ে গেলেন, চোখের সামনেই দেখলাম। আমাকে অনুসরণ করে, বাকা চোখে মেপে আমার ক্ষতি করতে চাইছিলেন, তাও বুঝলাম। কিন্তু তখন আর কিছুই করার ছিল না আমাদের। শুধু একদিন সহ্য করতে না পেরে ডেকে হুমকি দিলাম, আর তাকালে চোখ তুলে নেবো। বঙ্গবন্ধু নেই তো কি হয়েছে, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তো বেঁচে আছি বলেও হুঙ্কার ছাড়লাম। তাতেই পালিয়ে গেলেন কাপুরুষ লোকটা। আর আমার পিছু নেননি।”

“তারপর তো মসজিদে কিশোরী মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে ফরিদপুর থেকেই পালিয়ে গেলেন বাচ্চু” উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন অকপটে স্বীকার করে নিলেন যে, স্বাধীনতার আগে-পরে বাচ্চুর মতো নরপশুদের নির্মূল করতে না পারা আসলে তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থতারই ফসল।

মাসুদের আক্ষেপ যেন শেষ হবার নয়, ‘‘সেটা করে ফেলতে পারলে গত ৪১ বছর ধরে বিচার চাই, বিচার চাই করে দাবি ওঠানো লাগতো না। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অন্ধকারে আলোকশিখা দেখানো আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ কষ্টকর পথে হাঁটার প্রয়োজন হতো না।’’

‘‘তারপরও সান্ত্বনা এই যে, বাচ্চুর ফাঁসির রায় পেলাম। সরকার তাকে ধরে এনে ফাঁসিতে ঝোলাবে। একে একে বাকিদেরও একই পরিণত হবে। শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। স্বস্তি পাবেন নির্যাতিত মা-বোনেরা, ভুক্তভোগী আর শহীদের স্বজনেরা এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।’’- এভাবেই আশা-স্বপ্ন ব্যক্ত করে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা শেষ করলেন কিশোর বয়সে মা-মাটির ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া সৈয়দ মাসুদ হোসেন।


প্রতিবেদকঃ অশোকেশ রায় ও রেজাউল করিম বিপুল

No comments

Powered by Blogger.