পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি-মুখ্য ভূমিকায় বিচারব্যবস্থা সরকার ও সেনাবাহিনী

‘গোপন চিঠি’ কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের রাজনীতি। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে দেশটির বেসামরিক সরকার, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও বিচারব্যবস্থা।


সুনির্দিষ্ট করে বললে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি, গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান সুজা পাশা, প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীই মূল ভূমিকায় রয়েছেন। সঙ্গে থাকবে প্রধান বিরোধী দলের নেতা নওয়াজ শরিফ, তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের ভূমিকাও।
জারদারির প্রেসিডেন্ট হওয়া অনেকটা আকস্মিক। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে তাঁর স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো গুলি ও বোমায় নিহত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের সহানুভূতিতে বিজয়ী হয় তাঁর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দলের কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা জারদারি। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ২০০৯ সালে আইন করে ওই বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। জারদারিসহ বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পান প্রায় আট হাজার ব্যক্তি। বলা হচ্ছে, জারদারির আমলে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।
পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে মার্কিন সহায়তা চেয়ে জারদারির ‘গোপন চিঠি’ কেলেঙ্কারি মহাবিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জারদারি এমন কোনো চিঠির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করার পর সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত শুরু করেছেন। সম্পৃক্ততা মিললে তাঁকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানেরও আশঙ্কা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জারদারির জনপ্রিয়তা অনেক কমে এসেছে। অবশ্য তিনি কখনোই তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না। আবার সেনাবাহিনীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ তেমন কোনো কর্মকর্তাও নেই।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘শান্ত ব্যক্তি’ বলে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী গিলানি সম্প্রতি দেশটির সেনাবাহিনীর প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন। ‘রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র থাকতে পারে না। সবাইকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’—বলেন গিলানি। এরপর বলেন, সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধান ‘গোপন চিঠির’ ব্যাপারে অসাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। এর জবাবে সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেশকে কঠিন পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চালু না করায় প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।
সেনাপ্রধান কায়ানি ২০০৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বহুবার বলেছেন, তিনি সেনাবাহিনীকে রাজনীতির বাইরে রাখতে চান। ‘গোপন চিঠি’ ফাঁস হওয়ার পর তিনি একে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেন। এর তদন্তে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও করেন তিনি। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানদের মধ্যে কায়ানিকে অনেক ধীরস্থির মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে তেমন বলিষ্ঠ সমর্থন পাচ্ছে না। সেটা বুঝেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তার চরিত্রের বিরুদ্ধে দারুণ ধৈর্য দেখাচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষক, শওকত কাদির বলেন, ‘পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না গেলে কায়ানি অভ্যুত্থান ঘটাবেন না।’ রয়টার্স, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.