৩১- আর একবার গণজাগরণ ঘটলে গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব হবে

ভোগবাদিতাই ধ্বংসের অন্যতম কারণ
...বর্তমান বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত বহুমাত্রিক অপপ্রচার মোকাবিলায় আমাদের ক্রমাগত ব্যর্থতা এক কথায় অমার্জনীয়। আমাদের মহানবী (সা.) এবং চার খলিফা কৃচ্ছ্রসাধনের মহান জীবনাদর্শ আমাদের সামনে রেখে গেলেও মুসলিম বিশ্বের অশ্লীল ভোগবাদিতা আমাদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।...

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি তার দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জনগণের সঙ্গে তার সরকারের মধুচন্দ্রিমা নাকি শেষ হয়েছে। চলমান পৌরসভা নির্বাচনে এ যাবত চার বিভাগের মধ্যে তিনটিতে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের মোহভঙ্গ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের ফলও জানা হয়ে যাবে। প্রশাসনকে সর্বতোভাবে ব্যবহার করেও ফলাফল কতখানি মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে আনা সম্ভব হবে, দেশবাসী এখন সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনরায় বিপক্ষে গেলেও শেখ হাসিনার জন্য স্বস্তিদায়ক সংবাদ হলো, তার প্রতি মার্কিন প্রশাসনের আস্থা দৃশ্যত এখনও আগের মতোই রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক পনেরো মিনিটের টেলি কথোপকথনের বিষয়বস্তু বাংলাদেশ সরকার সূত্রে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদেশের কথিত ইসলামী জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনার সফলতার নাকি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হিলারি ক্লিনটন। গত দু’বছরে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন’ প্রতিষ্ঠারও প্রশংসা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী!
এতসব প্রশংসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্রের দাবি সঠিক হয়ে থাকলে শেখ হাসিনা মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভিন্নমত দমন এবং বাকস্বাধীনতা হরণে নিশ্চিতভাবেই অধিকতর উত্সাহিত হবেন। তবে একটা হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছি না। হিলারি ক্লিনটন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে টেলিফোনে কথা বললেন অথচ প্রফেসর ইউনূসের প্রসঙ্গ আলোচিত হলো না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্ভবত প্রফেসর ইউনূস প্রসঙ্গে আলাপচারিতা একেবারেই চেপে যেতে চাচ্ছে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি। সঠিক তথ্য পেতে হলে আমাদের উইকিলিকসের ভবিষ্যত্ লিকের আশায় অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
মোদ্দা কথা, ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট থাকলে আমাদের মতো আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরে কাম কী? একমেরুর বিশ্বে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও দুর্বল দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে শাসকদের মার্কিন সমর্থন যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। জরুরি সরকারের সময় দেখা গেছে, এদেশের সংবাদমাধ্যম এবং সেনাবাহিনীর ওপর ভারত-মার্কিন প্রভাব যথেষ্ট প্রবল। বিএনপি ২০০৬ সালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জেতার যে ছক সাজিয়েছিল, সেটা মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘের নির্দেশক্রমে মইনের ক্যু-দেতা ভণ্ডুল করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনার এবারের ছক আরও দৃষ্টিকটুভাবে একপেশে হলেও তিনি সম্ভবত মার্কিন-ভারত সমর্থনের জোরে আশা করছেন, নির্বাচনের নামে একতরফা তামাশা করে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আবার বসে পড়বেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘৮৭’ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি দেখানোর পরও ইউরোপ, আমেরিকার কাছ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বৈধতা পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য হ্যাঁ-না ভোটের মতো করে আগামী নির্বাচনে ১০০ শতাংশ ভোটপ্রাপ্তি দেখালেই বা বাদ সাধছে কে? দিল্লি-ওয়াশিংটন সমীকরণ ঠিক থাকলেই কেল্লা ফতে! জেনারেল মইন তার বইতে দাবি করেছেন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করে আমাদের সেনাসদস্যদের যাতে ডলার কামানোতে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেই ‘মহত্’ উদ্দেশ্যেই তিনি এক-এগারোর ক্যু-দেতায় নেতৃত্ব দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। জরুরি অবস্থাকালীন অত্যাচার, নির্যাতন এবং লুটপাট চালানোর অপরাধে বিচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে মইন গং সাবজেলে অন্তরীণ শেখ হাসিনার সঙ্গে সফল কেনাবেচাও সম্পন্ন করেছিল। এবারও সেই শান্তি মিশনের মুলা ঝুলিয়ে একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে পূর্ববত্ সম্পৃক্ত করতে ক্ষমতাসীনদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
