সফল অস্ত্রোপচারে মনিমুক্তাকে আলাদা করা হলো, সুস্থ আছে
যা ছিল পরিবারটির জন্য কল্পনাতীত, তা-ই এখন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। এখন স্বপ্ন, শুধু স্বাভাবিক-সুন্দরভাবে বড় হয়ে ওঠা। মনি-মুক্তা বেঁচে উঠবে, আলাদা দেহ নিয়ে দু'বোন খেলবে একসঙ্গে।
সব শঙ্কা কাটিয়ে তারা শিশুসুলভ দুষ্টুমিতে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। সোমবার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সংযুক্ত জমজ মনি-মুক্তাকে আলাদা করার পর এ স্বপ্নে এখন বিভোর তাদের মা-বাবা, স্বজনরা। সৃষ্টিকর্তার কাছে শিশুসন্তান দু'টির প্রাণভিৰা চেয়ে তারা এখন শুধু প্রার্থনা করছেন। একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে উৎকণ্ঠা নিয়ে হাসপাতালে চোখের জল ফেলছেন মা ও নানি। বিনামূল্যে সনত্মানদের আলাদা করার উদ্যোগ নেয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপৰের প্রতি বার বার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছেন তারা।দেশে চতুর্থবারের মতো ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা বুক, পেট জোড়া লাগানো ছয় মাসের জমজ দুই বোনকে আলাদা করেছে। সকাল ৯-৪০ মিনিটে শুরম্ন হওয়া অস্ত্রোপচারে সময় লাগে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেৰণের জন্য তাদের হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছে। অধ্যাপক এ আর খানের নেতৃত্বে ১২ চিকিৎসকের একটি টিম এ অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। মূল অপারেশনে থাকেন ৮ জন। পরবতর্ীতে ৬ জন করে চিকিৎসকের দুটি টিম শিশুদের ইনটেনসিভ কেয়ারে পর্যবেৰণ করবেন।
অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেয়া অধ্যাপক ডা. এ আর খান। তিনি জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। সংযুক্ত শিশু দুটির কিডনি, ফুসফুস আলাদা ছিল। শুধু দু'জনের দুটো লিভার একসঙ্গে জোড়া লাগানো। লিভার দু'টি আলাদা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জন্মগত ত্রম্নটি নিয়ে শিশু দুটি জন্ম নেয়। এটি কোন অভিশাপ নয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এ ত্রম্নটি দূর করা যায়। তিনি এ ধরনের সনত্মানদের অভিভাবককে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সব ধরনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি রয়েছে দেশে। শিশু হাসপাতাল ছাড়াও কয়েকটি হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা আছে।
উলেস্নখ্য, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পাল ও কৃষ্ণা পালের ঘরে জন্ম নেয় সংযুক্ত জমজ। সনত্মানদের নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়ে যায় এ দরিদ্র পরিবারটি। একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা নজরে পড়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ও সাজর্ারি বিভাগের প্রধান ডা. এ আর খানের। প্রতিবেদনটি দেখে তিনি রিপোর্টারের মাধ্যমে পবিারটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অপারেশনে লাখ টাকার প্রয়োজন। পরিবারটি অতি দরিদ্র হওয়ায় পুরো ব্যয়ভার বহন করেছে শিশু হাসপাতাল। শিশুদের অস্ত্রোপচারের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, এর আগে দেশে সংযুক্ত তিন যমজের অস্ত্রোপচার হয়। এর মধ্যে দুই জোড়া অস্ত্রোপচারের পর বেঁচে গেলেও একটি জোড়ার মৃতু্য হয়। শিশু হাসপাতালে এ নিয়ে দুটি সংযুক্ত জমজের অস্ত্রোপচার হলো। চিকিৎসকরা আশাবাদী, শিশু দুটো সুস্থ হয়ে উঠবে।
No comments