এক লাখ দীপশিখা জ্বালিয়ে একুশ স্মরণ করবে নড়াইলবাসী
'আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি'-একুশের এমন গানের মতো নড়াইলের মানুষ প্রতি বছর ব্যতিক্রমভাবে পালন করেন একুশে ফেব্রম্নয়ারি আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলাকে।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রম্নয়ারি সূর্য অসত্ম যাবার সঙ্গে সঙ্গেই শহরের কুড়িরডোব ওয়েলিংটন মাঠে প্রজ্বলন করা হবে এক লাখ দীপশিখা। দীপশিখা দিয়ে অঙ্কিত করা হবে শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বাংলা বর্ণমালা, আল্পনাসহ আবহমান গ্রামবাংলার নানা বৈচিত্র্যের ছবি। কুড়িরডোব মাঠে এসব আয়োজন উপভোগ করতে সেখানে হাজির হবেন বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ। দেশবরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও একুশ উদ্যাপন পর্ষদের ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে শরিক হবেন। প্রদীপ প্রজ্বলনের উদ্বোধন করবেন একুশে পদক-২০১০ প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। আয়োজিত অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে বিকেল সাড়ে চারটায় আলোচনা, গণসঙ্গীত, আবৃত্তি ও নান্দনিক পাঠ। ১৪ বছর ধরে প্রতি একুশের সন্ধ্যায় আলো ঝলমলে আয়োজন হয়ে আসছে।ভাষা শহীদদের স্মরণে নড়াইলে ব্যতিক্রমী আয়োজন শুরম্ন হয় ১৯৯৭ সালে। শহরের মুচিরপুল এলাকায় নিখিলের চায়ের দোকানে চিত্রা থিয়েটার কর্মীদের আড্ডায় থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সুলতান মেলার প্রবক্তা নাট্যকার কচি খন্দকার প্রদীপ প্রজ্বলন করে ভাষা শহীদদের স্মরণের কথা তোলেন। যথা কথা তথা কাজ। বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কাবের শাহেদ আলী শানত্মকে। মাত্র কয়েক সঙ্গীকে নিয়ে তিনি কাজ শুরম্ন করলে অনেকেই তাচ্ছিল্য করেন। তার পরও উদ্যোগ থেমে থাকেনি। প্রথম বছর সুলতান মঞ্চ ও তদসংলগ্ন কুড়িরডোব মাঠে মাত্র ৭০০ মঙ্গল প্রদীপ (মাটির ছোট পাত্রে কেরোসিন ও সলতের ব্যবহার) প্রজ্বলন করা হয়। কুড়িরডোব মাঠে শহীদ মিনারের নকশায় মঙ্গল প্রদীপের ঝলমলে আলো সবার দৃষ্টি কাড়ে। চিত্রা থিয়েটার ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কাবের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে যথাক্রমে ১২ ও ২০ হাজার দ্বীপশিখা প্রজ্বলন করা হয়। এরপর ২০০০ সালে প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক ও কচি খন্দকারকে সদস্য সচিব করে একুশ উদ্যাপন পর্ষদ গঠন করা হয়। পর্ষদের সদস্য মলয় কু-ু, আব্দুর রশিদ মন্নু, প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাজল মুখাজর্ী, শরফুল আলম লিটু, শামীমুল ইসলাম টুলু, চিত্রশিল্পী দুলাল সাহা, ওসমান আলী, মুন্সী আসাদ, নাজমুল হাসান লিজা, লিটন বিশ্বাস, লাবলু বিশ্বাস এবং চিত্রা থিয়েটার ও মূর্ছনা সঙ্গীত নিকেতনসহ স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের কর্মীরা অকানত্ম পরিশ্রম করে একুশ উদ্যাপনে নতুন রূপ দেন। এর পরের বছর ৪০ হাজার মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। 'থিম এ্যাট অনস'কে সামনে রেখে প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাজল মুখাজর্ীর ডিজাইনে আলো জলমলের আয়োজন করা হয়। এরপর প্রতিবছর বাড়ছে আয়োজনের কলেবর। কনজু্যমার প্রোডাক্ট টাটকা এবারের আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
No comments