তৌফিক-ই-ইলাহীর সব সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থবিরোধী by আনু মুহাম্মদ
আমি আগেও বলছি, জ্বালানি উপদেষ্টাসহ বহুজাতিক কম্পানির স্বার্থ রক্ষাকারী, সহযোগীদের গণ-আদালতে বিচার করতে হবে। তৌফিক-ই-ইলাহীকে মহাজোট সরকার যখন জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয় তখনই আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি আমলা হিসেবে যখন ছিলেন,
তখন থেকে দেশের তেল-গ্যাসসহ জ্বালানির বিষয়ে যত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার সবই দেশের স্বার্থবিরোধী। এভাবেই একটি গোষ্ঠী দাঁড়িয়ে গেছে দেশের সম্পদ লুটে নেওয়ার জন্য। প্রথমে আমি ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে বলব। আমরা ফুলবাড়ী নিয়ে এশিয়া এনার্জির লন্ডন শেয়ারবাজারে ব্যবসা করার ব্যাাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছি। সরকারকে জানিয়েছি, সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছি। আমাদের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির লন্ডনে যে শাখা আছে, তারা সেখানে ঘেরাও করেছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমরা জানিয়েছি এশিয়া এনার্জি আপনাদের ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
এটা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে এখনো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চক্রান্ত চলছে। জ্বালানি খাতে আজ যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার পেছনে সরকারের কিছু ভুল নীতি ও ভুল লোককে দায়িত্ব প্রদান হলো মুখ্যত দায়ী। আমরা সক্ষমতা বাড়াতে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা- এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে বলেছিলাম। আমাদের প্রস্তাব ছিল; কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে লক্ষ করেছি, সব সরকারের অবস্থানই ছিল এক। ফুলবাড়ী কয়লাখনির চুক্তি করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন। উইকিলিকসের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি চাপ দিয়েছিলেন মার্কিন কম্পানিকে কাজ দিতে।
মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে যখন বিস্ফোরণ হয়, তখনই এ দেশের মানুষ সচেতন হয়ে ওঠে। আমাদের এ কমিটিও তখনই গঠিত হয়। এরপর থেকে যে ক্ষতি হয়েছে, যেগুলো আমি বিভিন্ন সময় বর্ণনা করেছি, তা আদায় করার চেষ্টা করে আসছি। ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমই হবে। এটি একটি নূ্যনতম হিসাব। যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ৫৫০ বিলিয়ন ঘটফুট। আমাদের বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস খরচ হয় তার দ্বিগুণ। এ পরিমাণ গ্যাস কিনতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ এ ক্ষতিপূরণ আদায়ে একটি কথাও বলে না সরকার। তারা চুপ করে আছে। এটা সুস্পষ্ট যে তারা এ ব্যাপারে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে মোটেই আগ্রহী নয়। দেশে অনেক গ্যাসকূপ অকেজো হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের কথা জোর দিয়ে বলেছিলাম। বহুদিন ধরে যেসব রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট অচল ছিল সেগুলো মেরামত করার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনোক্রমেই ভ্রূক্ষেপ করেনি। সরকার ও সরকারের কর্মকর্তারা বহুজাতিক কম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার এজেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ নিয়ে যে আইন করা হয়েছে, তা এই তৌফিক-ই-ইলাহীর মতো দুর্বৃত্তদের জন্য প্রতিরক্ষা বূ্যহ রচনা করেছে। এটি শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়, সরাসরি অপরাধ। ২০১০ সালে এ আইন প্রণয়নের সময় আমরা বলেছিলাম, সরকার একটি বড় ধরনের অপরাধ করতে যাচ্ছে। যদি তারা দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে, তাহলে তাদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখা কেন? তারা জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে কেন? আমাদের অনুমানই ঠিক হয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে চলছে লুটপাট। এসব কিন্তু ব্যবসায়ী মহলের জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সামান্য কিছু ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে এর ক্ষতি গুনতে হবে। যে আউটপুট মাত্র এক হাজার কোটি টাকায় সম্ভব ছিল, তা সরকার ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে করছে। এই ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচের ফলে সরকার মাত্র এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি বাড়াতে পেরেছে। গড়পড়তা উৎপাদন বেড়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট। সরকারই বলছে, তারা সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে পারবে। অথচ সরকার যদি মেরামতের দিকে নজর দিত, তাহলে দুই হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতো।
এ কুইক রেন্টাল শুরু করেছিল বিএনপি জোট সরকার। কিন্তু তারা ভাগাভাগি নিয়ে গোলমালের কারণে তখন আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বর্তমান সরকার এটা বাস্তবায়ন করল। এ ব্যাপারে সব দলই এক। বাংলাদেশে এদের জন্য বিদ্যুৎ সংকটই আশীর্বাদের মতো। তারা এই বিশাল খরচের বোঝা বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। কি বিএনপি, কি জাতীয় পার্টি আর কি জামায়াত, কোনো দলেরই এ ব্যাপারে নীতিগত কোনো অবস্থান নেই।
