চট্টগ্রাম বন্দর-খোলা পণ্য খালাসে বিশেষায়িত টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ by মাসুদ মিলাদ

জাহাজের খোলে করে আনা খোলা পণ্য খালাসের জন্য বিশেষায়িত টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের লালদিয়ার চর এলাকায় এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হতে পারে। বন্দর সূত্র জানায়, গত ১০ ডিসেম্বর বিশেষায়িত টার্মিনালের এক হাজার মিটার জেটি নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি) বিভাগ। প্রতিবেদনে টার্মিনাল নির্মাণের পক্ষে মত দেওয়া হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বন্দরের ১৪ থেকে ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি এলাকায় এই টার্মিনাল নির্মাণে আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। বন্দরের বহির্নোঙর থেকে কোনো বাঁক অতিক্রম না করে এই টার্মিনালে জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে। বর্তমানে বন্দর চ্যানেলের দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক অতিক্রম করে মূল জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো হচ্ছে।
বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এম আনওয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই টার্মিনালে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ খোলা পণ্য খালাসের জন্য বিশেষায়িত জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব জেটিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা রাখা হবে। তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, ২০ বছর আগে থেকে বন্দরে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন জনপ্রিয়তা পায়। এরপর সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে কনটেইনার পরিবহনকেন্দ্রিক। কনটেইনার ওঠানামায় গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়াও কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় চালু হয়েছে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এসব উদ্যোগের কারণে কনটেইনার জাহাজের পণ্য ওঠানামার দক্ষতার সূচকে অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ পণ্য ওঠানামায় কোনো আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় এসব পণ্য খালাসের দক্ষতার সূচকের কোনো অগ্রগতি নেই। বরং পণ্য আমদানি বাড়ার সঙ্গে সূচকও নিম্নগামী হয়েছে।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরী লিটন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি)’ ভিত্তিতে এই টার্মিনালে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি সংযোজনের শর্ত দেওয়া হবে নিয়োগ পাওয়া অপারেটরকে।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা এনসিটিসহ বিদ্যমান তিনটি টার্মিনালের মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। এর মধ্যে খোলা ও বস্তাবন্দী পণ্য খালাস হয় ছয়টি জেটিতে। এসব জেটিতে খোলা পণ্য খালাসে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। সনাতন পদ্ধতিতে জাহাজের খোলে থাকা খোলা গম প্রথমে টিনের বাক্স দিয়ে বস্তায় ভরেন শ্রমিকেরা। অন্য শ্রমিকেরা সেসব বস্তা সেলাই করে জাহাজ বা বন্দরের শোর ক্রেনে দিয়ে ট্রাকে বোঝাই করেন। এই প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থ বেশি খরচ হয়।
বন্দরের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বন্দরে যত পণ্য ওঠানামা হয় তার প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই হচ্ছে কনটেইনারবিহীন সাধারণ পণ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে যত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে ৬৫ শতাংশ পণ্যই কনটেইনার ছাড়া খোলা ও বস্তাবন্দী আকারে পরিবহন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.