মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে মুতাসিম গ্রেপ্তার?

লিবিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে মুতাসিম গাদ্দাফিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি)। তাঁর গ্রেপ্তারের খবরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রাস্তায় আনন্দমিছিল হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের খবর নাকচ করে দিয়ে সারতের একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, মুতাসিম এখনো পলাতক।
মুতাসিম গাদ্দাফি হচ্ছেন গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং গাদ্দাফির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। মুতাসিমকে গ্রেপ্তার করার খবর যদি সত্য হয়, তবে এনটিসির জন্য এটা হবে বড় সাফল্য।
এনটিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, মুতাসিম সারতে থেকে একটি গাড়িতে করে গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত বুধবার ধরা পড়েছেন। তিনি অক্ষত আছেন। এনটিসির উপদেষ্টা আবদেল করিম বিজামা বলেন, মুতাসিম গাদ্দাফিকে সারতে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের পর তাঁকে বেনগাজি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মুতাসিম গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে গাদ্দাফির পরিবার বা তার অনুগতরা তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে পারে, এ বিষয়টি ভেবে আমরা তাঁর গ্রেপ্তারের খবর আগে প্রকাশ করিনি।’
মুতাসিমকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল শত শত লোক লিবিয়ার নতুন পতাকা হাতে নিয়ে রাজধানী ত্রিপোলিতে জড়ো হয়। তারা মুতাসিমের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়। এ ছাড়া লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে এনটিসির যোদ্ধারা বাতাসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
তবে বেনগাজিতে এনটিসির কর্মকর্তারা এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। এ ছাড়া সারতে শহরে নতুন শাসকদের অনুগত মার্টায়ার্স অব ফ্রি লিবিয়া ব্রিগেডের কমান্ডার বিন হামিদ মুতাসিমকে গ্রেপ্তারের খবর নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, মুতাসিম এখনো পালিয়ে আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মুতাসিমকে গ্রেপ্তারের খবর সত্য নয়।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সারতের কাছাকাছি দুটি এলাকায় গাদ্দাফির অনুগত যোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে এনটিসির যোদ্ধারা। অবশ্য এনটিসির যোদ্ধারা বলেছে, তুমুল লড়াইয়ের পর সারতের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। তাদের বিশ্বাস, আগামী তিন দিনের মধ্যেই পুরো এলাকা তারা দখল করে নিতে পারবে। এনটিসির কমান্ডার মুস্তাহ হামজা বলেন, সারতের ৮০ ভাগ এলাকা এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে সারতের কাছাকাছি ডলার এবং নাম্বার টু এলাকা এখনো গাদ্দাফির অনুগত যোদ্ধাদের দখলে রয়েছে।
বন্দী নির্যাতনের ঘটনায় অ্যামনেস্টির উদ্বেগ: লিবিয়ায় অযৌক্তিকভাবে লোকজনকে বন্দী করে তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, গাদ্দাফি আমলের মতো নির্যাতন-হয়রানি অব্যাহত থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন পুনরাবৃত্তির ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশটির নতুন শাসকেরা।
গত বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব কথা বলেছে। তারা এ ধরনের ঘটনা বন্ধের জন্য দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল।
লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল লিবিয়ার বন্দী শিবিরগুলোতে মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘ডিটেনশন অ্যাবিউজেস স্টেইনিং ইন দি নিউ লিবিয়া’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আটক তিন শ ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.