যে দল ক্ষমতায় থাকছে, সে দলই আমাদের কোণঠাসা করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে। চারদলীয় সরকার আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছে। বর্তমান সরকার বলছে টোকাই। রাস্তায় ফেলে আমাদের পেটাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সার্থকতা হলো জনগণের কাছে আমরা দিনে দিনে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করে তুলতে পারছি, ওদের স্বার্থ এক। ওই লুটেরা গোষ্ঠীর নীতি এক এবং আমাদের অবস্থান এই লুটেরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তবে এ লুটেরাদের দ্বারা যারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তারা কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সব দলেই আছে। জাতির ক্ষতি হলে দল-সমর্থকরাও সে ক্ষতি থেকে বাদ পড়ে না। শুধু বেনিফিট আদায়কারীরা ছাড়া।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
(অনুলিখন)
এটা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে এখনো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চক্রান্ত চলছে। জ্বালানি খাতে আজ যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার পেছনে সরকারের কিছু ভুল নীতি ও ভুল লোককে দায়িত্ব প্রদান হলো মুখ্যত দায়ী। আমরা সক্ষমতা বাড়াতে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা- এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে বলেছিলাম। আমাদের প্রস্তাব ছিল; কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
এসব ব্যাপারে লক্ষ করেছি, সব সরকারের অবস্থানই ছিল এক। ফুলবাড়ী কয়লাখনির চুক্তি করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন। উইকিলিকসের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি চাপ দিয়েছিলেন মার্কিন কম্পানিকে কাজ দিতে।
মাগুরছড়ায় ১৯৯৭ সালে যখন বিস্ফোরণ হয়, তখনই এ দেশের মানুষ সচেতন হয়ে ওঠে। আমাদের এ কমিটিও তখনই গঠিত হয়। এরপর থেকে যে ক্ষতি হয়েছে, যেগুলো আমি বিভিন্ন সময় বর্ণনা করেছি, তা আদায় করার চেষ্টা করে আসছি। ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমই হবে। এটি একটি নূ্যনতম হিসাব। যে পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ৫৫০ বিলিয়ন ঘটফুট। আমাদের বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস খরচ হয় তার দ্বিগুণ। এ পরিমাণ গ্যাস কিনতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ এ ক্ষতিপূরণ আদায়ে একটি কথাও বলে না সরকার। তারা চুপ করে আছে। এটা সুস্পষ্ট যে তারা এ ব্যাপারে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে মোটেই আগ্রহী নয়। দেশে অনেক গ্যাসকূপ অকেজো হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের কথা জোর দিয়ে বলেছিলাম। বহুদিন ধরে যেসব রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট অচল ছিল সেগুলো মেরামত করার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনোক্রমেই ভ্রূক্ষেপ করেনি। সরকার ও সরকারের কর্মকর্তারা বহুজাতিক কম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার এজেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ নিয়ে যে আইন করা হয়েছে, তা এই তৌফিক-ই-ইলাহীর মতো দুর্বৃত্তদের জন্য প্রতিরক্ষা বূ্যহ রচনা করেছে। এটি শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়, সরাসরি অপরাধ। ২০১০ সালে এ আইন প্রণয়নের সময় আমরা বলেছিলাম, সরকার একটি বড় ধরনের অপরাধ করতে যাচ্ছে। যদি তারা দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে, তাহলে তাদের আইনের ঊর্ধ্বে রাখা কেন? তারা জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে কেন? আমাদের অনুমানই ঠিক হয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে চলছে লুটপাট। এসব কিন্তু ব্যবসায়ী মহলের জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সামান্য কিছু ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে এর ক্ষতি গুনতে হবে। যে আউটপুট মাত্র এক হাজার কোটি টাকায় সম্ভব ছিল, তা সরকার ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে করছে। এই ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচের ফলে সরকার মাত্র এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি বাড়াতে পেরেছে। গড়পড়তা উৎপাদন বেড়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট। সরকারই বলছে, তারা সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে পারবে। অথচ সরকার যদি মেরামতের দিকে নজর দিত, তাহলে দুই হাজার মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হতো।
এ কুইক রেন্টাল শুরু করেছিল বিএনপি জোট সরকার। কিন্তু তারা ভাগাভাগি নিয়ে গোলমালের কারণে তখন আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বর্তমান সরকার এটা বাস্তবায়ন করল। এ ব্যাপারে সব দলই এক। বাংলাদেশে এদের জন্য বিদ্যুৎ সংকটই আশীর্বাদের মতো। তারা এই বিশাল খরচের বোঝা বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। কি বিএনপি, কি জাতীয় পার্টি আর কি জামায়াত, কোনো দলেরই এ ব্যাপারে নীতিগত কোনো অবস্থান নেই।
যে দল ক্ষমতায় থাকছে, সে দলই আমাদের কোণঠাসা করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে। চারদলীয় সরকার আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছে। বর্তমান সরকার বলছে টোকাই। রাস্তায় ফেলে আমাদের পেটাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সার্থকতা হলো জনগণের কাছে আমরা দিনে দিনে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করে তুলতে পারছি, ওদের স্বার্থ এক। ওই লুটেরা গোষ্ঠীর নীতি এক এবং আমাদের অবস্থান এই লুটেরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তবে এ লুটেরাদের দ্বারা যারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তারা কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সব দলেই আছে। জাতির ক্ষতি হলে দল-সমর্থকরাও সে ক্ষতি থেকে বাদ পড়ে না। শুধু বেনিফিট আদায়কারীরা ছাড়া।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
(অনুলিখন)
No comments