বিবেকানন্দের সার্ধশততম জন্মবর্ষ-বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান

স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারা ভারতেই ব্যাপক আয়োজন চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় কলকাতার অদূরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের স্বামী বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল অডিটরিয়াম ও সেমিনার হল। এ রকম একটি মহতী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।


স্বামীজির সার্ধশততম জন্মবর্ষ উদ্‌য়াপন কমিটির চেয়ারম্যান এবং ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের এত বড় একটি আয়োজনে বাংলাদেশের একজন শিল্পপতিকে প্রধান অতিথি করার মাধ্যমে যে সম্মান দেওয়া হলো, তা গোটা বাংলাদেশের জন্যই গর্বের বিষয়।
মহাপণ্ডিত স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন সত্যিকারের একজন আদর্শ মানুষ, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভাবশিষ্য বিবেকানন্দ ছিলেন মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক মানুষ। অজ্ঞানতা, কুসংস্কার, মানবমনের দীনতা-হীনতার বিরুদ্ধে ছিল তাঁর প্রবল সংগ্রাম। জাতপাত, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার মধ্যে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। আসমুদ্রহিমাচল বলতে যা বোঝায়, তিনি সেভাবেই গোটা ভারতবর্ষ চষে বেড়িয়েছেন। রাজা-মহারাজা থেকে মুচি-মেথর পর্যন্ত সবার কাছেই গেছেন তিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁকে ডেকেও নেওয়া হয়েছে। তাঁর জ্ঞানের পরিধি কতটা বিস্তৃত ছিল, তার সম্যক ধারণা পাওয়া যায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে এইচ রাইটের এক মন্তব্য থেকে। অধ্যাপক রাইট তাঁর বন্ধু ড. বারোজকে লিখেছিলেন, 'ইনি (বিবেকানন্দ) এমন এক ব্যক্তি, যিনি আমাদের সব বিজ্ঞ অধ্যাপকের মিলিত জ্ঞানের চেয়েও বেশি জ্ঞান রাখেন।' তিনিই স্বামীজিকে বলেছিলেন, 'স্বামীজি, আপনার পরিচয় চাওয়া আর সূর্যের কাছে তার কিরণ দেওয়ার অধিকার আছে কি না জানতে চাওয়া একই কথা।'
স্বামীজি মনে করতেন, বিভিন্ন নদী নানা উৎস থেকে উৎপন্ন হলেও তাদের গন্তব্য হয় একটাই- সাগরে গিয়ে পতিত হওয়া; তেমনি মানুষ নানা ধর্মে, নানা মতে চললেও সবারই চূড়ান্ত লক্ষ্য সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভ। স্বাভাবিকভাবেই এমন এক মহাপুরুষের সার্ধশততম জন্মবর্ষ উদ্‌যাপন সব দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উপলক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও রয়েছে নিজস্ব কর্মসূচি। আশা করি, বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে না।
স্বামীজির কল্যাণে নয়, আমাদের নিজেদের উৎকর্ষের জন্যই তাঁকে স্মরণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে জনাব সোবহান ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশে স্বামীজির নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তা বাস্তবায়নে জমি ও অর্থ জোগাবে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমরা তাঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।

No comments

Powered by Blogger.