চালের দাম নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে জানালেন প্রধানমন্ত্রী- 'দেশে পর্যাপ্ত চাল আছে'
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা অতীত থেকে শিৰা পায় না তাদের শিৰা দিতেই নাম বদল করা হয়েছে। এ পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল।
কেননা যারা অতীত থেকে শিৰা নেয়নি, তাদের শেখানোর প্রয়োজন আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আড়াই শ' স্থাপনার নাম বদল করা হয়েছিল। তারা একবারও ভাবেনি, আবারও তাদের খারাপ সময় আসতে পারে। বিএনপিকে খোঁচা দিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেবল দু'টি স্থাপনার নাম বদলেই এত জ্বালা? যদি আড়াই শ' নাম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে কেমন লাগবে?মহান একুশে ফেব্রম্নয়ারি আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলৰে বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে। কেননা এই বিচার না হলে শহীদদের আত্মার শানত্মি পাবে না। যে ল্য, আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তার বাসত্মবায়ন হবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় তাদের যে কত জ্বালা, কত দুঃখ- তা তাদের নীরবতাতেই বোঝা যায়।
চালের দাম বাড়িয়ে একটি মহল সরকারের বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, "দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। এবার ফসলের বাম্পার ফলনও হয়েছে। আনত্মর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও সারে ভতর্ুকিসহ নানা সরকারী পদেেপর ফলে উৎপাদন বেড়েছে। এর পরও ষড়যন্ত্রকারীরা চালের দাম বাড়িয়ে নানা খেলা খেলছে।"
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সে সময় শত শত প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করা হয়েছে, যেগুলো আমার নিজের হাতে করা। তারা কী তখন ভাবেনি, এই নাম বদলের খেলা ভাল হবে না। তারা কী ভাবেনি, তাদেরও খারাপ দিন আসতে পারে। আবারও এসব নাম বদলে যেতে পারে?"
জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "অনেকেই সমালোচনা করেন, এই সরকারের সময় এই যে নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, এটার কী দরকার ছিল? বাসত্মব অবস্থা হচ্ছে এটার প্রয়োজন ছিল। কেননা যারা অতীত থেকে শিা নেয়নি, শিখতে চায় না- তাদের শেখানোর প্রয়োজন আছে।" এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "তারা বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারসহ দুই/আড়াই শ' প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেছে। আমরা দু'একটা নাম পরিবর্তন করাতেই এত জ্বালা! যদি আড়াই শ' নাম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে কেমন লাগবে?"
সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় আরও বক্তব্যে রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সতীশ চন্দ্র রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. জাহান আরা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক নূহ-উল আলম লেনিন।
সভার শুরম্নতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২১ ফেব্রম্নয়ারি আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, কেবল বাংলাই নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার ওপর গবেষণা ও সেগুলোকে রা করার ল্যেই গত আওয়ামী লীগ সরকার এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট মতায় এসেই এর কাজ বন্ধ করে দেয়। তখন তারা একবারও ভাবেনি এটা দলীয় নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থেই করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার আবারও মতায় এসে এর কাজ শেষ করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রে পাঠানোর সরকারী উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে করে বিশ্ববাসী জানতে পারবে বাঙালী কীভাবে তার ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। আত্মত্যাগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রৰাকারী ও মদদদাতাদের বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় তাদের যে কত জ্বালা, কত দুঃখ- তা তাদের নীরবতাতেই বোঝা যায়। কেননা নানাভাবে তারা এই খুনীদের রার চেষ্টা করেছে, মদদ দিয়েছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। তিনি বলেন, খুনীদের রাকারী ও মদদ দানকারীরা আর যাই হোক- জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। এরা কেবল জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাচালান করতে পারে। কাজেই এদের বিরম্নদ্ধে জনগণকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী '৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরম্ন করে মুক্তিযুদ্ধ এবং মানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে এসব আন্দোলনে জাতির জনকের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের এই ত্যাগের মূল্য দিলেও কিছু কিছু মহল তাঁদের অবদানকে খাটো করে দেখে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে দণি এশিয়ার শানত্মির দেশে পরিণত করতে চাই। সেখানে কোন জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসের স্থান হবে না। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "কী পেলাম সেটা নয়, দেশ ও জনগণের জন্য কী দিলাম সেটাই বড় কথা। আমাদের ওপর মানুষ যে আকাঙ্ৰা, আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে তার মর্যাদা দিতে হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শিা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, আগামী এপ্রিল থেকে রাজাকারদের বিচার কাজ শুরম্ন হবে। দেশের সব জায়গা থেকে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই বিচার না হলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা আর দুই লাখ মা-বোনের কাছে আমরা দায়ী থেকে যাব।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মতো আরেকটি যুদ্ধাাপরাধীদের বিচারের ঐতিহাসিক কাজও শেষ করবেন। এর মাধ্যমে 'পাক সার জমিনবাদীদের' চিরতরে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করা হবে।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কারও নাম উলেস্নখ না করে বলেন, চালের দাম দুই টাকা বেড়েছে- এটাই তাদের কাছে বড় বিষয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বড় বিষয় নয়। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে পারলে এই দেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হবে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সুসংহত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। পৃথিবীর সব দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারলে আমাদের দেশে কেন হবে না ুুু?
No comments