স্যামুয়েল হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত তত্ত্ব ইসলামবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব যে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছে, এ বিষয়ে আগেই একাধিক কলাম লিখেছি। মইন-মাসুদের ক্যু-দেতাকে আমি বরাবর হান্টিংটনের তত্ত্ব ও বুশ ডকট্রিনের আলোকেই বিশ্লেষণ করেছি। শুধু আমি নই, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে ফরহাদ মজহারও তার কলামে হান্টিংটন তত্ত্ব ও বুশ ডকট্রিনের বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। পশ্চিমা মানসে ইসলামবিদ্বেষ যে কতখানি গভীরে প্রবেশ করেছে, তার প্রমাণ আজ আইনের বই পড়তে গিয়ে নতুন করে পেয়ে চমকে উঠলাম। ড. গ্যারি স্ল্যাপার (Gary Slapper) এবং ড. ডেভিড কেলি (David Kelly) রচিত The English Legal System পড়ছিলাম। সেই বইয়ের Human Rights and Anti-terrorism Legislation চ্যাপ্টারটি পড়ার সময় থমকে যেতে হলো। অধ্যাপকদ্বয় লিখেছেন, ...protecting the rights of criminals, prisoners, illegal immigrants and other supposedly blameworthy or morally dubious individuals at the expense of the rights of the good, and no doubt God-fearing (in a non-Islamic way) moral majority. ...' (অপরাধী, কয়েদি, অবৈধ অভিবাসী এবং অন্যান্য অভিযুক্ত ও নৈতিকতাবিরোধী ব্যক্তির অধিকার সমাজের ভালো অংশ ও ঈশ্বরভীতি সম্পন্ন [ইসলামী পন্থা ছাড়া] সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অধিকার ক্ষুণ্ন করে সংরক্ষণ।)
উদ্ধৃত বাক্যটিতে লেখকদ্বয়ের একধরনের অতি রক্ষণশীল মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। তারা সম্ভবত মানবাধিকারের বিষয়টিকে সমাজের আইন মান্যকারী এবং অপরাধী অংশের মধ্যে ভিন্নভাবে প্রয়োগের ইঙ্গিত করছেন। তবে এসব তাত্ত্বিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার জন্য আমি এই বইয়ের উদ্ধৃতি দিইনি। পাঠক লক্ষ্য করুন, God-fearing বিশেষণটি ব্যবহারের সঙ্গে বন্ধনীর (parenthesis) মধ্যে 'in a non-Islamic way' বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। যেন আমাদের আল্লাহভীতি পশ্চিমা সভ্যতা ও আইনের মাপকাঠিতে অগ্রহণযোগ্য। এই লেখাটি কোনো একটি পত্রিকায় মন্তব্য হিসেবে প্রকাশিত হলে আমি কিছুমাত্র বিস্মিত হতাম না। চরম ইসলামবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক মানসিকতাসম্পন্ন কলামিস্ট, সাংবাদিকরা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন। বিকৃত রুচির ওইসব লেখা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমালোচনারও অযোগ্য।
কিন্তু যে বইটি পড়ছিলাম, সেটি যুক্তরাজ্যের আইনশাস্ত্রের পাঠ্যবই। লেখকদ্বয়ও ডক্টরেট ডিগ্রির অধিকারী পণ্ডিত মানুষ, কোনো পত্রিকার কলামিস্ট নন। আইনের পাঠ্যবইতে একটি ছোট্ট কথার মাধ্যমে দুই অধ্যাপক বিশ্বের প্রায় দেড়শ’ কোটি মানুষের ধর্ম ইসলামকে হেয় করার অপচেষ্টা করেছেন এবং ছাত্রছাত্রীদের ইসলামের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করতে চেয়েছেন বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। মনে রাখা দরকার, সভ্যতার সংঘাত (Clash of the Civilization) তত্ত্বের উদ্ভাবক ড. স্যামুয়েল হান্টিংটনও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত বহুমাত্রিক অপপ্রচার মোকাবিলায় আমাদের ক্রমাগত ব্যর্থতা এক কথায় অমার্জনীয়। আমাদের মহানবী এবং চার খলিফা কৃচ্ছ্রসাধনের মহান জীবনাদর্শ আমাদের সামনে রেখে গেলেও মুসলিম বিশ্বের অশ্লীল ভোগবাদিতা আমাদের ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ জানুয়ারির উনিশ। আমার ছয় মাসের সাজার মেয়াদের শেষ মাস শুরু হলো। অবশ্য লাখ টাকা জরিমানা দিতে অস্বীকার করায় অতিরিক্ত এক মাসের কারাদণ্ড তারপরও বাকি রয়েছে। সাজা শেষ মাসে পৌঁছালেও আমার মামলার রায় কিন্তু এখনও লেখা হয়নি। সেই যে গেল বছর আগস্টের ১৭ তারিখে শর্ট অর্ডার দিয়ে আমাকে আর অলিউল্লাহ নোমানকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বানানো হয়েছিল, তার পর থেকে আপিল বিভাগের লর্ডশিপরা দেই-দিচ্ছি করে পূর্ণাঙ্গ রায় না লিখেই পাঁচ মাস পার করে দিয়েছেন।
ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক চেম্বার জজ বিচারপতি এস কে সিনহার কাছে আমার জামিনের আবেদন করে বলেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা অথবা রিভিউ শুনানি পর্যন্ত আমাদের মক্কেলের জামিন মঞ্জুর করা হোক। চেম্বার জজ সেই আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, খুব শিগগিরই রায় দেয়া হচ্ছে; সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন বিবেচনা করা যাচ্ছে না। আদেশ দেয়ার পর দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও মাননীয় চেম্বার জজের সেই ‘শিগগির’-এর দেখা এখনও মেলেনি। বাংলাদেশে এরই নাম আইনের শাসন! আমাদের সংবিধানের ১০৪ নম্বর অনুচ্ছেদে আপিল বিভাগের ওপর সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমি সংবিধান অনুসারে ন্যায়বিচার পেয়েছি কি-না, কার কাছে সে প্রশ্ন করব?
বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগে যা চলছে, তা কি Rule of Law bvwK Manipulation of Law? জেলখানায় সময় কাটতে চায় না, তাই যে বই পাই সেটাই গোগ্রাসে পড়ে যাই। সেদিন এক বইতে ন্যায়নিষ্ঠ বিচারপতিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটা চ্যাপ্টার খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। সেই বইয়ে যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত বিচারপতি লর্ড বিংহ্যাম (Lord Bingham) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ রাজের (Joseph Raz) দু’টি উদ্ধৃতি এতই মনে ধরেছে যে, পাঠককে জানানোর লোভ সামলাতে পারছি না।
* "independent and impartial, independent in the sense that they are free to decide on the legal and factual merits of a case as they see it, free for any extraneous influence or pressure, and impartial in the sense that they are, so far humanly possible, open minded, unbiased by any personal interest or partisan allegiance of any kind. - Lord Bingham"
(স্বাধীন ও নিরপেক্ষ; এই মর্মে স্বাধীন যে কেবল আইন ও সত্যকে বিবেচনায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত প্রদান করেন, বাইরের সব প্রভাব ও চাপ থেকে মুক্ত এবং এমন নিরপেক্ষ যে একজন মানুষের পক্ষে যতখানি সম্ভবপর ততটুকু মুক্ত চিন্তাসম্পন্ন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ অথবা দলীয় আনুগত্য থেকে সম্পূর্ণ পক্ষপাতশূন্য।)
* "The independence of judiciary has to be guaranteed to ensure that they are free to decide cases in line with the law and not in response to any external pressure. - Joseph Raz"
(বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে, বিচারক আইনানুগভাবে রায় প্রদানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকবেন এবং কোনো প্রকার বাইরের চাপ দ্বারা প্রভাবিত হবেন না।)
বাংলাদেশের বাস্তবতায় নিম্ন আদালত নিয়ে আলোচনা সময়ের অপচয় মাত্র। উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারকদের মধ্যে কয়জন লর্ড বিংহ্যাম এবং জোসেফ রাজের তত্ত্বের আলোকে নিজেদের বিচারকের মহান আসনে বসার উপযুক্ত মনে করেন, সেটা বদ্ধ ঘরে একাকী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিবেচনার দায়িত্ব তাদেরই। অন্য বিচারপতিদের কথা বাদই দিলাম। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত মামলার রায় একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই যে কোনো বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে স্বয়ং প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক impartial, open-minded, unbiased অথবা ভত্বব এর কোনোটাই নন। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার অন্ধ পক্ষপাতিত্ব এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতি অপরিসীম বিদ্বেষ সেই রায়ের ছত্রে ছত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে। যেসব বিচারপতি বাংলাদেশের বিশেষ জেলায় জন্মলাভ করার জন্য প্রকাশ্যে বিশেষ গর্ববোধ করেন অথবা বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যকে সংবিধানের ওপর আনুগত্যের ঊর্ধ্বে স্থান দেন, তাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করার মতো নির্বোধের সংখ্যা সমাজে অবশেষে কমতে শুরু করেছে বলেই আমার ধারণা।
এদেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত জনতা এখন এমন একটি বিপ্লবের প্রত্যাশা করছে, যার মধ্য দিয়ে আমরা বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সব অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ করার সুযোগ লাভ করব। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে বিজয় লাভ করলেও একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সংবিধান, আইন, সরকার ইত্যাদি বিভিন্ন কৌশলে এই রাষ্ট্রের নাগরিকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আমরা নতুন করে গণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ পেয়েও শাসকশ্রেণীর অনীহার কারণে কাজে লাগাতে পারিনি। আশা করি, আর একবার গণজাগরণ সংঘটিত করতে পারলে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের সুযোগ আমরা হারাব না।

No comments

Powered by Blogger.