চরাচর-শীতের রাতে অসহায় মানুষ by আহমেদ রিয়াজ
বর্ষপঞ্জিতে পৌষ আর মাঘ শীতকাল। তবে শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় এরও আগে থেকে। গত কয়েক বছর শীত আসতে দেরি করলেও এবার দেরি করেনি। এবার পৌষের আগেই শুরু হয় কুয়াশার আনাগোনা। শীতও পড়েছে। আমাদের যাদের মাথার ওপর ছাদ আছে, তাদের কথা ভিন্ন।
রাতে দরজা-জানালা আটকে দিয়ে ঘরের ভেতর শীত প্রবেশ ঠেকাই। লেপ-কাঁথা-কম্বলে শরীর মুড়ে দিয়ে নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিই। ইদানীং অনেকের ঘরের ভেতর ফায়ারপ্লেসও আছে। কাজেই শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কা তাদের খুব একটা নাকাল করতে পারে না। কিন্তু যাদের ঘর নেই, তারা কী করে?
কাঁটাবন সিগন্যালের পাশের ফুটপাতের রাহেলা বেগমের কথাই ধরা যাক। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত পড়েছিল। হাড় কাঁপানো শীতে চটের বস্তায় দুই শিশুসন্তানকে মুড়িয়ে নিজে একটি কাঁথা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলেন। একটাই কাঁথা রাহেলার। এক কাঁথার নিচে তিনজনের জায়গা হবে না। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের ফুটপাতে রাত কাটানো শিশু মিজান ঘুমায় ব্যানার বিছিয়ে। গায়ে তার শতচ্ছিন্ন একটি কাঁথা। তার আশপাশে থাকা অন্য শিশুদের অবস্থাও প্রায় একই রকম। ফল বিক্রেতাদের ফেলে দেওয়া কাগজের ছেঁড়া কার্টন দিয়ে বিছানা পেতে জড়াজড়ি করে শুয়ে ছিল দুই শিশু।
রাজধানীতে ছিন্নমূল মানুষের দেখা বেশি পাওয়া যায় শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, ফার্মগেট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিরপুরের শাহ আলী মাজারে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- কোথাও একটুখানি ছাউনি পেলে সেখানেও শীতের রাত কাটানোর চেষ্টা করে এসব ঘরহীন মানুষ। এখন অবশ্য ফুটওভার ব্রিজগুলোকে রাতের নতুন আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে গৃহহীন কিছু মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশী, চানখারপুল, পুরান ঢাকার অলিগলি, মিরপুরসহ নগরীর অনেক জায়গায়ই রিকশা দাঁড় করিয়ে তার মধ্যে ঘুমায় মানুষ। ঢাকার কোথাও না কোথাও শীতের রাতে ঘরহীন মানুষকে শীতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যাবেই। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা চালায়। রাত ফুরালে আর দেখা মেলে না এসব ঘরহীন মানুষের। নগরীর ব্যস্ততা তাদেরও পেয়ে বসে। কেউ চলে যায় ভিক্ষা করতে, কেউ রিকশা চালাতে, কেউ মুটেগিরি করতে। আর আমাদের যাদের মাথার ওপর ছাদ আছে, তারা তো ভীষণ ব্যস্ত দেশ নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, অফিস নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, ব্যবসা নিয়ে। এত ব্যস্ততার মধ্যে ঘরহীন মানুষের শীতের রাত কেমন করে কাটে, সেটা ভাববার অবকাশ কোথায়? আর শীতের রাতে যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসব ঘরহীন মানুষের রাত কাটানো নিজের চোখে দেখে আসব- সে ইচ্ছা কজনের আছে? যাদের আছে তাদেরও তো পরদিনের কর্মব্যস্ততা ও পরিকল্পনা নিয়ে ঘুমুতে যেতে হয়। তবু কিছু মানুষ ঘরহীন মানুষদের নিয়ে ভাবেন। শীতার্ত মানুষদের একটুখানি উষ্ণতা দিতে এগিয়ে আসেন। না হলে আমরা 'মানুষ' কেন?
আহমেদ রিয়াজ
কাঁটাবন সিগন্যালের পাশের ফুটপাতের রাহেলা বেগমের কথাই ধরা যাক। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত পড়েছিল। হাড় কাঁপানো শীতে চটের বস্তায় দুই শিশুসন্তানকে মুড়িয়ে নিজে একটি কাঁথা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলেন। একটাই কাঁথা রাহেলার। এক কাঁথার নিচে তিনজনের জায়গা হবে না। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের ফুটপাতে রাত কাটানো শিশু মিজান ঘুমায় ব্যানার বিছিয়ে। গায়ে তার শতচ্ছিন্ন একটি কাঁথা। তার আশপাশে থাকা অন্য শিশুদের অবস্থাও প্রায় একই রকম। ফল বিক্রেতাদের ফেলে দেওয়া কাগজের ছেঁড়া কার্টন দিয়ে বিছানা পেতে জড়াজড়ি করে শুয়ে ছিল দুই শিশু।
রাজধানীতে ছিন্নমূল মানুষের দেখা বেশি পাওয়া যায় শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, ফার্মগেট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিরপুরের শাহ আলী মাজারে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর- কোথাও একটুখানি ছাউনি পেলে সেখানেও শীতের রাত কাটানোর চেষ্টা করে এসব ঘরহীন মানুষ। এখন অবশ্য ফুটওভার ব্রিজগুলোকে রাতের নতুন আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে গৃহহীন কিছু মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশী, চানখারপুল, পুরান ঢাকার অলিগলি, মিরপুরসহ নগরীর অনেক জায়গায়ই রিকশা দাঁড় করিয়ে তার মধ্যে ঘুমায় মানুষ। ঢাকার কোথাও না কোথাও শীতের রাতে ঘরহীন মানুষকে শীতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যাবেই। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা চালায়। রাত ফুরালে আর দেখা মেলে না এসব ঘরহীন মানুষের। নগরীর ব্যস্ততা তাদেরও পেয়ে বসে। কেউ চলে যায় ভিক্ষা করতে, কেউ রিকশা চালাতে, কেউ মুটেগিরি করতে। আর আমাদের যাদের মাথার ওপর ছাদ আছে, তারা তো ভীষণ ব্যস্ত দেশ নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, অফিস নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, ব্যবসা নিয়ে। এত ব্যস্ততার মধ্যে ঘরহীন মানুষের শীতের রাত কেমন করে কাটে, সেটা ভাববার অবকাশ কোথায়? আর শীতের রাতে যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসব ঘরহীন মানুষের রাত কাটানো নিজের চোখে দেখে আসব- সে ইচ্ছা কজনের আছে? যাদের আছে তাদেরও তো পরদিনের কর্মব্যস্ততা ও পরিকল্পনা নিয়ে ঘুমুতে যেতে হয়। তবু কিছু মানুষ ঘরহীন মানুষদের নিয়ে ভাবেন। শীতার্ত মানুষদের একটুখানি উষ্ণতা দিতে এগিয়ে আসেন। না হলে আমরা 'মানুষ' কেন?
আহমেদ রিয়াজ
No comments