ভালো' স্কুলে ভর্তি সংকট-স্কুলগুলোর মানোন্নয়নেই সমাধান
গতকাল মঙ্গলবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি শিশুকে জড়িয়ে থাকা এক মায়ের পরিতৃপ্ত মুখচ্ছবি মুদ্রিত হয়েছে। ছবির ক্যাপশন ছিল, 'ভিকারুননিসায় মেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, মা খুবই খুশি'। আনুমানিক সাড়ে চার কি পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুটি হয়তো জানেও না কী অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে সে, যে জন্য মা এত খুশি।
না, মেধার পরীক্ষায় নয়, লটারিতে সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। প্রথম শ্রেণীতে এক হাজার ৪৪০টি শূন্য আসনের বিপরীতে যেখানে ভর্তিচ্ছু শিশুর সংখ্যা ১৩ হাজার ২০০, সেখানেই এত বড় ভাগ্যবান যে শিশু, তার মা তো সঙ্গত কারণেই খুশি হবেন। যার সন্তান ঢাকার একটি 'ভালো' স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল, এমন একজন ভাগ্যবতী মায়ের আনন্দিত মুখচ্ছবি পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে বটে, কিন্তু ব্যর্থ-মনোরথ প্রায় ১২ হাজার মায়ের বিষণ্নতায় বিপন্নপ্রায় হতাশ মুখচ্ছবি কোনোদিন ছাপা হবে না, পাঠকও জানবেন না প্রতি তেরজনে একজন ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিশুদের বাইরে হাজার হাজার শিশু আর তাদের অভিভাবকদের কী চরম হতাশা বিরাজ করছে ভর্তিকে কেন্দ্র করে। যাদের সন্তান লটারিতে ভাগ্যগুণে ভিকারুননিসার মতো উচ্চমানসম্পন্ন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাদের অভিনন্দন জানাই, শিশুদের সাফল্য কামনা করি। কিন্তু যারা ভর্তি হতে পারেনি, সেই শিশুদের জন্য উদ্বিগ্ন তাদের অভিভাবকদের মতোই। ভিকারুননিসায় ভর্তি তথাকথিত অভিভাবক ফোরামসহ নানা সাংগঠনিক অসাধু তৎপরতায় অধ্যক্ষ বিড়ম্বিত, সে খবরও সমকালে পড়েছেন পাঠকরা। নগরীতে হলিক্রস, রাজউক, সরকারি আইডিয়াল, মনিপুর স্কুল, মতিঝিল আইডিয়ালসহ উচ্চমানসম্পন্ন স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য এমন অসম লড়াই ফি বছরের চিত্র। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। আসলে নগরীতে কয়েকটি অতি উন্নতমানের স্কুল দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। অন্যান্য স্কুলের মানোন্নয়নেও স্কুল পরিচালনা পর্ষদ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগ প্রয়োজন। ঢাকাসহ সারাদেশের স্কুলগুলোতে পাঠদানে শিক্ষকদের যোগ্যতা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা আর কঠোর মনিটরিংই ভালো ফলের মানদণ্ড। ভর্তি নিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি স্কুলে ভিড় করে কোনো স্থায়ী ফল হবে না। স্কুলগুলোর মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্যোগ নেবেন। সেটাই কাম্য। তাতেই সমাধান।
No comments