শেয়ারবাজার: সাপ্তাহিক পর্যালোচনা-দরপতনের একটি সপ্তাহ

দেশের শেয়ারবাজার দরপতনের আরেকটি সপ্তাহ পার করল। নতুন বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই দরপতনের ঘটনা ঘটল। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন মহলের শঙ্কা, আসন্ন মুদ্রানীতি ও নানামুখী গুজবে বাজারে অস্বাভাবিক দরপতন ঘটেছে। যদিও এসব বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের ভীত হওয়ার মতো যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল না।


প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ বা ৩৫২ পয়েন্ট কমে গেছে। পাশাপাশি একই সময়ের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকায়। সপ্তাহজুড়ে ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই ডিএসইতে দরপতন হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহের দরপতন ছিল অপ্রত্যাশিত। যদিও এই দরপতনের পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যেসব বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মুদ্রানীতি ও অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে বাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
শাকিল রিজভীর মতে, দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে, সেটা ঠিক। কিন্তু এ নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে, অর্থনীতির অবস্থা ততটা খারাপ এখনো হয়নি।
ডিএসই সভাপতি আরও বলেন, ‘যাঁরা এরই মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তাঁদের একটি অংশ বাজারে আরও দরপতন ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এ জন্য নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যাতে করে তাঁরা আরও কম দামে শেয়ার কিনতে পারেন। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব গুজব আমলে নিয়ে শেয়ার বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়ছেন। বিনিয়োগকারীদের উচিত, গুজবে কান না দিয়ে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করে কিছুটা ধৈর্য ধারণ করা।’
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির চাপের কারণে বাজারে অস্বাভাবিক দরপতন ঘটছে। কিন্তু সেই তুলনায় দরপতন রোধে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যথাযথভাবে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে এই ধরনের বিক্রির চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হতো।
এদিকে, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়, আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল প্রায় তিন হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে লেনদেন কমেছে ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা এক হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
পাশাপাশি দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ নেমে এসেছে ৪৫৯ কোটি টাকায়, আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৯২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ২৩৩ কোটি টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ঢাকার বাজারে ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৪৭টি শেয়ারের দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল চারটি শেয়ারের দাম। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক নেমে এসেছে প্রায় পাঁচ হাজার ১১৪ পয়েন্টে। যদিও বছরের প্রথম সপ্তাহে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় চার শতাংশ বা ২০৯ পয়েন্ট বেড়েছিল।
গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতের (পিই রেশিও) গড় ভারিত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪৩-এ।
লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংজ্ঞা নির্ধারণে বৈঠক: শেয়ারবাজারে নতুন সূচক চালুর আগে লেনদেনযোগ্য শেয়ারের (ফ্রি-ফ্লোট) সংজ্ঞা নির্ধারণে আজ রোববার বৈঠকে বসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কমিটি।
গত ২৬ ডিসেম্বর এসইসির সদস্য আরিফ খানের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) প্রতিনিধিও রয়েছেন।
জানা যায়, এরই মধ্যে কমিটি লেনদেনযোগ্য শেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের মতামত সংগ্রহ করেছে। সেসব মতামতের ভিত্তিতে ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, শুধু ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের ভিত্তিতে বাজারে নতুন মূল্যসূচক নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসইসি।

No comments

Powered by Blogger.