গলার কাঁটা ওসি খান

বিরুল হক মুক্তি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েই কালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানপ্রার্থী হিসেবে নড়াগাতী থানার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (পরে বহিষ্কার) খান শামীম রহমান খান ওরফে ওসি খানকে সমর্থন দেন। মুক্তির সমর্থনে বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।


চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা পরিষদ অফিসে 'উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ' তৈরি না হওয়ার অভিযোগে খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিজ কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তিনি নিজেই সেই কক্ষকে উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন। সেই থেকে এখনো তিনি সেই কক্ষেই অফিস করছেন।
পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বড়দিয়া অফিসে নতুন এসেছেন আবদুল আলীম নামের এক কর্মকর্তা। এলাকায় লোডশেডিং থাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গভীর রাতে বাসায় ডেকে পাঠান কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান। গভীর রাতে বাসা চিনে যেতে একটু দেরি হয়ে যায় আবদুল আলীমের। সেই অপরাধে স্বয়ং চেয়ারম্যান তাঁকে পিটিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে আর ওই অফিসে যাননি আবদুল আলীম।
বড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর নিজস্ব মালিকানায় দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। গত বছর ২৪ জুলাই কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় 'উপজেলা চেয়ারম্যান বলে কথা' শিরোনামে ছবিসহ সংবাদ ছাপা হয়। পরে স্থানীয় প্রশাসন সরকারি ভবনের ওপর নির্মিত দ্বিতল সেই ভবনটি ভেঙে দেয়।
সদ্য সমাপ্ত খাশিয়াল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান ওসি খানের পছন্দের প্রার্থী ফরিদ শিকদারকে জেতাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সংখ্যালঘুদের নানা রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট প্রদানে বাধ্য করেন। ওই নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি নিজে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় সাইকেলগুলো ফেরত পান মালিকরা। নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে জেতাতে সক্ষম হন তিনি। তবে অনেকে তাঁর কথায় ভোট না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি রাস্তার মাটি কেটে নিজের ইটখোলায় ব্যবহার, প্রশাসনে অযাচিত খবরদারি, বড়দিয়া কলেজের অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিনকে লাঞ্ছিত করা এবং বড়দিয়া বাজারে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে লাঞ্ছিত করাসহ একাধিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং নড়াগাতী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম রহমান ওরফে ওসি খান।
গত অক্টোবরে তাঁর হাতে প্রহৃত হন সংখ্যালঘু তিন সহোদর। চেয়ারম্যান নিজ হাতে নড়াগাতী থানার ব্রাহ্মণপাটনা গ্রামের আযম খানের বাড়ির কাছে এ ঘটনা ঘটান। বিগত ইউপি নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত প্রার্থী ফরিদ শিকদার ভোট দেননি_এই সন্দেহে প্রথমে গোপাল চন্দ্র রায় (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে পেটাতে থাকেন। এ খবর শুনে বাড়ি থেকে অন্য দুই ভাই ছুটে এসে তা ঠেকাতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁদেরও মারধর করেন। গোপাল চন্দ্র বড়দিয়া বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন; এবং তিনি নড়াগাতী থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য স্মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি। চেয়ারম্যানের আক্রমণে গোপাল চন্দ্র রায়ের বাম হাতের একটি হাড় ভেঙে গেছে।
বড়দিয়া বাজার এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য ওসি খান উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে ঠিকাদারি ও ইটখোলার ব্যবসা করতেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর কর্মকাণ্ড বিভিন্নভাবে সমালোচিত হতে থাকে। ছাত্রলীগ নেতা হাসানাত অভিযোগ করেন, আহত গোপাল চন্দ্র রায় অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম রহমান ওসি খানের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু আহত হওয়ার ঘটনা শুনে এমপি মুক্তি স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাহায্যে তাঁকে মামলা থেকে বিরত রাখেন। এভাবেই এমপির প্রশ্রয়ে তিনি (ওসি খান) বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক মোল্লা অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্যের সমর্থনে জিতে আসা উপজেলা চেয়ারম্যান (ওসি খান) তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচার চালাচ্ছে। আর দলকে ডুবাচ্ছে। এ অভিযোগ শুধু তাঁর নয়, কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাহী, নড়াগাতী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মফিজুর রহমান, একই ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খাজা নাজিমুদ্দিনেরও।

No comments

Powered by Blogger.